শিরোনাম
◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০২০, ০৮:০০ সকাল
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০২০, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্বপ্না রেজা: সত্যের জয় হোক

স্বপ্না রেজা: আজকাল মানুষ সত্য বলে কম। মিথ্যে বলতে স্বচ্ছন্দ বেশ এখন অধিকাংশ মানুষের। কারণ আছে। কারণটা জড়িয়ে আছে স্বার্থকে। স্বার্থের কারণে মানুষ মিথ্যে বলতে শিখেছে। স্বার্থ মানুষকে মিথ্যে বলায়। সত্য বললে লাভ হয় না। এটা দেখে, জেনে অনেক মানুষ এখন তাই মিথ্যে বলে নিজের লাভ খোঁজে। মূল কথা হলো লোভ ও স্বার্থপরতা। এদুটোকে সামনে রেখে অনেক ব্যক্তি হেঁটে চলে, তার গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। সমাজে এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর বিপরীত দিকও আছে। কোন কোন মানুষের আবার এমন গন্তব্য নেই। সত্যের ভেতর অকৃত্রিম নিঃশ^াসে তা^রা তাঁদের বেঁচে থাকার ঠাঁই খোঁজেন নানান প্রতিকূলতায়ও। সমাজ এদের অনেকেরই বসবাস ‘মধ্যবিত্ত’ শ্রেণিতে। কেউবা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণিতে। এই শ্রেণির ভেতর যারা লোভ, স্বার্থপরতা নিবৃত্ত করতে পারেন না তারা ধান্দাবাজ, চাটুকদারে পরিণত হন। এরা দালালী করে একসময়ে মালিক বনে যান। এক পর্যায়ে এদের মধ্যবিত্তের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়। উচ্চবিত্তের চ্যাপ্টার ওপেন হয়। সত্যের মৃত্যু ঘটে, মিথ্যের জন্ম হয়। হঠাৎ করে প্রচুর বিত্তের মালিক বনে যাওয়া এই শ্রেণির কারণে প্রকৃত ও ঐতিহ্যগতভাবে বিত্তবানরা মিয়ম্রান হয়ে পড়েন। আর একসময়কার এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির হঠাৎ বনে যাওয়া এসব বড়লোকদের কারণে মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়েন শ্রেণিগত মানসম্মান সংকটে।

লোভ, লালসা, হিংসা, হিংস্রতা, প্রতিশোধপরায়নতা এসব মানুষের নেতিবাচক আচরণ। এক আচরণ থেকেই আরেক আচরণের উৎপত্তি। লোভ, লালসা থেকে হিংসা, হিংস্রতা কিংবা প্রতিশোধপরায়ণতার সৃষ্টি হয় এবং সমাজ থেকেই এসব আচরণ ব্যক্তির ভেতর জেগে ওঠে। অর্থাৎ পরিবেশ ব্যক্তিকে নেতিবাচক আচরণে অভ্যস্থ করে তোলে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তিরা সাধারনত সত্য বলেন না। অন্যকেও সত্য বলতে দেন না। সত্য লুকিয়ে এরা আখের গোছান। ধনসম্পদের মালিক হন। এমন দৃষ্টান্ত সমাজে আছে এবং বেড়ে চলেছে। ঘরের ভেতর কোটি কোটি টাকার নোট রেখে দেবার মানসিকতা, হাজার কোটি টাকার অবৈধ মালিক বনে যাওয়া, অন্যের প্রাণনাশের কারণ বনে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা তারই ফলশ্রুতি। খুব আশ্চর্যের বিষয় হলো বিদ্যমান প্রচুর আইনও এহন অপরাধকে রুখতে পারে না। অনেকে হতাশার সুরে করুণ হাসি দিযে বলেন, আইন থাকার কথা তাই আছে। একটা শ্রেণির পেশার জন্ম দিতে আইন বিষয়ের অবতারণা। আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন, ধনসম্পদ গড়ছেন। অপরাধীর পক্ষে তারা ওকালতি করেন। কী লাভ তাতে অন্যায়ের শিকারগ্রস্থদের। আবার কেউ কেউ বলেন, আইন থেকেইবা কী লাভ, প্রয়োগ নেই। ন্যায় বিচার হয় না। কজনইবা পায় ন্যায় বিচার। আরেক দল বলেন, আইন আছে কেবল ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করতে। তাই দেখা যায় জনগণের ন্যায্য দাবীগুলো অনেকসময় রুখতে আইন সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এরা মনে করেন, সরকার তার প্রয়োজনেই আইন নিয়ন্ত্রণ করেন, ব্যবহার করেন। আইন প্রয়োগ, বাস্তবায়ন কিংবা আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে অনেক ধরণের ভাবনা সমাজে প্রচলিত এবং যা ব্যক্তির অভিজ্ঞতালব্ধ। আইনের দ্বারস্থ হতে অনেকেরই ভয়। ভীতুরা ভেবে নেন, এখানে সত্য নেই, আছে কেবল মিথ্যের মারপ্যাচ। আটকে গেলে জীবননাশ।
আইনের প্রসঙ্গ তুলে রাখছি। বিদ্যুৎ, পানির কথায় আসি। জনগনের কাছ থেকে বিদ্যুতের বিল আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত কর্তাব্যক্তি, কর্মচারীদের ধনসম্পদের পেছনে কতটা মিথ্যে বিল রয়েছে, যা পরিশোধ করতে সাধারন সৎ মানুষের কষ্ট পোহাতে হয়েছে তা খতিয়ে দেখলে বিরাট কান্ডকারখানার সন্ধান পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মনে করেন। সামান্য বিদ্যুত লাইন সংযোগকারীদের ধনসম্পদও অনেক কথা বলে দেবে নিঃসন্দেহে। অবৈধ লাইন সংযোগ, বানোয়াট বিল প্রদানের ছোটবড় গল্প কিন্তু আবার একক ব্যক্তির কোন গল্প নয়। এসব সংঘবদ্ধ গল্প। আমার ধারনা সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বহু সংঘবদ্ধ গল্প আছে। এটা ঠিক যে, এসব সংঘবদ্ধ গল্পগুলো বেশ কটি স্তরে বিরাজমান গল্পকারের কীর্তি। যার একটি স্তরে থাকেন ক্ষমতাবানরা। পিপীলিকার মতন ছোট ছোট গল্পকাররা এদের ঘিরে একদিন বড় গল্পকার বনে যান। পাঠক, এই গল্প সাহিত্যের কোন অধ্যায় নয়, এটা সংঘটিত অপকীর্তি।

কোটি কোটি টাকার মালিকের সন্ধান পাওয়া যাবে পানি সরবরাহকারী সংস্থা ওয়াসায় কর্মরতদের। বিদ্যুৎ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ নাগরিক সুবিধা প্রদানকারী প্রতিটি সংস্থায় কর্মরতদের সততা নিয়ে বাজারে নানান কথা প্রচলিত। আছে ভয়, শংকা। অথচ সেবা প্রাপ্তির জন্য জনগণ ট্যাক্স দেয়। ট্যাক্স দিতে হয়। না দিলে জেলজরিমানা হয়। এই ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়। অথচ বেতনভুক্তদের জনগণের কাছে কোন জবাবদিহিতা নেই। নেই দায়বদ্ধতা। অভিনব মিথ্যেচারীতায় এরা পাড় পেয়ে যান, যাচ্ছেন। একদিনের ঘটনা নয় এসব, বহুদিনের।
শেষ করি একটা গল্প দিয়ে। ফল বিক্রেতা রহিম। দুই মেয়েকে পড়াচ্ছেন। একজন কলেজে পড়ছে, আর একজন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। বাসা ভাড়া, খেয়েপড়ে বাঁচা আর দুই মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা ফল বিক্রি করে, এমন প্রশ্নের উত্তর সাবলীলভাবে দিলেন। বললেন, সহজ ও সরলভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। সমাজ দেয় না সহজ, সরলভাবে বাঁচতে। একটু চালাকি করে বাঁচতে হয়। জানতে চাইলাম সেটা কেমন। কিঞ্চিত হেসে বললেন, ব্যবসা থেকে বেশি লাভ করতে কাস্টমারকে ঠকাতে হয়। সবাই ঠকায়। আমিও। তবে আমি মাত্রা বজায় রাখি। অকপটে এমন সত্য বলার রহস্য খুঁজতে শুরু করতেই হলো। প্রতিদিন টিভি টকশোতে কতরকম বানোয়াট তথ্য শুনি। আশপাশের মানুষগুলো হয়ে উঠেছে রীতিমত অভিনয় শিল্পী যেন। তারমাঝে এমন সত্য বয়ানের কারণ কী শুনবার জন্য মন ব্যাকুল।

মিথ্যে বলা পাপ বললেন ধর্মভীরু রহিম। বললেন, পরকালে শাস্তির একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু ইহকালে সত্যবলার কিংবা ন্যায় কাজের শাস্তিটা কিন্ত কম নয়। এই যে রাস্তায় ফল বিক্রি করি তার জন্য দুজায়গায় মাসে আমাকে টাকা দিতে হয়। একটা জায়গা হলো এলাকার মাস্তান। আরেকটা জায়গা হলো এলাকার টহল পুলিশ। কই থেকে পাই সেই টাকা ? যে পরিমাণ ফল বিক্রি হয়, ন্যায়ের সাথে তা বিক্রি করলে না খেয়ে মরতে হতো। মেয়েদের পড়ালেখাও করাতে পারতাম না। যে ঠোঙায় ফল রেখে ওজন করি, সেই ঠোঙার নীচের ওজন মোটা কাগজ দিয়ে বাড়ায়ে রাখি। কাস্টমার যে পরিমাণ ফলের টাকা দেয় তারচেয়ে সে কিছু কম ফল পায় আমার কাছ থেকে। পরিমাণে কম ফল দিয়ে আমি কিছু বেশি টাকা নিই কাস্টমারের কাছ থেকে। এমন সত্য বলায় তার কোন সংকোচ নেই। কারণটা সে নিজেই বললেন। মাঝেসাঝে তিনি সত্য বলেন তার পাপমোচনের জন্য। ধর্মে আছে জীবন বাঁচানো ফরজ। তাঁর দাবী তিনি ফরজ কাজ করছেন। দুই মেয়েকে শিক্ষিত করবার সুখের মতো আর কোন সুখ তার নেই।

ফলবিক্রেতা এমন সত্য বলে কখনো তার বিত্তের পরিবর্তন আনতে পারবেন কিনা জানি না। তবে কন্যা দুজন শিক্ষিত হয়ে উঠবে সেটা নিশ্চিত হওয়া গেলো তার চোখেমুখে দৃশ্যমান প্রত্যয় দেখে। তিনি করোনার পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টের মতো ফলে বিষ মেশাচ্ছেন না, চাঁদাবাজদের চাহিদা পূরণ করতে ঠোঙার ওজন বাড়িয়েছেন কেবল এবং তা সামান্য। বেঁচে থাকবার প্রশ্নটা এখানে বড় নিজের এবং পরিবারের। অকপটে সত্য বলার সাহস আছে তার। ক’জন আছেন এমন ?
সত্যের জয় হোক।

স্বপ্না রেজা:  কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়