সুজন কৈরী : [২] সেইসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রহস্য উদঘাটন করেছে রাজধানীর মিরপুরে বায়িং হাউস কর্মকর্তা সুলতান হোসেনের ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার।
[৩] গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ফরহাদ, আকবর, সাগর, সুমন ও সবুজ। শনিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাব-পুলিশ পরিচয়ে মানুষকে গাড়িতে তুলে টাকা ছিনিয়ে নিত চক্রটি। তাদের কাছ থেকে সুলতান হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র, ওয়াকিটকি ও র্যাবের নকল পোশাক জব্দ করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরেকজন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
[৪] তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতান উত্তরায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করতেন। তার বাসা তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায়। স্ত্রী ও সাড়ে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে ছিল তার সংসার। গত ১৪ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে মতিঝিলের মানি এক্সচেঞ্জে যান। সেখান থেকে একটি ব্যাগ হাতে বের হন সুলতান। ব্যাগে অনেক টাকা আছে ভেবে তাকে অনুসরণ করে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য সবুজ ও সাগর। প্রথমে একটি দ্বিতল বাসে ফার্মগেট, এরপর শেখর পরিবহণের বাসে মিরপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সুলতান। এসময় তাকে অনুসরণ করতে থাকে ছিনতাইকারী চক্রের ব্যবহার করা একটি অ্যাম্বুলেন্স। মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বরে এলাকায় পৌঁছলে সবুজ ও সাগরের তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অপর তিন সদস্য আকবর, মনির ও ফরহাদ র্যাব পরিচয়ে তাকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে তোলে। তাদের গায়ে র্যাব লেখা জ্যাকেট ছিল। এ সময় সুলতান চিৎকার করলে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে সুলতানের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর মরদেহ নিয়ে মানিকগঞ্জের দিকে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। বিভিন্ন স্থান ঘুরে সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের এক নির্জন এলাকায় সুলতানের মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
[৫] অজ্ঞাত হিসেবে ১৬ জুলাই সিংগাইর থানা পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে তার পরিচয় মেলে। এর আগের দিন সুলতানের নিখোঁজ থাকার বিষয় উল্লেখ করে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বজনরা। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের বেতারে লাশের তথ্য জানানো হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা মানিকগঞ্জ মর্গে সুলতানের লাশ শনাক্ত করে। সুলতানের মরদেহ উদ্ধারের পর তার বড় ভাই আবুল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তভার নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ। তদন্তে নেমে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা এই হত্যা-রহস্য বের করতে সক্ষম হন।
[৬] ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের গুলশান জোনের ডিসি মশিউর রহমান জানান, বিভিন্ন বাহীনির পরিধয় বস্ত্র বা ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহারের ফলে ১৭০ ধারায় মামলা, অস্ত্র মামলা, হত্যা মামলা, ডাকাতি প্রস্তুতি মামলাসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।