শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৩ জুলাই, ২০২০, ০২:২০ রাত
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০২০, ০২:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : সুনামগঞ্জে বন্যার্ত ও বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও ত্রাণ

দীপক চৌধুরী : বন্যার ভয়াবহতা মানুষকে কী রকম বিপদে ফেলেছে তা বলার নয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি সত্যিকার অর্থেই মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ায়- তখন ভয়ঙ্কর অসহায়ত্ব ও কষ্টের সৃষ্টি হয়। চলমান করোনা মহামারি আরও কত দীর্ঘস্থায়ী হবে, একথা বলা মুশকিল। কোভিড-১৯-এর দুশ্চিন্তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এবার একটি দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বন্যায় দেশের বিভিন্ন জলা প্লাবিত হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে আরও ব্যাপক এলাকাজুড়ে। আগামীতে দেশের অন্তত ১৩টি জেলা বন্যার কবলে পড়বে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ইতিমধ্যে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে সতর্ক করা হয়েছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিচু অংশগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে কঠিন দুর্ভোগ নেমে আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, সামনের দিনগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বন্যার ধরন ১৯৯৮ সালের বন্যার মতো দীর্ঘস্থায়ী।

সেই বন্যা ৩৩ দিন স্থায়ী হয়েছিল, দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। যদিও বিবিসি থেকে বলা হয়েছিল, মহামারি হবে, কয়েক কোটি মানুষ মারা যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ওই আশঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন। তবে এবারের বন্যা সে রকম দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কথা না। মনে রাখা প্রয়োজন, বন্যার্তদের কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে একবার কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হলে তা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার প্রকট আশঙ্কা থাকবে। সুতরাং স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষসহ বন্যা মোকাবিলায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। বন্যা ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা।

সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতিকে অন্যতম গুরুত্ব দিয়ে উচ্চপর্যায় থেকে মনিটর করা হচ্ছে। ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৫ জুন। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার দ্বিতীয় দফা বন্যার শুরু হয় ১০ জুলাই থেকে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, এ জেলায় কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় এক মাস ধরে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জেলার সবকটি উপজেলা ও পৌরসভা আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।জেলা শহরের সঙ্গে চারটি উপজেলার যাগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উজানে বৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে। এতে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কিছু কিছু অঞ্চলে মানুষজন আবার ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। কিছুদিন আগে নৌকাযোগে দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়ন ও পৌর সদরে বন্যায় আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন এবং বানভাসি মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অনুদানের চাল বিতরণ করা হয়েছে। দোয়ারাবাজারসহ বিভিন্ন উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ত্রাণ বিতরণ করেন মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা সহায়তা পেয়ে আনন্দিত হাওর পাড়ের শিক্ষক-কর্মচারীরাও। জেলায় বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষ ভীষণ খুশি- তেমিন তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষ অর্থাৎ হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার ঘটনা একসময় এখানে বিরল ছিল। বন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত ক্ষতিগ্রস্তরা রান্না করা টাটকা ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হয়েছে ত্রাণ, ঘরের চালার জন্য ঢেউটিন। ত্রাণ দিয়ে কখনো পানিবন্দি মানুষদের মধ্যে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ নিরন্তর পরিশ্রমী। ধৈর্য ধরে পানিবন্দি মানুষের কষ্টের কথা শোনা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও জেলার সর্বত্র নজর রাখার কারণে তিনি ভাটিঅঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। জেলার প্রতিটি জনপদ ও স্পর্শকাতর স্থান তার মুখস্থ। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা পাশে দাঁড়ালে আভাবি ও অসহায় মানুষ সাহস পায়, নির্ভরতা জাগে তাদের প্রাণে। এ কারণে কষ্ট অর্ধেক লাঘব হয়ে যায় দুঃখী মানুষের।
যাঁদের ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়েছে, তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে হবে। শুধু সুনামগঞ্জের ক্ষত্রিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কথাই বলছি না, দেশের কিছু জেলায় উঁচু বাঁধে জড়ো হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। তাঁদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি প্রথম চাহিদা।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ এখন বরাদ্দ আরও অনেক গুণ বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, খাবারের বদলে নগদ টাকা বিতরণ করা উচিত, যাতে বন্যার্তরা নিজেরাই খাবার কিনতে পারেন। এতে চাল বিতরণের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নৌকা ও অন্যান্য যানবাহনের খরচ বন্যার্তদের পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব। অবশ্য অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশুদ্ধ পানির জন্য বাঁধ ও অন্যান্য আশ্রয়স্থলে টিউবওয়েল বসাতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়ানোর জন্য হাত ধোয়ার সাবান ও গামছা (মাস্কের কাজও করবে) সরবরাহ করতে হবে। বন্যার্তদের গবাদিপশু রক্ষা করতে হবে।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়