মুসা আহমেদ: [২] প্রবাসীদের ঈদ মানে বরাবরই আনন্দ ও বেদনার। এ ক্ষেত্রে বেদনার পাল্লাটা যেন একটু বেশিই ভারি। নেই মায়ের হাতের রান্না, আত্মীয়দের মিলনমেলা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় খুশির জোয়ার। তবুও ঈদ প্রবাসে আসে, থাকে আনন্দ, প্রবাসীরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও নতুন জামা পড়ে মিলিত হন ঈদের জামাতে। কিন্তু এবার এতটুকু আনন্দও কেড়ে নিলো বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯।
[৩] প্রবাসীদের ঈদ ভাবনার প্রায় সবটাই থাকে দেশে থাকা স্বজনদের ঘিরে। ঈদ উপলক্ষে স্বজনদের উপহার দেয়া, বেশি টাকা পাঠানো। অনেকের বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় অনেককেই ফিরতে হয়েছে বিমানবন্দর থেকেই। ভেঙে যায় স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের স্বপ্ন।
[৪] প্রবাসে ঈদুল আযহা মানে অন্য এক বাস্তবতা। যাওয়া হয় না চিরচেনা গরুর হাটে। হাঁকানো হয় না দামদর। নেই গোশত কাটার আনন্দ। হয় না বাড়িতে বাড়িতে গোশত বিতরণের সুযোগ। প্রবাসীদের কাছে ঈদ মানেই মন খারাপের একটা দিন।
[৫] মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে ঈদের একটা আমেজ থাকলেও অমুসলিম দেশগুলোতে নেই সেই সুযোগ। মুসলিম দেশগুলোতে ঈদের দিন সরকারি ছুটি থাকলেও অধিকাংশ অমুসলিম দেশে নেই সরকারি ছুটি। ঈদের ছুটি না থাকায় নামাজের পরই অনেক প্রবাসীদের ছুটতে হয় কর্মস্থলে। দেশে পরিবার আর আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করলেও প্রবাসীদের ক্ষেত্রে তার চিত্র একেবারেই বিপরীত।
[৬] ঈদের দিন সরকারি ছুটি ছিলো না ইতালিতে। বিষয়টি নিয়ে বড় দুঃখ প্রকাশ করেন দেশটির পুলিশ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা বাংলাদেশি প্রবাসী তাহমিনা ইয়াসমিন শশী। তিনি বলেন, দেশের মতো এখানে ঈদের তিলমাত্র আমেজ নেই। ঈদের দিনও আফিস করতে হয়েছে। এখানে ঈদে সরকারি কোন ছুটি নেই। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ পালন দূরে থাক, তাদের সঙ্গে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগও কম।
[৭] শশী বলেন, ইতালিতে মসজিদ নাই বললেই চলে। বিষয়টা খুবই কষ্টদায়ক ও দুঃখজনক। হলরুম ভাড়া করে ঈদের ঈদের নামায পড়তে হয়েছে আমাদের মুসলিম ভাইদের। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাযের ব্যবস্থা থাকায় অনেকেই যেতে পারেনি ঈদের জামাতে। অনেকে আবার করোনা আতঙ্কে বাসাতেই সেরেছে নামায।
[৮] য্ক্তুরাজ্যের গার্ডেন কোর্ট চ্যাম্বার্সের আইনজীবী বাংলাদেশি প্রবাসী মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রবাসে আর দেশে ঈদ উদযাপনে অনেক তফাত। স্ত্রী ও সন্তান কাছে থাকায় ঈদ একবারে বাজে যায়নি। তবে যাদের আত্মীয়-স্বজন এখানে নেই, তাদের মধ্যে ঈদের কোন আমেজ ছিল না।
[৯] তিনি বলেন, ঈদের নামাজ শেষে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বসবাসরত বন্ধুর বাসায় সপরিবারে বেড়াতে যাই। দিনটি উপভোগ করি। বেশকিছু দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।
[১০] পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফেরার কথা ছিলো জাপানের ইনো মেক্কি ইন্ডাস্ট্রির প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত প্রবাসী জুয়েল রানার। দেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বলেন, বছরখানেক জাপানে আছি। এবারই এখানে প্রথম কোরবানির ঈদ। এখানে আসলে ঈদ বলতে কিছু নেই। নেই কোনো আমেজ, নেই কোনো উৎসব। দিনটি সাধারণ দিনের মতই ছিল। নামাজ শেষে কর্মস্থলে ছুটতে হয়েছে। ঈদের দিন পরিবার আত্মীয় স্বজনের কথা ভাবতেই কষ্টে বুক ফেঁটে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :