শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২০, ০১:৩২ রাত
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২০, ০১:৩২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মো. শামসুল ইসলাম: বাঙালি জীবনে দুর্নীতি

মো. শামসুল ইসলাম: প্রথমেই বলে নেই এটা কোনও সিরিয়াস লেখা নয়। দুর্নীতি নিয়ে আমার নিতান্ত ব্যক্তিগত কিছু হাল্কা চিন্তাভাবনা।

আমার ফেসবুকে বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল লাইক দেয়া আছে। প্রতিদিন সকালে উঠে যখন ফেসবুকে ঢুকি তখন বিভিন্ন দুর্নীতির খবর দেখে বিরক্ত হই। যেমন সম্প্রতি দেখছিলাম বিমানবন্দরে চীনা মাস্ক চুরি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর দুর্নীতি ইত্যাদি। সব ঠিকমত পড়িনা। তাই কোথায় কি ঘটেছে বলতে পারছি না।

বুঝিনা মিডিয়া চুরির পিছনে এতো লেগেছে কেন? তাদের কি আর কোনও কাজ নেই? আমাদের সংস্কৃতিতে চুরি, দুর্নীতি আমরা অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। আগে সুযোগ ছিল কম। এখন বাজেট, উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে। তাই বেশি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি অন্তত হই না।

আমার ধারণা এদেশের আমরা বেশির ভাগই দুর্নীতিবাজ, সুযোগ পেলেই কাজে লাগাই। আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই। কোনও জরুরী কাজে কোনও অফিসে গিয়ে হয়ত দেখি বিশাল লাইন। প্রথমে লাইনের পেছনে দাঁড়াই। পরে দেখি লাইন আর ছোটো হয়না। টাকাপয়সা দিয়ে সবাই লাইনের বাহির থেকে সব কাজ করে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমি হয়ত পিয়নকে পয়সা দিয়ে কাজটা করে নেই। এটা কি দুর্নীতি নয়?

আমাদের সবার ধারণা প্রভাবশালীরা দুর্নীতি করে যার ফলে ভোগ করে খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণ। আমি যখন সিরিয়াসলি লিখি তখন এই থিওরী ব্যবহার করি। কিন্ত এটা কি ঠিক? এই যেমন কয়েকমাস আগে এক জেলা শহরে গেলাম। সেখান থেকে গেলাম গ্রামের এক বাজারে। এক জায়গায় দেখি বেশ সুন্দর ফল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আমার সাথে স্থানীয় একজন লোক। আমি দেখে প্রশংসা করে কিনতে গেলাম। সাথের জন হাহা করে উঠলো। মুখ ভেঙচিয়ে বলল, ওগুলো ঢাকাবাসীর জন্য, ওষুধ দেয়া। এখানকার লোকজন এসব খায়না। তরিতরাকারি সব্জী নিয়েও একই তথ্য দিল। কীটনাশক, ফরমালিন ইত্যাদি ব্যবহার করা জিনিস ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা সেসব খায় না। তাদের জন্য আলাদা জিনিস। তারা বুঝে তাদের কোনটা খেতে হবে।

করোনাকালে বেশি আক্রান্ত হচ্ছি আর মরছি তো আমরা শহুরেরা। আমরা ভাবছি যে আমরা শুধু এতদিন গরীবদের ঠকিয়েছি। কিন্ত গ্রামের লোকজন আমাদের ভেজাল শাকসব্জী, মাছ, মুরগি খাইয়ে যে আমাদের ইমিউনিটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে তা আমরা এ করোনাকালে বুঝছি। মধুর প্রতিশোধ!

বছর দশক আগে বেশ কয়েক লাখ টাকা দিয়ে একটা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কিনলাম। পাশের এলাকার গাড়ীচালক বা ড্রাইভারদের সমিতির সভাপতি আমার পরিচিত। আমি তাকে বললাম ভাই, আমাকে একটা সৎ ড্রাইভার দেন। সে বলল স্যার এটা আপনি কি বললেন? আমার সমিতিতে চারশজন আছে। তবে কেউ সৎ এটা আমার জানা নেই।

এরপর আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেল। একের পর এক ড্রাইভার নিয়োগ দেই আর তারা নানা কান্ড ঘটায়। ‘স্যার এসি গেছেগা, গ্যারেজে লওয়ান লাগবো’। অথচ তার আগের ড্রাইভার নতুন এসি লাগিয়েছে। গ্যারেজে নেয়ার পর সেখানকার লোকজন দেখলাম আমার চেয়ে বেশি ড্রাইভারকে সম্মান করছে। তাকে বসতে চেয়ার দিচ্ছে। লাঞ্চ করাচ্ছে। পরে শুনলাম ব্যাপক কমিশনের আদান প্রদান হয় তাদের মধ্যে। দেখতে দেখতে আমার অনেক টাকা বের হয়ে গেল। শেষে সব ড্রাইভার বাদ দিলাম। ভাবলাম নিজেই ড্রাইভিং শিখি।

ধানমন্ডির এক ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হলাম। বলল, আপনি কয়েকদিন শিখেন লাইসেন্স কোনো ব্যাপার না। আমরা দেখব। খালি টাকা খরচ করবেন। এতসব কিছু শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। না শিখে লাইসেন্স নিয়ে ঢাকার রাস্তায় আমি কি করব? আমিতো রাস্তায় মরবো! শেষে বিশাল লসে গাড়ী বিক্রি করে দিয়ে বাঁচলাম।

কেনাকাটায় দুর্নীতি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এসব খবর দেখে সবাই যে আকাশ থেকে পড়েন সেটা দেখে আমি আবার আকাশ থেকে পড়ি। সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়। টেন্ডার দিলে যাকে কাজ দেয়া হবে তিনি ভুয়া কিছু ফার্মের নামে দরপত্র জমা দেন। তার থেকে তাকেই সিলেক্ট করা হয়। এসব বাঙালীর কাছে ডালভাত।

আমাকে একবার এক প্রতিষ্ঠানে পারচেজিং কমিটিতে রাখা হলো। তখন বয়স কম। এতসব বুঝি না। নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ লোক মনে করলাম। পরে যা বুঝলাম যে আমি গুরুত্বপূর্ণ নই, অফিসে সবচেয়ে বেকুব দেখে আমাকে একজন সদস্য করা হয়েছে। যা কেনাকাটা করার তারাই করেন। আমার খালি সিগনেচার নেয়া হয়। আমার বুঝতে কিছু বাকী রইল না। হাতেপায় ধরে কমিটি থেকে রিজাইন করলাম।

আরেক প্রতিষ্ঠানে ল্যাবের জন্য কি কি যন্ত্রপাতি লাগবে তার একটা তালিকা চাওয়া হলো। আমি সবার কাছ থেকে শুনে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নাম, স্পেসিফিকেশন ইত্যাদি জমা দিলাম। এরপর এডমিন থেকে ক্রমাগত চাপ দেয়া শুরু হলো রিকুইজিশন দেয়ার জন্য। তারা কিনবে। তখনই কিন্ত এতকিছুর দরকার নেই। কিন্ত আমি প্রথমে বুঝছিলাম না তারা এখনি সব কিছু কিনতে চাচ্ছে কেন। পরে বুঝলাম আমার ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করবে, কেনাকাটা করবে। ফাঁসব আমি। তার কিছুদিন পরে চাকরি ছেড়ে বাঁচলাম।

কেনাকাটার দুর্নীতি সব জায়গায়। এমনকি আপনার বাসাতেও । আপনি নিজেও বুঝবেন না। কয়েকবছর আগে বাসা রং করাতে গিয়ে মুরুব্বী ধরণের এক রঙ মিস্ত্রীকে নিয়োগ দিলাম। প্লাস্টিক পেইন্ট ইত্যাদি কিনতে হবে। সেই কিনে তবে একদিন আমি তার সাথে মার্কেটে গেলাম। সেখানে এক দোকানির সাথে পরিচয় হলো। এক সরকারি অফিসারের ছেলে। আমার এক আত্মীয়র ঘনিষ্ঠ। উনি আমাকে যে তথ্য দিলেন তাতে আমি হতভম্ব। সন্ধ্যা হলেই রঙ মিস্ত্রীরা সব দোকানে ভীড় করে কমিশন নিতে। আপনি তার সাথে গিয়ে কেনাকাটা করে আসলেন, অথচ আপনি জানেন না কেনাকাটার এক বড় কমিশন সে পাচ্ছে! উনি জানালেন তিনি কমিশন দেন না। এজন্য তার দোকানে বিক্রি কম।

কয়েক বছর আগে একবার এক সেমিনারে এই দুর্নীতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। সমাজে এলিটদের দুর্নীতি ইত্যাদি। আমি বলছিলাম চুরি, দুর্নীতি আমাদের রক্তে। এলিট ফেলিট কিছু না। একটা উদাহরণ দিলাম। তখন একসময় ঢাকা আরিচা রোডে ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটতো। আমি কয়েকবার পত্রিকায় পড়েছি হয়ত দুইটা বাসের মুখোমুখ সংঘর্ষে লোকজন রক্তাক্ত হয়ে বাসসহ রাস্তার পাশে খাদে পড়েছে। লোকজন আর্তনাদ করছে। এরমধ্যে গ্রামবাসী দৌড়ে এসে সেই রক্তাক্ত আর্তনাদ করা দেহ, কাটা হাত পা থেকে সোনার গয়না, ঘড়ি, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে দৌড় দিচ্ছে। আমার এই বর্ননা শুনে সেমিনার হল নিশ্চুপ হয়ে গেল।

এই দুই চারদিন আগে এক পুরোনো সাংবাদিক ছাত্রের সাথে ফোনে আলাপ করছিলাম। এক ভদ্রলোকের কথা উঠতেই সে বলল স্যার ওতো দূর্নীতিগ্রস্ত। আমি বললাম কি বল? আমি জানি সে অর্থনৈতিকভাবে অনেক সৎ। ছাত্রের উত্তর স্যার দুর্নীতিতো শুধু অর্থনৈতিক হয় না। অনেক রকম হতে পারে।

কথাটা চরম সত্য, কত ধরণের দুর্নীতি করছে সবাই। অফিস পলিটিক্স করে সৎ অফিসারটিকে বিপদে ফেলছে। কাউকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে। একবারও চিন্তা করছে না তার একটা পরিবার আছে। সেখানে শিশুরা আছে। তারপর তো রয়েছে বসদের অনৈতিক সম্পর্ক। যার ফলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাংলাদেশে কোথায় দুর্নীতি নেই? শিক্ষাঙ্গন বলেন, চিকিৎসা বলেn, ব্যবসা বলেন ভর্তি বলেন , নিয়োগ বলেন কয়টি জায়গা দুর্নীতির প্রভাব মুক্ত? শিক্ষাঙ্গনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নিয়ে তো আমরা টিআইবির রিপোর্ট দেখেছি। চিকিৎসায় এতদিন দেখেছি সিজার অপারেশনের ছড়াছড়ি। এখন এই করোনাকালে দেখছি করোনার ভয়ে ডাক্তারদের সিজার অপারেশন নাকি অস্বাভাবিক কমে গিয়েছে।

বছর পাঁচেক আগে আমার আব্বা মারা যাবার কিছুদিন আগে উনার গায়ে একটু সাধারণ চুলকানির মতো হয়। ডায়াবেটিক পেশেন্টদের জন্য এটি খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। উনার ডায়েবেটিস ছিল তাই আমি উনাকে একটা ডায়েবেটিক হাসপাতালে স্কিন স্পেশালিষ্ট এর কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার হাজার হাজার টাকার মলম, ওষুধ দিলেন। আরো অবাক করার ব্যাপার অনেক টেষ্ট দিলেন, তার মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রামও ছিল। আমি হতভম্ব হয়ে ডাক্তারকে বললাম আল্ট্রাসনোগ্রাম কেন? ডাক্তার প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হলেন। বললেন আপনি যদি এতই বুঝেন তাহলে আমার কাছে এসেছেন কেন? আপনি নিজেই চিকিৎসা করেন।

তার সেসব দামী ওষুধে কোনও কাজ হয়নি। অন্যদের কথা শুনে শুধু অলিভ ওয়েল আর গ্লিসারিন ব্যবহার করে আব্বা সুস্থ হয়ে যান। পরে শুনেছি হাসপাতালের কন্সট্রাকশন কাজ চলছিল। তাই রোগীদের উপর এতকিছু চাপানো হচ্ছিল। ডাক্তার আর কি করবেন? তার উপর হয়ত চাপ ছিল।

আপনারা দুর্নীতি দেখে অবাক হবার ভান করবেন না। আমরা সবাই কিন্ত এর সাথে জড়িত বা পরিচিত। উপরে ভাব ধরি। সম্প্রতি আমি ঢাকা ট্রিবিউনে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছি। বাঙালি চরিত্রের এই দিকগুলোও কিন্ত তার জানা ছিল। সম্ভবত তার এক নাটকে বদরুল নামে এক চরিত্র ছিল। চমৎকার আধ্যাত্মিক গান গাইতো সে।

আসমান ভাইঙ্গা জ্যোৎস্না পড়ে
আমার ঘরে জ্যোৎস্না কই
আমার ঘরে এক হাঁটুজল
পানিতে থৈ থৈ

তবে তার কাজ ছিল জমিদারের হয়ে মানুষ খুন করা! আমার কাছে মনে হতো হুমায়ূন আহমেদ বদরুলকে যেন আমাদের মতো বেশিরভাগ বাঙালির প্রতিচ্ছবি হিসেবে রচনা করেছেন। আমাদের চমৎকার আবেগ, কথাবার্তা, গানের গলা কি সুন্দর । কিন্ত সুযোগ পেলেই মানুষের বারোটা বাজাই। সাহেদ, সাবরিনা এদের কথাই চিন্তা করেন। কি সুন্দর তাদের কথাবার্তা।

সাহেদ সাবরিনা আমাদের মধ্যে কম নেই। সুযোগ সুবিধা পেলে আমরা অনেকেই সাহেদ আর সাবরিনা হয়ে উঠবো। আমরা যারা প্রতিনিয়ত সততার বুলি ছাড়ছি আমাদের সততা কি আসলে সুযোগের অভাব? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়