অরণি সেমন্তি খান: জেকেজি গ্রুপের কেলেঙ্কারিতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেনÑ এমন তথ্য তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুজন ডিরেক্টর, আর মন্ত্রণালয়ের দুজন অতিরিক্ত সচিব জড়িত ছিলেন এর সঙ্গে, এটা জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা এবং সিইও আরিফ দুজনই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। একদিকে আমরা দেখছি নির্বাচিত (!) মন্ত্রীদের হাতে সাইন হয় কুকীর্তির সনদ, সেখানে আবার ধরা পড়ে মন্ত্রী দায় চাপান এর ওর ঘাড়ে। মন্ত্রী, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ বেশ কজন কর্মকর্তা সবার নাম প্রকাশ হয়ে পড়লো এক কেলেঙ্কারিতেই।
এরকম আরো কতো কতো সাবরিনা আরিফকে ধরলে, আরও কতো থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে, তা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি মাথায় নিয়ে করোনাকালে ধুঁকছে যে স্বাস্থ্যখাত, এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে রোগীদের, দেশের আমজনতা মানুষদের। ভুয়া করোনার সার্টিফিকেটের কেলেঙ্কারি জানাজানি হওয়ার পরে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে যে, এর দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সকলকেই। কিন্তু দায় নিয়েও বা কী? বিচারহীনতার এ দেশে কিছুই হবে না, অন্যদিকে ক্ষতির স্তূপ জমে পাহাড় হতে থাকবে।
এখানে ক্ষমতাশালীরা যেমন একদিকে চার্টার্ড প্লেনে উড়ে যান পছন্দের দেশে, সেখানে অন্যদিকে এদেশের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য, জনগণের জন্য। প্রথমে আইইডিসিআর কে দিয়ে টেস্ট কুক্ষীগত করে রাখা হল, তারপরে যখন টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হলো, তখনো ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট দিয়ে কি নেগেটিভের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখার বন্দোবস্তই করা হলো? এর জবাব সময়ই বলে দেবে। কিন্তু একটি ব্যাপার জলের মতো পরিষ্কার- তা হচ্ছে, করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি না থাকলেও এই সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রস্তুতি ভালোই ছিলো। এক দুজন সাহেদকে ধরে এর ভিত্তি নড়ানো যাবে না, একটা দেশের স্বাস্থ্যখাতকে পঙ্গু করে রাখার মতো এদের এতো অপরিসীম ক্ষমতার উৎস কোথায়, সেটার গোড়ায় যেতে হবে। কিন্তু দিনশেষে তার কিছুই হয়তো হবে না। ধুঁকে ধুঁকে শ্বাসকষ্টে আর অন্য নানান রোগে মরতে থাকবে আপনার আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন। হাসপাতালগুলো অক্ষমতা প্রকাশ করবে তাদের চিকিৎসা করতে, কারণ তাদের সেই অবকাঠামো নেই। এদেশে সব ‘উন্নয়ন’ গিলে খায় দুর্নীতিবাজেরা, রাক্ষসেরা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :