ডেস্ক রিপোর্ট : বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার বৃষ্টি বুঝি একটু নির্দয়ভাবেই ঝরছে। একদিকে উজান থেকে আসা বন্যা, অন্যদিকে উজান-ভাটিতে সমানতালে তুমুল বৃষ্টি। বাংলাদেশ তো বটেই, ভারত-নেপাল থেকে চীন পর্যন্ত এই বৃষ্টির দাপট শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, তুমুল বৃষ্টি আরও দুই দিন হতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রথম আলো
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরে বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হচ্ছে। গত মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। জুনে তা একটু কমলেও স্বাভাবিকের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি ছিল। আর জুলাই মাস এখনো শেষ না হলেও এ পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
এই বাড়তি বৃষ্টি মে-জুন মাসে ফসলের জন্য শক্তি জুগিয়েছে, এবার প্রায় সব ফসলেরই বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসের বাড়তি বৃষ্টি বন্যার তীব্রতাকেই শুধু বাড়াচ্ছে না, একই সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ তৈরি করছে। আবার মাঠে থাকা সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সাধারণত দুই থেকে তিন বছর পরপর মৌসুমি বায়ু অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন বৃষ্টি বেশি হয়। এ বছরটা সেই শক্তিশালী মৌসুমি বায়ুর মধ্যে পড়েছে। মৌসুমি বায়ু ভারত ও বাংলাদেশে প্রবেশ করে সাধারণত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর দিয়ে। আরব সাগরের বায়ু ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্র দিয়ে প্রবেশ করে মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বৃষ্টি ঝরায়। আর বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের টেকনাফ, ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের আরাকান উপকূল দিয়ে প্রবেশ করে। সাধারণত মৌসুমি বায়ুর এই দুটি ধারা একসঙ্গে শক্তিশালী হয় না, সংযুক্তও হয় না। যে বছর তা ঘটে, সেই বছর বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ পুরো অঞ্চলে টানা বৃষ্টি ও বন্যা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আরব সাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু ভারতের গুজরাট থেকে আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। একই সময়ে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ুও বেশ শক্তিশালী অবস্থায় আছে। এ কারণে এবারের বৃষ্টি ও বন্যাটা প্রকোপ একটু বেশি হবে।
বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-নেপাল ও চীনের বৃষ্টির বড় অংশ ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে বন্যার পানি ৯৩ শতাংশ উৎস হচ্ছে ওই উজানের বৃষ্টির ঢল। বাংলাদেশের ভেতরের বৃষ্টি বন্যায় মাত্র ৭ শতাংশ পানির জোগান দেয়। আর এই পুরো অঞ্চলের বৃষ্টির পানি বঙ্গোপসাগরে নামার সবচেয়ে বড় পথ হচ্ছে বাংলাদেশ। এবার মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হওয়ায় এবং বৃষ্টি বেশি হওয়ায় নদ-নদীগুলো আগে থেকেই পানিতে পরিপূর্ণ ছিল। এক মাস ধরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টির ফলে তা বন্যায় রূপ নিয়েছে।
গতকাল দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ৮০ থেকে ১২২ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিরাজগঞ্জে, ১২২ মিলিমিটার। রাজধানীতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৮৭ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল দুপুর পর্যন্ত যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এতে নগরবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
আপনার মতামত লিখুন :