শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১১:২০ দুপুর
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১১:২০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোরশেদ শফিউল হাসান: দলকানা বা নেতৃত্বের স্তাবক বুদ্ধিজীবী ছিলেন না ড. এমাজউদ্দীন আহমদ

মোরশেদ শফিউল হাসান: দেশের বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, রাজনীতি বিশ্লেষক ও চিন্তক, ছাত্রপ্রিয় অধ্যাপক ড.এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক এবং তার স্মৃৃতির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি তার সরাসরি ছাত্র ছিলাম না, তার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন আহমদ ছফা। ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে ছফা ভাইয়ের উদ্যোগে ‘উত্তরণ’ পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার সময় আমি সে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। গোড়ায় ড. এমাজউদ্দীন ছিলেন সে পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলী কিংবা পরিচালনা পরিষদের (সঠিক মনে নেই) সভাপতি। সেই সুবাদে এবং আরও কিছু কার্যোপলক্ষ্যে অল্প সময়ের জন্য তার কাছাকাছি যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সে সময় তার সৌজন্যবোধ ও পরিশীলিত মনের পরিচয় পেয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি থেকে আমার ‘বেগম রোকেয়া, সময় ও সাহিত্য’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর সম্ভবত ছফা ভাই তাকে একটি বই উপহার দিয়েছিলেন। তার মতো একজন কর্মব্যস্তÍ মানুষের আমার সে বই পড়ে দেখার সুযোগ আদৌ কখনো হয়েছিল কিনা জানি না । তবে সাক্ষাতে তিনি আমি যে রোকেয়া বিষয়ে বই লিখেছি অন্তত সেজন্য আমাকে দারুণভাবে অভিনন্দিত করেছিলেন।

এমনকি বইটির কথা তিনি মনেও রেখেছিলেন অনেকদিন । কারণ ১৯৯০ এর দশকে (সালটা মনে নেই) একবার বাংলা একাডেমির রোকেয়া দিবসের আলোচনা সভায় আমি মূল প্রবন্ধ পড়ার পর সভাপতি বা প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি আমার বইটির কথা উল্লেখ করেছিলেন। মাঝে ১৯৮৬ সালে আমার সম্পাদনায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত 'আন্তর্জাতিক সমস্যা ও বিশ্বরাজনীতি’ বইটির ১ম সংস্করণের (বর্তমানে দুস্প্রাপ্য) ভূমিকাও লিখেছিলেন তিনি। সে সময় প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক ভূমিকাটি লেখার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানতে চেয়েছিলেন ‘এ কি রোকেয়া নিয়ে যে গবেষণা করেছে সেই মোরশেদ? ’ তখন অবধি আমাকে গবেষক হিসেবে কেউ চেনে না। ফলে তাঁর এই উল্লেখে আমি খুশি হয়েছিলাম, বলা বাহুল্য । তার সঙ্গে আমার স্মৃতি বলতে এইটুকু। এর বাইরে তিনি যখন কবি জসিমউদ্দীন হলের প্রভোস্ট তখন ছফা ভাইসহ ‘উত্তরণ’-এর আমাদের কয়েকজনকে একদিন তাঁর বাসভবনে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করেছিলেন মনে আছে। সেদিনও খাবার টেবিলে আমাদের মতো ছাত্রস্থানীয়দের প্রতি তার মনোযোগ ও সযত্ন ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছিল । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তিনি একটি বিশেষ ধারার অনুসারী ছিলেন।

আর তা কোনো গোপন বিষয়ও ছিল না। দলীয় পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সমর্থক বুদ্ধিজীবী বা তাদের থিংক ট্যাংকের শীর্ষে ছিল তাঁর অবস্থান । ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য । কিন্তু অন্য অনেকের মতো দলান্ধ বা নেতৃত্বের স্তাবক বুদ্ধিজীবী তাঁকে আমার কখনো মনে হয়নি। সংবাদপত্রে লেখা তাঁর কলাম পড়ে কিংবা টিভি সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি যে সর্বোপরি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, একাডেমিশিয়ান, এই পরিচয়টিকে তিনি মনে রাখতে চেষ্টা করেছেন। নিজের এই মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থেকেছেন। এখানে আমাদের দেশের উভয় ধারারই অনেক তথাকথিত পন্ডিত বা বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে তাঁর সুস্পষ্ট অবস্থানগত পার্থক্য আমি লক্ষ্য করেছি। তাঁর লেখা ও বক্তব্যের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতা, যুক্তি এবং সহনশীলতার অভাব কমই দেখা গেছে। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে সমর্থন-অসমর্থনের দিক থেকে তাঁর অবস্থান যাই হোক, মত-মন্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি সব সময় একটা ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। এমনকি তিনি যখন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য তখনও শুনেছি, তাঁর আগের ও পরের অনেক উপাচার্যের মতো দলীয় ক্যাডার নয়, নিজের শিক্ষক পরিচয়টিকেই সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন।

বিদ্যমান বাস্তবতায় যতটুকু সম্ভব ক্যাম্পাসে দলমত নির্বিশেষে সকল ছাত্রের প্রতি সমদর্শী আচরণের চেষ্টাও নাকি করতেন। এই ব্যক্তিত্ব সচেতনতা এবং আত্মমর্যাদাবোধের কারণেই হয়তো শেষ পর্যায়ে এসে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপি সরকারের কাছ থেকে যে সম্মান বা দলের প্রতি তাঁর অবদানের যে-স্বীকৃতি পাবেন বলে অনেকে ভেবেছিলেন, এবং তিনি নিজেও মনে হয় আশা করেছিলেন, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আসলে এদেশে দলমত নির্বিশেষে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা পন্ডিত বা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আসলে যা খোঁজেন তা হলো চাটুকার বা স্তাবক । ড.এমাজউদ্দীন আহমদ বোধহয় সে ব্যাপারে পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। তার মৃত্যুতে সে কথাটা মনে করেই আমরা তাকে স্মরণ করবো, বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাবো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়