কামরুল হাসান মামুন: আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের উপর একটি গবেষণা দরকার। কারা এর সদস্য হয়? কি তাদের যোগ্যতা? তারা কোন রাজনৈতিক ঘরানার শিক্ষক? কত জনের পিএইচডি আছে? কতজনের পিএইচডি এবং পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা আছে? তারা অধ্যাপক হওয়ার পর কতগুলো আর্টিকেল প্রকাশ করেছেন? শ্রেণীকক্ষে তারা কেমন শিক্ষক? সিলেকশন বোর্ডের সদস্য হওয়ার আগে তাদের সুপারভিশনে মাস্টার্স করা কতজন ছাত্র শিক্ষক হয়েছে আর সিলেকশন বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর কতজন শিক্ষক হয়েছে?
আমার ধারণা অধিকাংশ বোর্ড সদস্য তাদের নিজেদের যোগ্যতার চেয়ে বেশি যোগ্য কোন প্রার্থীকে দেখলে তাদের জ্বালা ধরে যায়। এই কারণে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়। প্রত্যেকটা সিলেকশন বোর্ডের অলিখিত/লিখিত প্রধান হলেন হয় ভিসি নিজে না হয় প্রো-ভিসি। ওই বোর্ডের অন্য সদস্যরাও হন তাদের আজ্ঞাবহ দলীয় শিক্ষক। ফলে দেখা যায় ভিসি বা প্রো-ভিসি ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলার মত কেউ ঐসব বোর্ডে থাকেনা বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকেই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ভাগবাটোয়ারা করা হয়ে যায়। এইভাবে যোগ্যদের বঞ্চিত করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গোয়াল ঘরে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
এইজন্যই সভ্য দেশে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ডকে সার্চ কমিটি বলে। সেই সার্চ কমিটির চেয়ার থাকে সাধারণত বিভাগের চেয়ারম্যান বা প্রধান। আর শিক্ষক নিয়োগ যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই একজন শিক্ষক নিয়োগের আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। অনেকগুলি ধাপের মাধ্যমে ফিল্টার করতে করতে শেষ ধাপে ইচ্ছে করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকতে পারেন। আমাদের মত ১০ মিনিটের একটি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মত এত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ বিশ্বের কোন সভ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন না। শিক্ষকের কি গুরুত্ব তা আমি আমার আগের পোস্টে বলেছি।
ভারতের আইআইটিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। একবার আইআইটিতে শিক্ষক নিয়োগ হবে। একজন যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে। তারা জানতে পারে অস্ট্রেলিয়াতে একজন যোগ্য প্রার্থী আছে যিনি যেই ফিল্ডে গবেষণা করছে আইআইটির ওই বিভাগ সেই ফিল্ডেরই একজন প্রার্থী খুঁজছে। তো সেই প্রার্থী ইন্টারভিউয়ের জন্য দেশে আসতে পারবেন না। তাই সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজেরাই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন। তার আগে তার সম্মন্ধে তারা জেনেশুনেই ওখানে গিয়েছেন। তাকে কনভিন্সড করতে। তাকে বলা হলো অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণার জন্য যা যা সুবিধা ও যন্ত্রপাতি দেওয়া হয় ভারতে তাকে তাই দেওয়া হবে। তার বেতনও ভালো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আমাদের দেশে কি এইটা কল্পনা করা যায়? এই জন্যই ভারতের আইআইটি বিশ্ব রেঙ্কিং-এ এত ভালো। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :