কামরুল হাসান মামুন: সেবা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন, সেটা হোক শিক্ষকতার চাকরি, প্রশাসনিক, কোনো টেকনিক্যাল অথবা নন-টেকনিক্যাল চাকরি। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা হয়ে মানুষ যখন অসৎ দুর্নীতিবাজ হয় তখন সেটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। দেশ রূপান্তর পত্রিকায় একটি সংবাদ পড়ে আমি একদম থ বনে গেলাম। ভাবছিলাম এটা কী করে সম্ভব। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার কী করে একটি কোম্পানির কর্ণধার হন এবং কর্ণধার হয়ে এই করোনা প্যান্ডেমিক সময়ে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোম্পানি থেকে নকল মাস্ক সরবরাহ করেন। এইটা তখনই সম্ভব যখন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গলদ থাকে। আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি রাজনৈতিক কারণে শিক্ষকতায় কিংবা প্রশাসনে যেই নিয়োগই দেওয়া হয়। অর্থাৎ যেই দলই যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন ছাত্র সংগঠনের নেতানেত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয় বা হয়েছে। এই সুবাদে যারা চাকরি পায় তাদের একটা আলগা ভাব থাকে। তাদের সকলেই একটু সমীহ করে চলে এমনকি ভিসি স্বয়ং।
তারা প্রমোশন ছুটি ইত্যাদি চাওয়ার আগেই পেয়ে যান। আলোচ্য ক্ষেত্রে ঠিক তাই ঘটেছে। শারমিন নামের যেই সহকারী রেজিস্ট্রারের কথা রিপোর্টে এসেছে সে এক বছরের ছুটিতে আছে। কী কারণে ছুটি পেয়েছে জানি না। যেই কারণেই পাক না কেন, সেই কারণ যে জেনুইন না তাতো এখন বোঝাই যাচ্ছে। এই করোনার এই সময়ে ফুলটাইম ব্যবসা করার জন্যই হয়তো ছুটি নিয়েছে। সে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সাপ্লাই দিয়েছে। এইসব অযোগ্যরা যখন তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরি বাগিয়ে নেন তারাই প্রতিষ্ঠানের মান মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেন। কারণ তারা মান মর্যাদার কোনো তোয়াক্কা করতে কখনো শিখেনি। এখন দেখা উচিত কার আমলে কে এই নিয়োগ দিয়েছে। তিনিই দায়ী এই অন্যায়ের। আর শারমিনকে ইমেডিয়েটলি চাকরিচ্যুত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা উচিত। উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা অক্সফোর্ড কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যার চেয়েও বেশি।
কিন্তু ওদের রেজিস্ট্রার ভবনে গিয়ে দেখুন তো কতোজন কর্মকর্তা আছে? আমাদের ১০ ভাগের এক ভাগও না। অর্থাৎ ১০ গুণ বেশি কর্মকর্তা কর্মচারি আছে আমাদের রেজিস্ট্রার ভবনে। অথচ ১০০ ভাগের ১ গুণ কাজও হয় না। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে ভোগান্তি পোহান এই রেজিস্ট্রার ভবনে। রেজিস্ট্রার ভবনে একটি কন্ট্রোলার সেকশন আছে যাদের মূল কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা। অথচ পরীক্ষার ফল বিন্যাসের মতো একটি ক্লেরিক্যাল কাজ শিক্ষকদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে করতে হয়। কারণ তাদের বিশ্বাস করা যায় না। ছাত্রছাত্রীরা বিদেশ যাওয়ার সময় ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে হয় সেটাও দিনের পর দিন ঘুরে করতে হয়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলি অথচ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন হলো সবচেয়ে নন-ডিজিটালাইজড। অথচ এটাই সবচেয়ে আগে হওয়ার কথা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :