সাদিয়া নাসরিন: ট্রাস্ট মি, আয়্যাম নট লিভিং ইন করোনা প্যানডেমিক। আয়্যাম নট গ্রুমিং ডেথ ভ্যলী ইন মাই সোল। আমি করোনার মধ্যে বাস করিনা, মাথায় মৃত্যু পুষিনা। আমি প্রতিটা দিন জীবনে বাঁচি, কর্মে বাঁচি, সুন্দরে বাঁচি, সাহসে বাঁচি, তৃপ্তিতে বাঁচি। হতাশা নামের কিছু আমার জীবনে নেই। বেদনা আছে, কষ্ট আছে। সেইসব বেদনাকেও আমি যাপন করি আমার স্টাইলেই।
এই জীবনে করোনার চাইতে বহু ভয়ঙ্কর অতিমারিকে আমাকে বহুবার মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমি সেইসব দুস্তর পারাবার একাই পাড়ি দিয়েছি, লড়াই করেছি এবং জিতেছি। বহুবার আচমকা ঝড়ে নিশ্চিহ্ন হতে হতে, ধুলায় মিশে যেতে যেতে উঠে দাঁড়িয়েছি। কতো বাচ্চা বয়সে আমি শিখে গেছি কী করে আগুন গিলে অঙ্গার ফ্ল্যাশ করে দিতে হয়, সেই আমি মৃত্যুর ভয়ে জীবনের কাছ থেকে পালাবো? অসম্ভব।
শোনেন, আমি জানি আমার শক্তি সীমাহীন। সেই শক্তির উপর আস্থা রাখি বলেই আমি খুব আনন্দ নিয়ে একটা দিন, একটা সপ্তাহ শুরু করি।
সপ্তাহে অন্তত চারদিন আমি শাড়ি পরি, চমৎকার সাজি, কষ্ট করে ফুল যোগাড় করে চুলে দেই, ছবি তুলি, ফেইসবুকে আপলোড করি, বাচ্চাদের সাথে নাচি, হেঁড়েগলায় গান করি, প্রার্থনা করি, রান্না করি, কবিতা লিখি, কবিতা পড়ি, বন্ধুদের সাথে ভিড়িও চ্যাট করি, ধুমধাম করে প্রেমে পড়ি, পড়াটাকে উপভোগ করি, পড়ে ব্যথা পেলে চিৎকার করে কাঁদি।
“আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা”
এই করোনা অতিমারির আকালে আমি যে পরিমাণ কাজ করেছি, যে পরিমাণ পজেটিভ এনার্জি নিয়েছি, যে পরিমাণ মানুষের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়িয়েছি তা কোন সুস্থ স্বাভাবিক সময়ে করতে পারিনি। করোনা আকাল আমাকে যে মহান শিক্ষাটা দিয়েছে তা হলো কী করে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে নিজের সাথে সময় কাটাতে হয়। কী করে নির্লিপ্ত হয়ে যেতে হয়, কী করে হেরে গিয়েও চমৎকার জেতা যায়।
এই প্যানডেমিক আমার সবচে বেশি যে উপকারটা করেছে তা হলো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শেখানো। দিনে একবার হলেও আমি মনে করার চেষ্টা করি, কী পরিমাণ নি:শ্বাস আমি এ পর্যন্ত বিনামূল্যে প্রকৃতির কাছ থেকে নিয়েছি। কী পরিমাণ স্নেহ ক্ষমা ভরসা আনন্দ যত্ন আমি মা বাবা সন্তান সঙ্গী এবং বন্ধুর কাছে পেয়েছি। কী পরিমাণ ভালোবাসা আমি মানুষের কাছে পেয়েছি। কী পরিমাণ পুষ্টি আমি প্রাণীর কাছ থেকে গ্রহণ করেছি।
সেইসব ঋণ স্বীকার করার চেষ্টা করি আমি আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে। একজন মানুষও যদি আমার কারণে একটু ভালো থাকে, কারো সামান্যতম ভরসাও যদি হতে পারি, একটু হলেও যদি কারো কাজে লাগি, তখন সেই বোধটা আমাকে যে কনফিডেন্স দেয় আর মানসিক শক্তি বাড়ায় তার দাম কড়ি দিয়ে শোধ করা যায়না।
সুতরাং “এই বিপদের দিনে আমার সাজুগুজু আর কাজকর্মের ফিরিস্তি” দেখতে যাদের সমস্যা হচ্ছে তাঁরা দয়া করে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখুন। হুদাই ন্যাগিং করে নিজের ও আমার টক্সিন বাড়াবেননা। বিশ্বাস করেন, আমি টক্সিক মানুষদের থেকে একশহাত দূরত্বে থাকি, ইভেন টক্সিক কেউ আমার পরিবারের সদস্য হলেও। আমি এটাই। আমার মতো।
আপনার মতো করোনা নিয়ে সারাক্ষণ নিউজ আপডেট, ওয়ার্লড মিটার, গুগল এইসব আমি করিনা। আমি জানি এইসব জিনিষ আয়ুক্ষয়ী উদ্বেগ আর ট্রমা ছাড়া কিছুই দেয়না। আমি চব্বিশঘন্টা কান্নাকাটি করলেও করোনা তার থাবা বিন্দুমাত্র সংকোচিত করবেনা।
আতঙ্ক আর সতর্কতার ফাইনলাইনটা আপনার চাইতে আমি ভালো বুঝি বলেই আমি অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকি। বরং আপনি যতোবার মৃত্যুর সংখ্যা গোনেন আমি ততোবার জীবনের সংখ্যা গুনি। এটাই আমার স্টাইল।
আপনি আমাকে আমার স্টাইলেই ভালো থাকতে দেন, না পারলে নিজের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। যদি না পারেন, যদি খুব বেশি ট্রমাটাইজড হয়ে যান, করোনার ভয় যদি আপনার জীবন সংহারী হয়, তাহলে প্রফেশনাল হেল্প নেন, প্রয়োজনে মেডিকেশন করেন।
কিন্তু দোহাই, আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করেন। আমার তল আপনি পাবেননা। আমিই পাইনা!! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :