বিপ্লব কুমার পোদ্দারঃ ধর্ম ব্যবসায়ী এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের যাতাকলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কড়া নাড়ছে।হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে,হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে ভারতে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি অত্যান্ত সুকৌশলে আগামী ৫ই আগষ্ট ভুমি পূজার মাধ্যমে রাম মন্দির নির্মানের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। অথচ এমন যদি হত,ঐ জায়গায় মন্দির তৈরী না করে জাদুঘর তৈরী হত,তাহলে মনে হয় বিশ্বের কাছে ভারতের ভাবমুর্তি অনেকগুন বেড়ে যেত।
করোনায় যখন ভারত ধুঁকছে,যে মুহুর্তে চীন ভারতের ভুখন্ড দখল করে আছে,তখন বিজেপি সরকার আবারো ধর্মের তাস খেলে সুকৌশলে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে করোনা নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে কুন্ঠাবোধ করছে না।আবার একই ভাবে তুরস্কের এরদোগান সাহেব মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হবার লোভে সোফিয়া মসজিদ চালু করলেন। অথচ,এই এরদোগান ভাইজান,চীনের নির্যাতিত উইঘুর মুসলমানদের চীনের হাতে তুলে দেবার চেষ্টার কোন ত্রুটি করছেন না। এ কেমন ধরনের মুসলিম প্রীতি আমার জানা নেই। বাংলাদেশে এরশাদ সাহেবও রাতে খোয়াব দেখে প্রতি শুক্রবারে একেক মসজিদে গিয়ে হাজির হতেন । তবে আমি গর্বিত আমার বাংলাদেশ তার এই ভন্ডামী গ্রহন করেনি।
ধর্ম ব্যবসা বা উগ্র জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ক্ষমতা কিছুদিন আগলে রাখা যায়,একনায়ক তন্ত্রের সুত্রে বাঁধা নিয়মে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র জাতীয়তাবাদের জিকির করে ট্রাম্প ভাই দিব্যি তার সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। আবার চীনের শী পেং বাবু মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে এবং হংকং এর মানুষের মৌলিক অধিকার স্তব্ধ করে দিয়ে,এমনকি তার নিজের প্রয়োজনে হংকংগের নির্বাচনকে এক বছর পিছিয়ে দিয়ে সে তার ক্ষমতার বাহাদুরি বেশ ভালোভাবে উপভোগ করছেন।
একবিংশের বিশ্ব অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তিতে এশিয়া বেশ ভালো ভাবেই এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। কিন্তু, তাদের এই উন্নতি ও অগ্রগতির উপরে কিছু শকুনের চোখ হাতিয়ার করেছে ডোবালের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি এবং শী পেং এর উচ্চাবিলাশ।আর এই সুযোগে যদি এশিয়া থেকে যুদ্ধ করা যায় তবে,এশিয়া আবার আগামী শত বছরের জন্য প্রতিযোগীতার সুচকের মহাসড়ক থেকে হারিয়ে যাবে।
তাই আমার অনুরোধ যে বিষয় নিয়ে আজ যুদ্ধের দামামা অথবা রাফায়েলের পেছনে জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নষ্ট করে সাধারন মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদাকে মুল্যায়ন না করে যুদ্ধকে আলিঙ্গন করার মধ্যে কোন কৃতিত্ব আছে বলে আমার মনে হয়না।
খবরে প্রকাশ,লাদাখ নিয়ে যুদ্ধে নিহত চীনা সৈনিকের পরিবার প্রকাশ্যে কোন মৃত্যু পরবর্তী আচার অনুষ্টানও করতে পারে নি। আবার ভারতে নিহত সৈনিকদের মৃত্যুতে হুংকার দেয়া অসত্য দাবীর বিচার আজো হয় নি ভারতে। এক্ষেত্রে আমি ভারতে প্রকাশিত খবরের উল্লেখ করছি,যেখানে মোদিজী প্রকাশ্যে ঘোষনা করেছেন,চীনের সেনারা ভারতীয় ভুখন্ডে নেই। কিন্তু,বাস্তবতা হলো চীনের সেনারা শুধু ভারতীয় ভুখন্ড নয়,নেপাল থেকেও এখন ভারতকে আক্রমন করার পায়তারা করছে। তাই উভয় দেশের কাছে আমার অনুরোধ যুদ্ধ নয়,শান্তি চাই। বিতর্ক নয়,সব সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান চাই সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে।
ধর্ম বলতে আমি শিখেছি,আমার বাবার মৃত্যু মুসলিম ধর্মের অনুসারী এবং সেই ধর্ম পালনকারী ফরিদ কাকার কোলের উপরে তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ। দিনটি ছিল শুক্রবার মধ্যরাত,১৪ ই আগষ্ট,১৯৯৮। ধর্ম বলতে আমার উপলব্ধি কোন রোগীকে বাচাবার জন্য রক্তের গ্রুপের আগে যেরকম হিন্দু মুসলিম বা খৃষ্টান এ পজেটিভ বা নেগেটিভ গ্রুপ হয় না,শুধু হয় রক্তের গ্রুপের নিজস্ব নাম,তাই ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেই সবাই সবাইকে সহযোগীতা করুক। তবেই ধর্মের আসল রূপ এবং আমরা আমাদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছুতে পারব।
আর প্রতিরোধ করতে পারব,ধর্ম ব্যবসায়ীদের ,মুক্ত হতে পারব আমরা।
লন্ডন ৪ঠা আগষ্ট
লেখকঃ লন্ডনে কর্মরত আইনজীবি ও সমাজকর্মী।
আপনার মতামত লিখুন :