শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট, ২০২০, ০৭:৪০ সকাল
আপডেট : ০৯ আগস্ট, ২০২০, ০৭:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেরিয়ে আসছে বঙ্গলীগ প্রেসিডেন্ট শওকতের প্রতারণার নানা ঘটনা

ডেস্ক রিপোর্ট : সবখানেই অবসরপ্রাপ্ত মেজরের পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন শওকত মিয়া। তিনি এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে, রাজধানীর মিরপুরে আরামবাগ হাউজিংয়ের ই-ব্লকের ৭ নম্বর সড়কের ১৪-ই নম্বর তার নিজস্ব ভবনে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি. (ডেসকো)-এর বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়ার আবেদনেও নিজেকে মেজর (অব) হিসেবে পরিচয় দেন। তার নামে নেওয়া দুটি মিটারের বিলে নাম ও ঠিকানার স্থলে মেজর (অব) শওকত হাসান মিয়া লেখা দেখা গেছে। ভুয়া মেজর সেজে নেওয়া ওই বিদ্যুতের মিটারের বিলের ফটোকপি এসেছে।

জামালপুরের ইসলামপুরের একাধিক গ্রামবাসী বলেন, রিজেন্টের সাহেদের মতো শওকত হাসানও একজন উঁচুমাপের প্রতারক। সিপাহী হয়েও তিনি মেজর পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন গ্রামে। বিভিন্ন ধর্মসভায় ‘প্রধান অতিথি’ হওয়ার জন্য প্রলোভন দেখিয়ে তার ম্যানেজার ও কিছু বখাটে-দালালচক্রের মাধ্যমে মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থানের কমিটির লোকজনের কাছে বলেন, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে তাকে প্রধান অতিথি করলে পাঁচ-দশ লাখ টাকা অনুদান দেবেন। তবে প্রচারপত্রে তার নামের সঙ্গে আলহাজ, দানবীর, শিক্ষানুরাগী ইত্যাদি উপাধি উল্লেখ থাকতে হবে এবং তাকে অনার করে নেওয়ার জন্য ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেল বহরসহ যেতে হবে। জনপ্রিয়তার সস্তা প্রচার পেতে এভাবে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানের ধর্মসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুই লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে বিভিন্ন জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে নিজের নাম জাহির করেছেন মাত্র। তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি তার কাছে টাকা চাইতে গেলে শওকত অকপটে বলেন- সেই টাকা তো ওই প্রতিষ্ঠানের কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি। পরবর্তী সময়ে কমিটির সাথে কথা বললে তিনি যে জলজ্যান্ত মিথ্যা বলেছেন তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু তার বাহিনীর ভয়ে প্রতিবাদে মুখ খুলতে সাহস পায় না গ্রামবাসী।

সম্প্রতি ইসলামপুরের ‘মুখশিমলা বাজার ওয়াক্ত জামে মসজিদ’কে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। সস্তা প্রচার পেতে জনাকীর্ণ এক মজলিসে মসজিদটি নতুন করে গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তার কথা মতো টিনশেড মসজিদটি ভেঙে দেওয়ার পর বহুবার শওকতের কাছে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু সাড়া দেননি তিনি। উল্টো অপমানিত হতে হয় মসজিদ কমিটির লোকজনকে। এর মাঝে তিনি কিছু রড-সিমেন্ট দিয়েছিলেন মসজিদ গড়ার জন্য। পরে লোকজন দিয়ে সেই রড-সিমেন্টও ফেরত নিয়ে যান বলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। এ অভিযোগের বিষয়ে গতকাল শনিবার ‘মুখশিমলা বাজার ওয়াক্ত জামে মসজিদ’ কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান নুন্নু মিয়ার (সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার) সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কিন্তু জীবনের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

শওকত হাসান তার ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় অনেকের জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনই একজন ভুক্তভোগী ইসলামপুরের মুখশিমলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল আজিজ প্রধান। গতকাল তিনি জানান, প্রভাব খাটিয়ে জামালপুরের হরিয়াবাড়ি এলাকায় আ. আজিজের ৪৯ শতাংশ জমি জবরদখল করে সেখানে মাছের ঘের তৈরি করেছেন শওকত। এখন নিজের জমির কাছে নিজেই যেতে পারেন না বয়োবৃদ্ধ আজিজ প্রধান। ইসলামপুরের সালদার ব্যাপারীপাড়ায় অন্যের প্রায় ১৬ বিঘা জমির ওপর জোর করে দেয়াল তৈরি করেছেন শওকত। কিন্তু সেখানকার দরিদ্র চুড়ি তৈরির ব্যবসায়ীরা তার বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না বলেও আজিজ প্রধান জানান।

দল ভাঙিয়ে করেন চাঁদাবাজি

২০১৫ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটা ‘বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ’ নামের দলটি রাজনৈতিক বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তর থেকে নিবন্ধন না পেলেও শুরু থেকেই চাঁদাবাজি শুরু করেন সংগঠনের প্রসিডেন্ট শওকত। তার চাঁদাবাজির প্রথম টার্গেট নিজ দলেরই নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, ঋণ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে নতুন এই রাজনৈতিক দলের সদস্য করা হয়। তাদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আদায় করা হয় চাঁদার টাকা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুসলিমবাগ এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করতে গেলে মোছাম্মদ রুনা বেগম ও আয়শা বেগম নামে দলের দুই মাঠকর্মীকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। আটককৃতরা পুলিশকে জানায়, বঙ্গলীগের হয়ে নারী-পুরুষ সমন্বয়ে ভাগ হয়ে মাঠপর্যায়ে চাঁদার টাকা তোলেন তারা। সিলেটের ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে তাদের এই কাজে লাগান। আটককৃতরা প্রায় দেড় হাজার সদস্য সংগ্রহ করে উত্তোলিত চাঁদার সব টাকা জনৈক ইকবাল হোসেনকে দেন। পাঁচ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলে সদস্যদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের আলোচিত এ ঘটনাটি তখন বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছিল।

‘ইউআইটিএস’র উপাচার্যের কাছে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি

অভিযুক্ত শওকত হাসানের বিষয়ে গত ১২ জুলাই ‘ইউআইটিএসের উপাচার্যের কাছে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি; জামিন নিয়েই লাপাত্তা বঙ্গলীগের প্রেসিডেন্ট শওকত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় । শওকত হাসান মিয়া ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে ইউআইটিএস উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির যে অভিযোগ ওঠে, পুলিশ সে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

চাঁদা দাবির এ ঘটনায় গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানায় শওকতকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল, যার মামলা নম্বর-২ (১) ২০। এ মামলায় গত ৮ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শওকত হাসান। আদালত তাকে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। গত ২৭ জুলাই ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করলে শওকতকে কারাগারে পাঠান আদালত। এ তথ্য জানিয়েছেন ইউআইটিএসের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোক্তারুজ্জামান বলেছেন, ‘ইউআইটিএসের উপাচার্যকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় করা মামলার তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’

শওকতের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়ের মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গুলশানের বারিধারা এলাকায় অবস্থিত ‘জামালপুর টুইন টাওয়ার-২’ ভাড়া নিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে ইউআইটিএস। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শওকত হাসান ও তার ক্যাডাররা উপাচার্যের কাছে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা ছাড়াও মালামাল স্থানান্তরে বাধা দেন। এ বিষয়ে ২০ নভেম্বর ২০১৯ ভাটারা থানায় একটি জিডি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ সন্ধ্যায় ৫-৬ জন সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে এসে ইউআইটিএসের উপাচার্যের গাড়ি আটকে ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন শওকত হাসান। চাঁদা না পেয়ে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি ও প্রাণনাশের ভয়ভীতিও দেখান তিনি।

এদিকে অ্যাসার্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত জামালপুর টাওয়ারের মালিক শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে ‘ইউআইটিএস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা একটি জাল-জালিয়াতির মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার্জশিট দিয়েছে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত শওকত হাসান মিয়া বাদী হয়ে ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার বিজ্ঞ সিএমএম আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন (নম্বর : ৪১১৩/২০১৯)। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষ উভয়পক্ষের মধ্যে উদ্ভূত বিরাজমান বিরোধ সঠিক নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত শেষে অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য ঢাকার সিএমএম আদালতে শওকত হাসানকে আসামি করে একটি সিআর মামলা করেন (নম্বর : ৪২৪৮/২০১৯)। সিএমএম আদালত দুটি মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ঘটনা যাচাইয়ের জন্য পিবিআইকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

পরে পিবিআইর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন গত ১৪ জুন বঙ্গলীগের চেয়ারম্যান শওকত হাসান মিয়ার দায়ের করা মামলায় বর্ণিত অভিযোগটি ভিত্তিহীন মর্মে ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যানের পক্ষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অন্যদিকে শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষের দায়ের করা সিআর মামলায় বর্ণিত অভিযোগের সত্যতা রয়েছে মর্মে শওকতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন আদালতে।যুগান্তর, বিডি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়