লন্ডন থেকে সাইদুল ইসলামঃ [২] যুক্তরাজ্য সরকার গত ৫জুলাই 'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক অবরোধ বিধিমালা ২০২০ (গ্লোবাল হিউম্যান রাইটস স্যাঙ্কশন রেগুলেশনস্ ) প্রকাশ করেছে। এর অধীনে দেশটির সরকার তাদের বিবেচনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত কাউকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও তাদের সম্পত্তি জব্দ করতে পারবে।
[৩] সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে গঠিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন তথা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত
[৪] সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালী কোন কোন সদস্য এবং অন্যান্য সরকারি ও আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের- বিশেষ করে যারা যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করে থাকেন এবং যাদের যুক্তরাজ্যে আর্থিক সম্পদ রয়েছে তাদের — এ বিধান নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কারন দেখা দিয়েছে।
[৫] প্রবর্তিত বিধিমালার অন্যতম লক্ষ্য হলো, বিদেশে (ইউকে’র সীমানার বাইরে) সংঘটিত যেসকল “কর্মকান্ডে” কোনো ব্যাক্তির “বেঁচে থাকার অধিকার” অথবা “নির্যাতন-বা-নিষ্ঠুরতার-শিকার-না-হবার অধিকার, অমানবিক-বা-মর্যাদাহরণকারী-আচরণ-ও-শাস্তির-শিকার-না-হবার অধিকার” সমূহের “গুরুতর লঙ্ঘন” হবে, তেমন “কর্মকান্ড” “প্রতিহতের লক্ষ্যে বাধা প্রদান, এবং তার দায় গ্রহণ” নিশ্চিতকরন।
[৬] বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং নির্যাতন (টর্চার) অহরহ ঘটে থাকে, এবং অনেকক্ষেত্রেই এসব খবর প্রকাশিতও হয়। এসব ঘটনায় প্রায়শই ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের আঙুল থাকে সরকার বা কোনো কোনো আইনপ্রয়োগ সংস্থার দিকে।
[৭] যুক্তরাজ্যের নতুন এ বিধিমালার অধীনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী কোনো ব্যাক্তিকে বিধিমালায় বর্ণিত অপরাধের সন্দেহে “চিহ্নিত” করতে পারবেন “যদি কোনো ব্যাক্তিকে যুক্তিযুক্ত কারনে সন্দেহ করা হয় যে উক্ত ব্যাক্তি” এমন কাজে “জড়িত” ছিলেন"।
[৮] এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত হবে এমন ব্যাক্তি যে:
- “উল্লেখিত কোনও কর্মকান্ডে জড়িত হয় বা তেমন কোনো ঘটনা সংঘটনের জন্যে দায়ি,” বা
- “উল্লেখিত কোনো কর্মকান্ডের ব্যবস্থা গ্রহণ করে, [তার জন্য] প্ররোচিত করে, উৎসাহিত করে বা সহায়তা দেয়,” বা
- “এমন কর্মকান্ডের প্রমান লুকিয়ে রাখে,” বা
- “আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে” যা এমন কোন কাজে সাহায্য করে, বা
- এধরণের কর্মকাণ্ড থেকে “আর্থিক লাভ বা অন্য যেকোন ধরনের লাভ গ্রহণ করে,” বা
- “এসকল কাজের তদন্ত ও বিচারের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং উদ্দেশ্যকৃতভাবে বা ইচ্ছাকৃত অবহেলায় সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়”
এছাড়াও, কোনো ব্যাক্তি যে “অপর কারো পক্ষ হয়ে বা অপর কারো নির্দেশে” এধরণের কোনো কাজে যুক্ত হয়েছিল বা যুক্ত আছে, সেও এ বিধানের আওতাধীন হবে।
[৯] বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের লোক এ বিধানের আওতায় “চিহ্নিত” হতে পারেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ শতাধিক ব্যাক্তি গুম হয়েছেন। এর মাঝে অনেকেই এখনো নিখোঁজ। গুম ব্যাতিত, শত শত বিচার বহির্ভূত হত্যারও অভিযোগ রয়েছে। এর অধিকাংশেরই কোন যথাযথ তদন্ত হয়নি।
[১০] অতীতে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাজ্য তেমন কোনো বক্তব্য দেয়নি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে এখন প্রকাশিত নিষেধাজ্ঞা বিধিমালার ফলে সরকারের হাতে এখন সুস্পষ্ট পদ্ধতি-প্রক্রিয়া রয়েছে যার দ্বারা কোনো ব্যাক্তি সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব, যা অতীতে যুক্তরাজ্য সরকার পারতোনা। এখানে লক্ষণীয় যে এ নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্র-যন্ত্র বহির্ভুত ব্যাক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ফলে বাংলাদেশের যে কোন ব্যাক্তি বা রাজনৈতিক দলও এর আওতাভুক্ত হতে পারে যদি তারা আন্দোলনের নামে ভাংচুর-হামলার মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
আপনার মতামত লিখুন :