শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১০ জুলাই, ২০২০, ০৪:৩৩ সকাল
আপডেট : ১০ জুলাই, ২০২০, ০৪:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ইসলামের দৃষ্টিতে দেনমোহরের পরিমাণ

ইসমাঈল আযহার: [২] পৃথিবীর সব দেশে যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় রীতিতেই বিয়ে-বাগদান সম্পন্ন হয়ে আসছে। অনুরূপভাবে মুসলমানদের বিয়েও ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আনজাম দিতে হয়। সহি আকিদা-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে এ মহতি কাজ বাস্তবায়নে সবার একাগ্রতা লক্ষণীয়। মোহর, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক খরচাদি যথা সম্ভব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পরিমিতভাবে সম্পাদন করা সমীচীন।

[৩] মোহর আল্লাহর বিধান হলেও সেটি ধার্য করার কর্তব্য দায়িত্বশীল বর কনে কিংবা তাদের অভিভাবকদের। আমাদের সমাজে সাধারণত উভয়পক্ষের অভিভাবকরাই সেটি নির্ধারণ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বর-কনে উভয়ের নিকটাত্মীয় মা-বাবা-ভাইবোন ও ভাবী, খালা, ফুফুকে প্রদত্ত মোহরের সাথে তুলনা করে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটি ধার্য করে থাকে।

[৪] মোহরের সুনির্দিষ্ট কিংবা সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নেই। তবে হানাফি মাজহাবের মতে, সর্বনিম্ন মোহর ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই। (বায়হাকি)

[৫] সামর্থ্যবান স্বামী-স্ত্রীকে অধিক মোহর দিতে পারে। তাতে ইসলামে কোনো আপত্তি নেই। তবে তা যেন লৌকিকতা না হয়। ইসলামে লৌকিকতা বা রিয়া ছোট শিরকের সমতুল্য। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সবসময় যেহেতু এক রকম নয়, সেহেতু মোহরও ইসলামে নির্ধারিত নয়। এটি স্বামীর সামর্থ্য, স্ত্রীর মর্যাদা ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। রাসূলে আকরাম সা. বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য।’

[৬] যদি পারস্পরিক ঠিকঠাক হওয়ার পরও বড় অঙ্ক মোহরের জন্য বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয় অথবা কোনো ধরনের তিক্ততার জন্ম নেয় তাহলে এটি কোনো পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। তা ছাড়া যেকোনো একদেশদর্শিতা, একরোখা মনোভাব ও অযাচিত হস্তক্ষেপ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির অবতারণা করে না- সেটা বলা যায় না। সে জন্য নিঃসঙ্গতা কিংবা হারামের পথ ছেড়ে কেউ হালাল পথে আসতে চাইলে সবার সহযোগিতা করা ধর্মীয় দায়িত্ব। বিয়েকে যত বেশি সহজ করা যায় ততই সমাজের কল্যাণ।

[৭] বিয়েতে কঠিন অবস্থা সৃষ্টি করা সঠিক নয়। পরস্পর পছন্দ হওয়ার পর সহজ উপায়ে বিয়ে সম্পাদন করা উচিত। লোক দেখানো ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে দেনমোহরের ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেয়া যেমনি বৈধ নয়, তেমনি বরপক্ষকেও বেশি চাপাচাপি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

[৮] সহজ ও অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে সম্পাদন প্রসঙ্গে হজরত আম্মাজান আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: ফরমায়েছেন, ‘নিশ্চয় বরকতের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও গ্রহণযোগ্য বিয়ে হলো, যে বিয়ে সবচেয়ে স্বল্প খরচে সম্পাদিত হয়’। (বায়হাকি শোয়াবুল ঈমান)

[৯] জাহেলিয়া যুগে মোহরানা নিয়ে কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলত এবং অধিক পরিমাণ মোহর ধার্য হতো। পরবর্তীকালে মোহর আদায় নিয়ে শুরু হতো নানা জটিলতা ও ঝগড়া-ঝাটি। বর্তমানে মুসলিম সমাজেও একই অবস্থা। মোহরের প্রকৃত গুরুত্ব ও মর্যাদা বাকি নেই। এখন স্রেফ রসম-রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটা প্রথাগত ব্যাপার বলে মনে করে। মেয়েপক্ষ বিরাট অঙ্কের মোহর দাবি করে তারা এটাকে সামাজিক মান-সম্মানের বিষয় কিংবা তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবে ভেবে থাকে। বস্তুতপক্ষে ইসলামে মোহরের সাথে বংশীয় মানমর্যাদা ও তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা মনে করেন কেবল বিয়েবিচ্ছেদ হলেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

[১০] ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ করে দিয়েছে। আর মোহর পরিশোধ করা ছাড়া বিয়েই হতে পারে না। দেনমোহরের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বেশি প্রচলিত পরিমাণ হলো মোহরে ফাতেমি। মোহরে ফাতেমি বলা হয় ওই পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা যা রাসূলুল্লাহ সা.-এর মেয়ে হজরত ফাতিমা রা:-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এর পরিমাণ ছিল ৫০০ দিরহাম যা ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপার সমতুল্য। (জাওয়াহিরুল ফতোওয়া, ৪/৩৫০)

[১১] হজরত ওমর রা. এর খিলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেকগুণ বেশি মোহর ধার্য করতে শুরু করেন তখন হজরত ওমর রা. দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমাণ দেনমোহরের পক্ষে ছিলেন না কিন্তু সূরা আন নিসার ৪ নম্বর আয়াতের কারণে তিনি তা পারেননি। এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে।’

[১২] এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে। তাই কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহর মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করা ন্যায়সঙ্গত নয়। আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে সে ক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমি ধার্য করা হলে এর দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো ও নারীত্বের অবমাননা হয়। তাই মোহরে ফাতেমি বড় কথা নয়, স্বামীর সামর্থ্যর বিষয়টি বিবেচনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়