গুলজার হোসেন উজ্জল: হিরো আলমকে দেখে আপনারা যে আনন্দটা পান সেটা বিনোদন নয়, বিকৃতি। কারণ আপনি তার দক্ষতায় মুগ্ধ হন না, আপনি তার ব্যর্থতায় আনন্দ পান। এটা একধরণের বিকৃত বিনোদন। কারও ‘হতে না পারা’ দেখে, ব্যর্থ চেষ্টা দেখে আনন্দ পাওয়া। আপনি তার অভিনয়ে মজা পান না, আপনি তার ‘না হওয়া অভিনয়’টা দেখে মজা নেন। আপনার এই মধ্যবিত্তসুলভ ভন্ডামির পেছনে আছে নিজের ব্যর্থতার প্রতিশোধ। আপনি নিজে কিছু পারেন না। কিন্তু ভান করেন চাইলেই পারতেন। আপনার কোনো সংগ্রাম নেই, কিন্তু ভান করেন আপনি বিপ্লবী।
আপনি শ্রেণিবৈষম্য টিকিয়ে রাখছেন, পিষ্টও হচ্ছেন, কিন্তু হিরো আলমকে হিরো বানিয়ে ভান করছেন আপনি শ্রেণি সংগ্রামী। আপনার শিল্প সৃষ্টির ক্ষমতা নেই। তাই অনাসৃষ্টি নিয়ে মজা লুটেন। সেটা ঢাকতে আবার ভান করেন একটা সংগ্রামী ছেলেকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। এই ভন্ড মধ্যবিত্ত ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিমদের নিয়েও ট্রল করে। নিজেরা কিছু পারে না, ট্রলেই তার মুক্তি, তাচ্ছিল্যেই তার একমাত্র ধ্যান জ্ঞান, ক্রিয়েটিভিটি। হিরো আলম তাকে সে সুযোগ করে দেয়। ফাও হিসেবে দেয় সংগ্রামী জীবনের এক চিমটি উস্কানি। এই জাতি অন্তরে পাপবোধ নিয়ে শিল্প উপভোগ করে।
তাই দিন শেষে অসুখী। অভিনয় শিল্পে শিল্প না খুঁজে খোঁজে সিউডো স্ট্রাগলের উপাদান। কারণ বাস্তব জীবনে তার স্ট্রাগলে অনীহা। এই জটিল মধ্যবিত্তের শিল্পবোধ থাকলে এদেশে সিনেমা বেঁচে যেতো। শিল্পকলা বেঁচে যেতো। নায়কোচিত চেহারা না থাকলেও যে নায়ক হওয়া যায় তার উদাহরণ এই বাংলাদেশেই ছিল। হুমায়ুন ফরিদী, জহির উদ্দিন পিয়ার, ফজলুর রহমান বাবু, জসিম কিংবা হালের মোশাররফ করিম। এটা বোঝানোর জন্য হিরো আলম লাগে না। শুধু এই বোধটুকু থাকা জরুরি যে, অভিনয় কলায়, অভিনয় দক্ষতাটুকু লাগবেই।
বাঙালি মধ্যবিত্ত এইসব কলাফলাকে কেয়ার করে না। নিজের হিরোদেরই অপমান তাচ্ছিল্য করে এসেছে এতকাল। এখন হিরো আলমকে মাথায় তুলে তার ছিদ্র ঢাকছে। এ এক জটিল মনস্তত্ত্ব। গভীর গবেষণার বিষয়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :