নিজস্ব প্রতিবেদক : [২] শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত শুটিং অঙ্গন। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, জাতীয় রাজষ¦ বোর্ড (এনবিআর) পর্যন্ত যেতে হয়েছে শুটারদের। নানা অভিযোগ রয়েছে ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর বিরুদ্ধে।
[৩] এ নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি। সরকারের যুগ্ম সচিব ও ফেডারেশনের সদস্য হোসনে আরা বেগম, পুলিশের প্রথম মহিলা ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর ও ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত রিপোর্টও দিয়েছে, যেখানে ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর বিরুদ্ধে অসংখ্য অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
[৪] ৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে দেখা যায়, নির্বাহী কমিটির বৈঠক ছাড়া এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেডারেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অপু। যে কারণে দেশের শুটিং মারাত্বক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কমিটির তদন্তে জানা যায়, অস্ত্র ও গুলি আমদানী করতে গিয়ে নির্বাহী কমিটিকে না জানিয়ে দেশের বিভিন্ন রাইফেল ক্লাব ও শুটিং ক্লাব থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন অপু।
[৫] কিন্তু টাকা ব্যয় করেছেন অন্য খাতে। গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাধ্যমে কাগজপত্র বিহীন অস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে। মহাসচিবের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডেলকো বিজনেস এসোসিয়েটসের মাধ্যমে ১০ মিটার রেঞ্জের আধুনিকায়নে ১০টি ইলেক্ট্রনিক্স টার্গেট চেঞ্জার ক্রয়ে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্তে জানা যায়। কেননা, শুটিং ফেডারেশনে বসানো প্রতিটি চেঞ্জারের মূল্য দেখানো হয়েছে ২৬ লাখ টাকা।
[৬] যেখানে একই চেঞ্জার সেনাবাহিনী বসিয়েছে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকায়। বিদেশ থেকে অনুমতি বিহীন ম্যাচ অস্ত্র ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করায় ফেডারেশনের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কারণ ক্লাবকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করতে হবে, অস্ত্র আমদানী করলে ফেডারেশন লাভবান হতো। বেশ কয়েকজন জাতীয় শুটারের বিপক্ষে সরকারি নিয়ম বরখেলাপ করে শুল্ক কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে দেশের ফেরার পথে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সাথে নতুন অস্ত্র ক্রয় করে দেশে এনেছে।
[৭] তদন্ত রিপোর্টে ফেডারেশন মহাসচিবকে দায়ী করে বলা হয়েছে, শুটিং দলের সাথে আনা এসব অস্ত্র দেশে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। এই সকল অস্ত্রের কয়েকজন ক্রেতা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানান। ২০১৭ সালের মে মাসে জার্মানিতে বিশ্বকাপ শেষে ফেরার পথে চারটি ওয়ালথার এয়ার রাইফেল শুটিং দলের সাথে বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে দেশে নিয়ে আসা হয়। বিগত কয়েক বছরে ফেডারেশনের যাবতীয় ঠিকাদারী, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পুরাতন এসি লাগিয়ে নতুন এসির মূল্য নেওয়া সহফেসবুক পরিচালনায় ২৫ লাখ টাকা তোলা হয়েছে বলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়।
[৮] প্রশিক্ষণ কমিটির আপত্তি থাকা স্বত্বেও রহস্যজনক কারণে বারবার জার্মানিতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে শুটারদের। নির্বাহী কমিটির অনুমোদন না নিয়ে এশিয়ান শুটিং কনফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রার্থীতা দাখিল করেছেন। আবার নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে এপিএ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম করেনি বলেও অভিযোগ করা হয়।
[৯] এবিষয়ে মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
[১০] সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, অভিযোগে তদন্ত তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অনুসন্ধানে কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ফেডারেশনের কাছে নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :