জামিল রহমান শিপার: কানাডার 'সরকারী চাকর' বনাম বাংলাদেশের বি.সি.এস. 'ক্যাডারভূক্ত প্রিন্স এন্ড প্রিন্সেস'....
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের 'পাবলিক সার্ভেন্ট' তথা 'সরকারী চাকর' হওয়ার জন্য ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররা যেভাবে কোমর বেধে লেগেছে, তা দেখে কানাডার সাথে একটা সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে চাইছি। (আসলে, বাংলাদেশে Public Servant এর নাম পরিবর্তন করে 'Public Sucker' রাখা উচিত। কারণ, সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই গুষ্টিভূক্ত 'চাকর'দের একাধিক সংস্থা জনগণকে মশার মতই চুষে খাচ্ছে)...
১) কানাডায় পাবলিক সার্ভেন্ট হতে গেলে বয়সের শুরুর সীমানা শুধু ১৮ হলেই চলে। এর পর আর বয়সের সীমানা নেই (শুধুমাত্র মিলিটারী আর পুলিশ ছাড়া যেখানে পেশী শক্তিরও প্রয়োজন হয়)।
২) চাকুরীতে ঢুকলে career progression শুধুমাত্র যোগ্যতার বলে (performance) হয়।
৩) একটি বিভাগে জুনিয়রিটি, সিনিয়রিটি বলে যে 'জিনিষ' তা নির্ধারণ হয় যোগ্যতার মাপকাঠিতে।
৪) বিভাগীয় 'প্রমোশান' জিনিষটা 'মামার বাড়ীর ছাগী' নয় যে, উঠানে বেধে রাখলেও দুধ দেবে। যোগ্যতার বিচারে দেখা যায়, এক অফিসার তার ছেলের অধীনেও চাকুরী করছেন।
৫) এক বিভাগের অফিসার আরেক বিভাগে যেয়ে নীতি নির্ধারকের পদে আসীন হয় না। যেমন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিষ্টার (বাংলাদেশের সচিব তুল্য), কখনই ফাইনান্স ডিপার্টমেন্টের পদে আসীন হবে না।
৬) হাতেগুনা কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্টান ছাড়া নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সরকারী চাকুরীতে মোটেও আগ্রহী নয়। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিজ্ঞানের ছাত্ররা NRC (National Research Council), Health Ministry, CSIS (Canadian Security and Intelligence Service) এর মত সরকারী সংস্থা ছাড়া কোথায়ও যেতে চায় না। কারণ, এই সরকারী প্রতিষ্টানগুলিতে বিশ্বমানের রিসার্চ, ইনোভেশান নিয়ে মেতে থাকা যায়।
৭) মিলিটারী ও পুলিশে যায় দুই ধরণের মানুষঃ ক) যারা একান্তই প্যারেড পছন্দ করে ও ভালোবাসে, খ) যাদের উচ্চশিক্ষা করার মেধা ও আগ্রহ দুটোরই অভাব রয়েছে।
৮) কানাডায় মিলিটারী অফিসারদের সাদামাটা জীবনযাপনের অবস্থা দেখে আমার অবাক লাগে, তারা কি বাংলাদেশের আর্মি লাইফের প্রাচুর্য আর সুবিধা সম্পর্কে কিছু জানে? জানলে হয়তো এক্ষুনি BMA তে ভর্তি হওয়ার জন্য লাইন লাগাতো।
৯) কানাডার উর্দিওয়ালারা কখনোই কারিগরী specialized সংস্থাগুলিতে (যেমন, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদিি) নীতিনির্ধারক পর্যায়ের উচ্চপদে আসীন হয় না। বেসিক রুল হচ্ছে, স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিনির্ধারক হবে একজন চিকিৎসক আর প্রকৌশল বিভাগের জন্য প্রকৌশলী, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য বিজ্ঞানী।
১০) কানাডার সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা প্রতি ৬ মাস অন্তর হচ্ছে, ১০ বার ফেল করলেও নো প্রব্লেম, আবার দেয়া যায়।
১১) কানাডার সরকারী চাকুরী উপমহাদেশীয় নতুন ইমিগ্রান্টদের কাছে আকর্ষণীয়। কারণ, তারা দেশে সরকারী চাকুরেদের 'দাপট' ও 'উপরি' রোজগারের কাহিনী দ্বারা প্রভাবাম্বিত। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :