হাসান মোর্শেদ: ‘পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে আসে আমরা তখন তরুণ। এর আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে কিশোর থাকলেও আন্দোলনের অভিঘাতে আমাদের রাজনৈতিক বোধ তৈরি হয়েছে। আমরা খুব শুনতাম, আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় এলে দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। কথাটা কারা বলতো, কেন বলতো?’ পঁচাত্তরের খুনিদের সমর্থক বিএনপি-জামায়াতের কর্মী, কিছু চীনপন্থী বাম ও সুশীল টাইপের লোকজন এটা বলতো। এর পেছনে জাস্টিফিকেশন এবং ভীতি দুটোই কাজ করতো। তারা জনমানসে এই ধারণা ছড়াতো- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রতিশোধের নেশায় দেশে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেবে। তাদের ভয় ছিলো- একুশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের উপর সবাই মিলে যে হত্যা নির্যাতন যজ্ঞ চালিয়েছে, ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ নিলে কেউ রেহাই পাবেনা। না, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রক্তগঙ্গা বয়ে যায়নি। এমনকি ২০০৪ এ যখন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হলো, হত্যা করা হলো শাহ কিবরিয়া আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো নেতাদের তখনো আওয়ামী লীগ রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়নি।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ১৫ আগস্ট শ্রদ্ধাপোস্টে শহীদুল আলমের ইতরামীর সপক্ষে কিছু অতি শিক্ষিতের জাস্টিফিকেশন দেখলাম- এই সরকার তাকে যে নির্যাতন করেছে, এমন ক্ষোভ হতেই পারে। দারুণ না? একটা সরকার ‘অন্যায্য’ ভাবে নির্যাতন করেছে সেই ক্ষোভে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে মকারি করা যায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে যদি তার বাবার খুনিদের ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলতেন, একুশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের যে নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো তারা যদি রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতো, একুশে আগস্টের ক্ষোভে শেখ হাসিনা যদি খালেদা জিয়া আর তার পুত্রকে বিনা বিচারে লটকে দিতেন? এদেশের বহু ভদ্রলোকের কপাল ভালো- দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলটি ক্যাডারভিত্তিক না। ক্ষমতার বাইরে থাকলে মরিয়া কর্মীদের নিয়ে প্রকাশ্যে ফাইট দেয়, ক্ষমতায় আসলে নানা অপকর্মে নিজেদের বিপুল সম্ভাবনা অপচয় করে। আওয়ামী লীগ যদি ঠাণ্ডা মাথার, ক্যাডারভিত্তিক, প্রতিশোধ পরায়ন দল হতো সুশীলতার নামে বহু ইতরপণা দেখতে হতো না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :