তারিকুল লাভলু: ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক গিয়েছিলেন বগুড়ায়। আমি অটোগ্রাফ নিলাম। বললাম, কিছু লিখে দিলেন না? তিনি লিখলেন, ‘বি ট্রুথফুল।’ সেদিন থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার প্রতি আমার আগ্রহ কমে গেলো। সারাজীবন এতো অসত্য বলে আমাকে লিখলেন, সত্যবাদী হতে?’ এই হলেন শিল্পী মুর্তজা বশীর। উপলব্ধি করার দক্ষতাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সম্পদ।
বাবা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, হয় ফেমাস হও, নয় নটরিয়াস। তিনি ঠিক করেছিলেন, বিখ্যাত হবেন। বিশ্বের বিখ্যাত লোকদের চেনা ও তাঁদের অটোগ্রাফ নেওয়ায় মশগুল হয়েছিলেন৷ জওহরলাল নেহরুর ছবি এঁকে তাঁকে পাঠিয়ে লিখেছিলেন, ‘আমি দশম শ্রেণির ছাত্র, আপনার পোর্ট্রেট এঁকে পাঠালাম, বিনিময়ে আপনার স্বাক্ষর চাই।’ নেহরু পাঠিয়েছিলেনও। সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর ১৯৪৮। এই আগ্রহের তালিকায় যোগ হয়েছিলো সূর্য সেনের সঙ্গী অম্বিকা চক্রবর্তী, কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেন, সাইকেলে করে বিশ্বভ্রমণ করা প্রথম বাঙালি রামনাথ বিশ্বাসÑ এমন অনেকেই। শেরে বাংলা তাঁর সেই আগ্রহে ইতি টেনেছিলেন।
চেয়েছিলেন অমর হতে। পত্রিকা অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমার মৃত্যুর পর নিউজটা কোথায় দেবেন?’ কেউ বলতেন, ভেতরের পাতায়। কেউ বলতেন শেষের পাতায়। বন্ধু শামসুর রাহমান তখন দৈনিক বাংলার সম্পাদক। তিনি বলেছিলেন, প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলামে নিউজ করবেন। এই আশ্বাসে একটুও সন্তুষ্ট হননি শিল্পী। মূল শিরোনামের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘এখানে দেবেন না?’
এমন আবদারে পত্রিকাওয়ালারা অবাক হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে তাহলে ততো দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে, যতোদিন না আমি মারা গেলে লিড নিউজ হই। আমাকে সেভাবেই প্রস্তুত হতে হবে।’ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে এই শিল্পীর প্রস্থানে আগামীকাল পত্রিকাগুলোতে তিনি লিড নিউজ হবেন কিনা জানি না। তবে শিল্পের ইতিহাস সেদিন তাঁকে নিয়ে নিঃসন্দেহে মশগুল হবে, যেদিন ইতিহাসবেত্তাগন তাঁর শিল্পকর্মগুলো বোঝার জন্য যোগ্য হবেন। চিরশান্তিতে থাকুন, প্রিয় শিল্পী। আপনার অমরত্বের আকাক্সক্ষা প্রবাহমান তো রইলোই আপনার অনন্য শিল্পকর্মে। লেখক : স্থপতি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :