শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০২০, ০৮:৫০ সকাল
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০২০, ০৮:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঘুরেফিরে একই পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্বে !

নিউজ ডেস্ক : দিদারুল ফেরদৌস কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে কর্মরত। প্রায় এক দশক ধরে জেলার বিভিন্ন থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এই নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক। টেকনাফ, রামু ও মহেশখালীসহ বিভিন্ন থানায় কেটেছে তার এই দীর্ঘ সময়। এক পর্যায়ে চলে যান শান্তি রক্ষা মিশনে। মিশন শেষে আবার ফেরেন সেই পুরনো জায়গা কক্সবাজার জেলা পুলিশে।

শুধু দিদারুল ফেরদৌসই নন, এমন কিছু নির্দিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাই ঘুরেফিরে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এসব কর্মকর্তার কারও কারও বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য, আটকবাণিজ্য, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। কারও কারও নামে হয়েছে মামলাও। ইয়াবার প্রবেশদ্বার খ্যাত কক্সবাজার জেলায় ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তার এমন পদায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার মুখেও এ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।

ইয়াবা ও মানব পাচার, রোহিঙ্গা সংকট এবং জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একই কর্মকর্তাদের বারবার পদায়ন অন্তরায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস কক্সবাজারে চারটি থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে র‌্যাবের রিমান্ডে রয়েছেন। কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী থানায় ওসি এবং চকরিয়া ও টেকনাফ থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মহেশখালী থানায় যোগ দেন প্রদীপ কুমার। সেখানে যোগ দিয়েই অপরাধীদের

ধরপাকড় শুরু করলেও কিছুদিনেই তা থিতিয়ে যায়। এতে জলদস্যু এবং ইয়াবাকারবারিদের সঙ্গে তার গোপন আঁতাত তৈরির অভিযোগ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। সে সময় তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয়রা।

সাধারণ মানুষকে ও শিল্পপতিদের হয়রানির অভিযোগে প্রত্যাহার ও স্ট্যান্ডরিলিজ হলেও দমে যাননি প্রদীপ। ঠিকই আবার ঘুরে দাঁড়ান। ২০১৮ সালে টেকনাফ থানায় যোগ দিয়ে ব্যাপক ক্রসফায়ার দিয়ে আলোচনায় আসেন। তার বিরুদ্ধে টেকনাফে ‘ক্রসফায়ার বাণিজ্যের’ অভিযোগ রয়েছে অনেক ভুক্তভোগীর।

২০১৯ সালে রামু থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন আবুল খায়ের। এর আগে তিনি উখিয়া থানায় ওসি তদন্ত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই থানার ওসি তদন্ত রুমেল বড়–য়া দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত। এর আগে তিনি কক্সবাজার সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি হিসেবে কিছু দিন আগে যোগ দেন খায়রুজ্জামান। এর আগে একই থানায় পরিদর্শক তদন্ত ছিলেন। সদর থানার আগে তিনি উখিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত ও সদর থানার ঈদগাহ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

উখিয়া থানায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন শেষে চকরিয়া থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন হাবিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা এবং তার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ গত রবিবার তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আদালতে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। চকরিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত মিজানুর রহমান পেকুয়া ও চকরিয়া থানায় একই পদে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে তিনি ফের চকরিয়া থানায় যোগ দেন।

কুতুবদিয়া থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শফিকুল আলম। তিনি এর আগে চকরিয়া ও মহেশখালী থানার পরিদর্শক তদন্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজার সদর থানা ও চকরিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পেকুয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত মঈন উদ্দীন কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পুলিশ পরিদর্শক শেখ আশরাফুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে কর্মরত। পেকুয়া, রামু ও টেকনাফ থানায় পরিদর্শক তদন্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) থিতু হয়েছেন। পরিদর্শক মানস বড়–য়াও কক্সবাজারের বিভিন্ন থানা ঘুরে গোয়েন্দা পুলিশে কাজ করছেন।

এদিকে কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাবুল বণিক। এর আগে তিনি এখানেই পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পদোন্নতি পেয়েও ছাড়েননি কক্সবাজার জেলা পুলিশ। চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মতিউর ইসলাম আগে কক্সবাজার সদর থানার ওসি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। পদোন্নতি পেয়ে চকরিয়া সার্কেলে যোগ দেন। জেলার বিভিন্ন থানা ঘুরে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারেই দায়িত্ব পালন করছেন অর্ধশত এসআই।

উখিয়া থানার বর্তমান ওসি মর্জিনা আক্তার চট্টগ্রাম মহনগর পুলিশে (সিএমপি) থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উখিয়া থানায় যোগ দেন। উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারকে নিজের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ার ও ঘরের টাকা স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। ওই রাতে ওসি মর্জিনা ও প্রদীপের অভিযানের চিত্র ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।

এ বিষয়ে জানতে কয়েকবার যোগাযোগ করেও কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপরাধ বিশ্লেষক এবং বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করলে অপরাধীদের সঙ্গে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। এখানে রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে পেশাদার অপরাধীরাও থাকে। এই গ্রুপ অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে অপরাধ করে থাকে।’ পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা আনা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়