আসাদুজ্জামান বাবুল, গোপালগঞ্জ: [২] গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবিদ্যায়ের লাইব্রেরী থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম হীরাকে সু-নিদৃষ্ট কোন কারন ছাড়াই গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড, মো, নুর-উদ্দিন আহম্মেদ আমাদের এ প্রতিনিধিকে বলেছেন, চুরির ঘটনায় পুলিশের কাছে আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র মো. মাসরুল ইসলাম পনি শরীফের নানান কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিষ্ট্রার মো. নজরুল ইসলাম হীরা সহযোগিতা করেন, এমন একটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তদন্ত কমিটির নজরে পড়ে।
[৩] এরপর বুধবার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি এক জরুরূ বৈঠকে বসেন। সেখানে সকলের মতামত ও সুপারিশক্রমে তদন্ত কমিটির সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নজরুল ইসলাম হীরাকে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ট্যাটাসটি বাদে সু-নিদৃষ্ট কোন অভিযোগ নজরুল ইসলাম হীরার বিরুদ্ধে আপনারা এবং পুলিশ প্রশাসন পেয়েছেন কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড, মো, নুর-উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ট্যাটাসটির বাহিরে আর কোন তথ্য প্রমান আমার হাতে নেই।
[৪] এদিকে, বুধবার বিকেল পৌনে ৫টায় গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহম্মাদ ছানোয়ার হোসেন বলেছেন. বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার চুরির ঘটনায় সরাসরি জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসরুল ইসলাম পনি শরীফসহ ৭ জন চোরকে ধরতে ও কম্পিউটার উদ্ধারের কাছে হীরা সাহেব পুলিশকে সহযোগীতা করেছেন। তার সহযোগীতার কারনে চোরদের ধরতে সহজ হয়েছে এমন কথা উল্লেখ করে মোহম্মাদ ছানোয়ার হোসেন বলেন. পুলিশের কাছে আটক ছাত্রসহ ৭ জন চোরের কেউই হীরা সাহেবের সংশ্লিষ্ট থাকার কথা আমাদের কাছে ও আদালতের বিচারকের কাছেও বলেননি। এ বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড, শাহজাহানের কাছেও বলেছি। তিনি বলেন, এটা তাদের ইন্টারনাল বিষয়।
[৫] গত ৯ আগস্ট এবিষয়ে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দুই দিন বাকি থাকতেই এই সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়ায় জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই চিঠিতে সহকারী রেজিস্ট্রার ও তদন্ত কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলামকে জানানো হয়েছে যে, বশেমুরবিপ্রবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে কম্পিউটার চুরি যাওয়া বিষয়ক তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখার স্বার্থে তদন্ত কমিটির ছয়জন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই তদন্ত কমিটি থেকে আমাকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কোন কারন ছাড়াই তদন্ত কমিটি থেকে উদ্দেশ্যেমুলক আমাকে বাদ দিয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার ঘটনার সাথে জড়িতদের প্রত্যাহারসহ বিচারের দাবী জানিয়ে হীরা বলেন, অফিসের গোপনীয় বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিভাবে আসলো এটাই আমার প্রশ্ন।
[৬] তিনি আরো বলেন, চোর ধরার ক্ষেত্রে আমি পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা করেছি। চোর ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন হলো সঠিক তদন্তের বিষয়ে অপর ৬ সদস্যের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আসে উল্লেখ্য, ঈদের ছুটির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছন দিকের জানালা ভেঙে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. প্রফেসর নূরউদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। গত ১৩ আগস্ট ঢাকার ক্রিস্টাল ইন হোটেল থেকে চুরি যাওয়া ৪৯টি কম্পিউটারের মধ্যে ৩৪টি কম্পিউটার উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় দুলাল ও হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ও নড়াইল থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাসরুল ইসলাম পনি শরীফসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তারকৃত সাতজনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
আপনার মতামত লিখুন :