শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২০, ০৭:০৯ সকাল
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২০, ০৭:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লুৎফর রহমান হিমলে : দুই ধারী তলোয়ারের মতন বুদ্ধিজীবীর দুই দিকেই কাটেন

লুৎফর রহমান হিমলে : কয়েকদিন আগে একটা পোস্টে লিখেছিলাম, রিজেন্ট সাহেদ ইস্যু যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য প্রতিদিনই আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু না কিছু লিখুন। দুই লাইন হলেও লিখুন। কারণ এর সাথে আপনার পরিবার এমনকি গোটা সমাজ-রাষ্ট্রের কল্যাণ জড়িয়ে। এই ডাক দিয়ে আমি নিজেই আর কিছু লিখিনি। সেটা অবশ্য নানা কাজ-অকাজের ঠেলায় সময় বের করতে না পারার কারণে। আজকে মনে হলো কথাটা। সেই কথা রাখতে না পারার ‘জরিমানা’ হিসেবে একদিনেই চারদিনের লেখা লিখে ফেললাম। অবশ্য বুদ্ধিজীবীতা জিনিসটাই বোধ করি এরকম। নিজে যেটা বলব, সেটা নিজে করব না। এ যুগে সময়ের প্রয়োজনে নয়, টাকার প্রয়োজনে অনেক বুদ্ধিজীবী লিখে থাকেন। তাদের কাছে সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং বেশি গুরুত্ব পায় পরিবারের আর্থিক দায়বদ্ধতা।

অনেকটা আইনজীবী পেশার মতন। যদিও আমি আজও পারিবারিক দায়বদ্ধতার নিরিখে টাকার জন্য লেখালেখি করতে পারলাম না। সমাজে এখন দেখবেন, কোনো বুদ্ধিজীবী সাদার পক্ষে লিখছেন তো, তাকেই ভাড়ায় নিয়ে কালোর পক্ষে লেখানো যাচ্ছে। দারুণ (নাকি নিদারুন) একটি ব্যাপার। এখানে ন্যায়-অন্যায়ের কোনো বালাই নেই। যে বুদ্ধিজীবী সাদাকে একদিন জয়ী করেছিলেন তিনিই আবার টাকার প্রয়োজনে কালোর পক্ষে কলম ধরেছেন। এখানেও দেখবেন, সাদাকে ছাপিয়ে কালোকেই জয়ের মালা পরিয়ে দিয়েছেন তিনি। সাদা যে ভালো না, তার পক্ষেও হাজার যুক্তি হাজির করে দেবেন তিনি। (এখানে রঙ কোনো বিষয় না। পক্ষে-বিপক্ষে বুঝানোর জন্য শব্দটা ব্যবহার করেছি।) আসলে দু’ধারী তলোয়ারের মতন বুদ্ধিজীবীর দুই দিকেই কাটে। বুদ্ধিজীবীর সাথে কাঠমোল্লাদের এক জায়গায় মিল আছে। এরা নিজের প্রয়োজনে হাদিস কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মুসল্লিদের ধোকা দিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ল, সে-ই ছোটবেলায় শুনেছিলাম।

একবার এক কাঠমোল্লা গেছেন কোনো এক গ্রামের ওয়াজ মাহফিলে। তিনি নিজেকে মওলানা দাবি করে থাকেন অবশ্য। যেমনটা সাহেদ বুদ্ধিজীবী ওই মাহফিলের আয়োজক গরিব এক কৃষক। খানাপিনার সাধারণ আয়োজন করেছেন তিনি। মওলানা ওয়াজের বিরতিতে খাবারের জন্য বাড়ির অন্দরে গিয়ে বসেছেন। তিনি কল্পনা করে রেখেছেন, গরু-খাসি না হলেও অন্ততপক্ষে লাল মোরগ জবাই হয়েছে। কিন্তু খেতে বসে তিনি দেখেন আলু দিয়ে বাইন মাছের তরকারি আর মাসকলাইয়ের ডাল। মওলানা ধরে নিয়েছেন, এগুলোর পরে আসবে সেই কাঙ্খিত লাল মোরগ। তাই তিনি বাইন মাছ না খাওয়ার চিন্তা করলেন। তিনি বলে উঠলেন, দেখুন, বাইন মাছ খাওয়া হারাম। এই মাছ ফজরের আযান শুনতে পায় না। কারণ তারা থাকে কাদার মধ্যে। তাই বাইন মাছের তরকারি নিয়ে যান। অন্য কিছু থাকলে সেগুলো আনুন। শুনে কৃষক দুঃখপ্রকাশ করলেন। বাইন মাছের তরকারি ভেতরে নিয়ে রাখা হল। কৃষক তখন বললেন, হুজুর, শুধু ডাইল দিয়া খাইতে আপনার খুব কষ্ট হবে জানি। কিন্তু করার আর কিছুই নেই। গরিব মানুষ আমি। আর কোনো এন্তেজাম আমি করতে পারি নাই। শুনে তো মওলানা আকাশ থেকে পড়লেন। কতো সুস্বাদু বাইন মাছের কষানো তরকারিটা সামনে ছিল। মুখ ফসকে কী থেকে কী বলে ফেলাতে সেটাও গেলো। এখন ডাল দিয়ে ভাত খেতে হবে। তখনই তার মাথায় এসে গেলো বুদ্ধিটা। তিনি কৃষককে বললেন, দেখুন, বাইন মাছ মাঝেমধ্যে কাদা থেকে উপরে উঠে আসে। আর এ কারণে সে মাঝেমধ্যে আযান শুনতেও পায়। সে হিসাবে এটা খাওয়া জায়েজ।

কৃষক এবার ভীষণ স্বস্তি পেলেন। মওলানাকে বাইনমাছের তরকারি দিয়ে ভাত পরিবেশন করলেন। এখনকার বুদ্ধিজীবী আর কাঠমোল্লাদের মধ্যে মৌলিক কোনো ফারাক নেই। তারা দুপক্ষই সময়ের প্রয়োজনে নয়, নিজের প্রয়োজনে মিডিয়ার রঙ্গমঞ্চে টাকার জন্য পারফর্ম করে থাকেন। যারা একসময় সাহেদদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, তাকে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন, বহুমানুষকে অপচিকিৎসা নামের সেবা দিয়ে মেরে ফেলার সুযোগ দিয়েছেন তারাই এখন টকশোতে তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। অনেকের বক্তব্য এমন যে, তারা সাহেদকে চেনেই না। আমার দৃষ্টিতে সাহেদ বা সাবরিনা... সম্রাট বা আরও যারা আছে তারা কিন্তু বড় কোনো সমস্যা না। সমস্যা তাদের যারা উঠালো, তারাই। সাহেদরা এখানে উপসর্গ মাত্র, রোগ নয় কিন্তু। সমস্যা সারাতে চাইলে রোগটা শনাক্ত করে তার ওপর ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে আগে। দুচারজন সাহেদ-সাবরিনা সারাতে প্যারাসিটামলের প্রয়োগে সাময়িক জ্বর-ব্যথা কমবে বটে, সমাজ-রাষ্ট্রের আসল রোগ কিন্তু যাবে না। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়