শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচিতে নয়ছয়, জালিয়াতি ও অনিয়ম!

আরিফুল ইসলাম : [২] সরকারের নগদ সহায়তা কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায়। এ কর্মসূচির আওতায় অনেক 'অযোগ্য লোক' সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালে ৫০ লাখ কর্মহীন গরিব পরিবারের জন্য এককালীন নগদ দুই হাজার পাঁচশ' টাকা করে বিতরণের এ কর্মসূচিতে এখানে একই পরিবারের স্বামী ও স্ত্রীসহ একাধিক সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এ অর্থ সহায়তা পাইয়ে দিতে কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা স্বচ্ছল ব্যক্তিদের পেশায় কুলি, মজুর, নরসিন্দুর, ভাসমান ও শ্রমিক দেখিয়েছে তালিকায়। ভুল ও নানা অসঙ্গতিতে ভরা ওই তালিকায় একই ব্যক্তি অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পান। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তৈরি করা ওই তালিকায় ঢুকে পড়েছে বিত্তশালী, স্বচ্ছল ব্যবসায়ী, বড় কৃষক, গ্রাম্য সার্ভেয়ার (আমিন), ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই-ভাতিজা ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নিকটাত্মীয়, গ্রামের ইউপি সদস্যদের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা। এভাবে গরিবের টাকা মেরে খাওয়ার নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয় এতে।

[৩] গত দুইদিন এক অনুসন্ধানে এ অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তালিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

[৪] সরাইল প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ দফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত হাজার মানুষের তথ্যে গরমিল ধরা পড়েছে। সূত্রে প্রকাশ, নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য তালিকাটি করেছে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এখন তারা কীভাবে এটি করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রটি বলছে, এতে কিছু অনিয়ম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের গরমিল রয়েছে। সে জন্য কিছু ইউনিয়নের তালিকা সংশোধন করা হচ্ছে।

[৫] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সহায়তা করতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা গত ১৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশের ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা বিতরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এতে সরকারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।

[৬] এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলের অনেকে বলেছেন, খাদ্য বিতরণের নানা অনিয়মের ঘটনা অনেক ঘটেছে। কিন্তু নগদ টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও যে এমন হবে তা ভাবা যায় না। তারা আরও বলেন, সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই টাকা জনগণের করের টাকা। এখানে স্বচ্ছতা আনা জরুরি।

[৭] অর্থ বিতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেখা যায়, এখানকার বেশিরভাগ ইউনিয়নের তালিকাতে ত্রুটিপূর্ণ ও নানা অসঙ্গতি রয়েছে। অর্থাৎ যারা টাকা পাওয়ার যোগ্য তাদের বদলে তালিকায় ঢুকে পড়েছে তুলনামূলক সচ্ছল ব্যক্তিরা। অথচ এ টাকা পাওয়ার কথা রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক। এ ছাড়া বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশায় যুক্ত গরিব মানুষের এই টাকা পাওয়ার কথা।

[৮] অতিসম্প্রতি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের করা তালিকা নিয়ে অনিয়ম, জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নেয়ায় ফুঁসে ওঠেছে এলাকাবাসী। গত ১৬ জুলাই সুবিধা বঞ্চিত কিছু মানুষ এই তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগকারীরা এই অনিয়মের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীকে দায়ী করেছেন। তিনি তার ভাই, ভাতিজা, ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাগিনাসহ অর্ধশতাধিক স্বচ্ছল ব্যক্তিকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তবে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী দাবি করেছেন, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই তিনি তার বংশের গরীব আত্মীয় স্বজনকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

[৯] এদিকে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তালিকায় তেরকান্দা, কুচনি, বুড্ডা ও কাটানিশা এলাকায় ওয়ার্ডগুলোতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম করার প্রমাণ মিলেছে তাদের করা তালিকাতেই। তালিকা ঘেঁটে দেখা যায় তেরকান্দা গ্রামের মেম্বার ও মহিলা মেম্বার তাদের সন্তানদের নামসহ পরিবার ও স্বজনদের নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কাটানিশা ও বুড্ডা এলাকার তালিকায়ও এ অবস্থা দেখা গেছে।

[১০] অপরদিকে উপজেলার পাকশিমুল, শাহবাজপুর, অরুয়াইল ও শাহাজাদাপুর ইউনিয়নের করা তালিকাতেও অনিয়ম-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে অনলাইনে প্রকাশিত তালিকা ঘেঁটে ও স্থানীয় লোকদের দেয়া তথ্যমতে। আর এই তালিকায় এখানে এতবড় অনিয়ম হলেও প্রশাসনের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কর্তাবাবুরা রহস্যজনক কারণে গা'ভাসা দিয়ে যার যার মতো করে নীরবে বসে আছেন। এসব অনিয়মের ব্যাপারে আগে থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি তুললেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কেউই বিষয়টি আমলে নেননি। দেরিতে হলেও এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে এ তদন্তের ভবিষ্যত অগ্রগতি ও কার্যত ব্যবস্থা কতটুকু এগোবে তা দেখার অপেক্ষায় আছে এলাকাবাসী, এমন দাবি স্থানীয় সুশীল সমাজের অনেকের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়