শিরোনাম
◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার

প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২০, ০৩:৪০ রাত
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০২০, ০৩:৪০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সবার সাথে হাসি মুখে আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলতেন নবীজি সা.

ইসমাঈল আযহার: [২] আমরা অনেকভাবেই একে অন্যের মুখোমুখি হই। নিজের প্রয়োজন নিয়ে অন্যের কাছে যাই। আবার অন্যের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যেও তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। কখনো সাক্ষাতের পেছনে থাকে লেনদেন বা এজাতীয় কোনো বিষয়। নিরেট সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যেও আমরা একে অন্যের কাছে যাই। সমাজের স্বাভাবিক বাস্তবতায় এগুলোর কোনোটিকেই অস্বীকার কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আমাদের উচিৎ হাসি মুখে কথা বলা। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলা রাসুল সা. এর সুন্নাত। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক প্রিয় সাহাবী হযরত আবু যর রা.-কে বলেছিলেন- কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার বিষয়ও হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬২৬

[৪] পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা, মুখ ভার করে গোমড়ামুখে না থাকা-এগুলো ভদ্রতা, সামাজিকতা ও মানবিকতার দাবি। তবে আমাদের জন্যে তা এখানেই শেষ নয়। কাজটি সওয়াবের এবং পরকালে তা আমাদের মুক্তির অবলম্বনও হতে পারে। সাধারণ দৃষ্টিতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কিন্তু কারও আচরণে যখন কেউ আঘাত পায়, কাক্সিক্ষত স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক আচরণ না পেয়ে হতাশ হয়, তখন অনুভূত হয় এর অপরিহার্যতা।

[৫] পরকালীন হিসাব-নিকাশে যার বিশ্বাস আছে, হাশরের ময়দানের আদালতে উপস্থিত হওয়ার ভয় যার মনে আছে, সে যেমন বাহ্যত ছোট কোনো মন্দ কাজে সাগ্রহে জড়াতে পারে না, তেমনি ক্ষুদ্র কোনো ভালো কাজও অবহেলায় ছেড়ে দিতে পারে না। যে আমলনামা সামনে রেখে ঐদিন বিচার হবে, তা তো এমন- ছোট-বড় কোনো কিছুই তা ছেড়ে দেয় না, সবই হিসাব করে রেখেছে। -সূরা কাহাফ

[৬] নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদেরকে এ উপদেশই দিচ্ছেন-কোনো ভালো কাজকেই ছোট মনে করবে না, তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিক সৌজন্য রক্ষা করার মতো বিষয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা কর।

[৭] হাসিমুখে পারস্পরিক সাক্ষাৎ এমনই একটি বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন এ বিষয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছেন, তেমনি নিজেও ছিলেন এর এক সার্থক দৃষ্টান্ত। তাঁর এক প্রিয় সাহাবীর নাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস রা.। তিনি বলেছেন, মুচকি হাসিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অগ্রগামী কাউকে আমি দেখিনি। -শামায়েলে তিরমিযী, হাদীস ২২৭

[৮] হাসিমুখে সাক্ষাতের গুরুত্ব বেশ পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে তাবেয়ী হযরত মায়মুন ইবনে মিহরানের এক বক্তব্যে। তিনি বলেছেন- যখন তোমার বাড়িতে কোনো অতিথি আসে তখন তার আতিথেয়তায় তোমার সাধ্যের বাইরে কিছু করতে যেয়ো না। তোমার পরিবারের সদস্যদের যা খাওয়াবে, তাকে সেখান থেকেই খেতে দাও। আর তার সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করো। তুমি যদি তোমার সাধ্যের বাইরে তার জন্যে কিছু করতে যাও তাহলে হতে পারে তুমি (তোমার অজান্তেই) তার সঙ্গে এমন আচরণ করবে, যা তার কাছে অপ্রীতিকর মনে হবে। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী,

[৯] ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যে কীভাবে মুসলমানদেরকে মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে আকাশের উচ্চতায়, এর প্রমাণও আমাদের চোখের সামনেই। ইসলামের আগমনের পর মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে তারা জয় করে নিয়েছিলেন অর্ধপৃথিবী। যারা পৃথিবীজুড়ে পরিচিত ছিলেন বর্বর, অসভ্য আর হিংস্র জাতি হিসেবে, দিকে দিকে তারাই এবার ছড়িয়ে দিলেন শান্তির বাণী। এ তো দুনিয়ার ইতিহাস। পরকালেও যে কতটা আলো ছড়াবে মুমিনদের এই ভ্রাতৃত্ব তার নমুনা লক্ষ করুন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণী থেকেই- কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার জন্যে যারা একে অন্যকে ভালোবেসেছিল, তারা কোথায়? আমি আজ তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, আজকের এই দিনে আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই। -সহীহ মুসলিম

[১০] পারস্পরিক এই যে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্বের এই যে বন্ধন, তা অর্জন করার জন্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাদীসে দুটি পদ্ধতির কথা বলেছেন- সালাম ও উপহার প্রদান। আরও কোনো পথও বেরিয়ে আসতে পারে এ বন্ধন সৃষ্টির। কিন্তু যে পদ্ধতির কথাই বলি না কেন, তা প্রয়োগে সফল হতে হলে প্রধান শর্ত হচ্ছে- হাসিমুখে সাক্ষাৎ। এর কোনো বিকল্প নেই। সালাম এবং উপহারের আদানপ্রদান সাধারণত হাসিমুখেই হয়ে থাকে। কেউ যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়ায় তখনো তাদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। এই আন্তরিকতাকে টিকিয়ে রাখতে হলেও হাসিমুখের এ সাক্ষাৎ অপরিহার্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়