সাদ্দাম হো‌সেন, ঠাকুরগাঁও: [২] জেলায় সর্বত্র জাল টাকার একটি চক্র আবারও সক্রিয় হওয়ায় ঈদ বাজারকে টার্গেট করে নতুন করে মাঠে নেমেছে । ঈদসহ যেকোনো উৎসবে সাধারণ মানুষের নতুন টাকার প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নতুন টাকা না পাওয়ায় জাল টাকার কারবারীরা এ সুযোগকে কাজে লাগায়। ফলে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ বিশেষ করে বিচাকেনায় ব্যস্ত দোকানীরা।

[৩] নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রভাবশালীরা জাল টাকা ব্যবসার মূলহোতা। বিভিন্ন কৌশলে জালনোট চক্রটি সাধারণ জনগণসহ তাদের সদস্যদের মাধ্যমে হাটবাজার, পাইকারি দোকান ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এদিকে জাল চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন সুন্দরী রমণীরাও জড়িত বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা শহরের বিভিন্ন মাকের্টের ও বাজারে দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা।

[৪] যে দোকানে ভিড় সে দোকানেই হানা দেয় জালনোট চক্রের সদস্যরা। দশ থেকে পনেরো হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করে অর্ধেক আসল আর বাকিটা জাল টাকা দিয়ে মালামাল ক্রয় করে সটকে পড়ে তারা। জাল সিন্ডিকেটের প্রায় অর্ধশতাধিক সদস্য নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় তারা জাল টাকাগুলো ছড়িয়ে এর বিনিময়ে কাপড়, কসমেটিক, জুতা, স্বর্ণালঙ্কার, খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করে বিক্রেতার হাতে কৌশলে ধরিয়ে দিচ্ছে নতুন জাল নোট ।

[৫] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাল টাকার সঙ্গে জড়িত এক ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন দিক ম্যানেজ করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ৫শ টাকার জালনোট কেনা হয় ১শ টাকায়, ১হাজার টাকার জালনোট ৩শ থেকে ৪শ টাকায়, ১শ টাকার জালনোট ২০ থেকে ৩০ টাকায় ও ৫০ টাকার জালনোট ১০ টাকায় কেনা হয়। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বাংলাদশ-ভারত সীমান্তবর্তী পয়েন্টে বিজিবির টহল কম থাকলে সেদিক দিয়ে জাল টাকার চালান আসে।

[৬] তিনি আরও জানান, জালনোট বিক্রেতার চক্রটি এবং এর সদস্যরা দিনের বেলা থেকে রাতের বেলায় সক্রিয় থাকে বেশি। রাতের অন্ধকারে ও বৈদ্যুতিক বাতির কারণে অনেক সময় জালনোটের নিরাপত্তা সুতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো ও জলছাপ বোঝা যায় না। তাই কোনটি নকল আর কোনটি আসল না বুঝেই ব্যবসায়ীরা জাল টাকা রাখছেন। জাল টাকাগুলো এমনভাবে ছাপানো যে অনেক সময় আসল টাকাকেই জাল মনে হয়।

[৭] কাপড় ব্যবসায়ি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সারা দিনের বেচাবিক্রি শেষে টাকাগুলো যখন ব্যাংকে জমা দিতে গিয়ে সন্ধান পাই জাল নোটের, তকন ভীষণ আফসোস হয় আর লোকশানের কথা মাথায় ঘোরে। জাল নোটের ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

[৮] জেলার সোনালী, মার্কেন্টাইল, এমটিবি, অগ্রণি সহ আরো কয়েকটি ব্যাংক এর সিনিয়র কর্মকতার্রা জানান, জাল টাকা চক্রের খপ্পরে পড়ে নিরীহ, সাধারণ ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান ব্যাংক কর্মকর্তারা।

[৯] ঠাকুরগাঁও সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম জানান, জাল টাকার নোট বিক্রি বন্ধে অনেক আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বেচাকেনার স্থান গুলিতে আমাদের বিশেষ টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। জাল টাকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ