শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২০, ০৮:৩১ সকাল
আপডেট : ০৮ জুলাই, ২০২০, ০৮:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ: অর্থ খাতে সাত-পাঁচ, নয়-ছয়ের ছড়াছড়ি

এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ: করোনার ঝাপ্টায় সরকার কেন, রাস্তার ভিখারিকেও নতুন অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। বাস্তবতা দৃষ্টে তার ভিক্ষার স্পট, কৌশল সব কিছুতে নতুন পরিকল্পণা নিতে হচ্ছে। আয় দৃষ্টে ব্যয়, আয়ের খাত সব কিছুতেই নিতে হচ্ছে নতুন পরিকল্পণা। তার ব্যয় হবে আয়ের পর। আর সরকার আগে ভাবে ব্যয় নিয়ে। আয় পরে। অর্থমন্ত্রীও কোনো রাখঢাক না রেখে সেটা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, যেখানে যা ব্যয় দরকার করে ফেলবেন। টাকা কোত্থেকে আসবে সেটা পরে দেখবেন। সরকারকে এমন কঠিন সময়ে বাজেট ঘোষণা করতে হয়েছে। এখন মুদ্রানীতিতেও হাত দিতে হচ্ছে নতুন ভাবভঙ্গিতে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরুও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মাসের শেষদিকে মুদ্রানীতি ঘোষণা হতে পারে। সেখানে ভাবতে হচ্ছে করোনাকালীন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কথা। আমলে রাখতে হচ্ছে, করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলার কথা। অবধারিতভাবে কিছু চ্যালেঞ্জও নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় চ্যালেঞ্জই রয়েছে। দেশের রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ওপর পড়া মন্দার প্রভাব মোকাবেলার পদক্ষেপ খুঁজতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করাকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে টপ প্রায়োরিটিতে। মুদ্রানীতি আসলে একটি ধারনা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবছর মুদ্রানীতি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া হয়। এবারও মতামত নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক, অর্থ ব্যবস্থাপনাসহ কিছু বিষয়ে বিজনেস কমিউনিটি থেকে ছোঁড়া অভিযোগ সরকারের বুকেও বিঁধছে। ব্যবসা করতে সরকারি দফতরে পদে পদে হয়রানি আর ভোগান্তির অভিযোগ পুরনো হলেও তা নতুন করে চালাচালি হচ্ছে। দেশে ব্যবসার পরিবেশের নাজুক দশার কথা এসেছে বিশ্বব্যাংকের সবশেষ ব্যবসা সহজীকরণ সূচকেও। যেখানে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার তলানিতে; ১৬৮তম। ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশ প্রশ্নে সরকারের ঘন ঘন নীতি-কৌশল বদলে বিরক্ত ব্যবসায়ীরা। সরকার সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে বেশ আগেই। ১০ বছর কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা দেওয়ায় সেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঘন ঘন নীতি-কৌশল পাল্টানোর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ নিয়েও ঝামেলা পাকছে। তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা- উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আবার সরকারও যে অর্থনৈতিক বিষয়াদিতে স্বস্তিতে নেই, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চলমান তথা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কোনোটাতেই স্থির হতে না পেরে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে সরকারকে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিজার্ভের টাকা ব্যবহারের আলোচনা আগেও হয়েছিল। এখন আবার এলো সামনে। আলোচনাটা টেনে এনেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। এর সভায় রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে খরচের বিষয়টি তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালে যোগ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দেশের ৩৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ কম কথা নয়। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ না নিয়ে এই টাকা ব্যবহারের চিন্তাভাবনাও প্রাসঙ্গিক। অর্থনীতি সম্পর্কে ওযাকিবহালরা বলছেন, তিন মাসের আমদানি ব্যয় জমা থাকা স্বস্তিদায়ক। তা দিয়ে প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে ব্যয় করার ভাবনাটি সামনে আনা হয়েছে। বলা যায়, এটি এখন পর্যন্ত ধারনার পর্যায়ে। সিদ্ধান্ত নয়। আবার প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা সিদ্ধান্ত বা নির্দেশের চেয়ে কমও নয়। ব্যক্তিগত মত হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভের টাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা যায়।

বিদেশি ঋণে ঝামেলা বেশি। শর্ত অনেক। জটিলতা বহুমুখী। ঋণ নিতে হবে ডলারে। শোধও করতে হবে ডলারে। প্রকল্পের বাস্তবায়নে বিলম্বও হয় অনেক। পরিকল্পণা মন্ত্রী এম. এ মান্নানের ভাষায়: আমরা আমাদের নিজেদের টাকা নিজেরাই ব্যবহার করব, বাম হাতের টাকা ডান হাত ঋণ নেবে। এতে কোনো সমস্যা দেখছে না তিনি। অতএব বিষয়টি পরিস্কার। সরকারের মানসিকতা, ইচ্ছা বুঝতে কারো কিছু বাকি থাকার কথা নয়। করোনার আগে থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণে ধীরগতি ভর করেছে। করোনার পর থেকে এই গতি আরো মন্থর। এমনকি করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণেও তেমন গতি নেই। এতে সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমে গেছে। পুরো অর্থবছরে ১৪.৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মে পর্যন্ত বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮.৮৬ শতাংশ; যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ব্যাংকপাড়া অস্থির আরো আগে থেকেই। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে। নয়-ছয়, সাত-পাঁচ বোঝানোর মাত্রাও বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণ বাড়লেও নানা উপায়ে তা কম দেখানো হচ্ছে। প্রকৃত বিচারে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে মূলধন পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। প্রচুর ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ শ্রেণিকরণের শর্ত শিথিলসহ নানা উপায়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমানো হলেও ব্যাংকে বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। গত মার্চ প্রান্তিকে এসে ১৩টি ব্যাংক প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে। প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে সরকারি সাতটি ব্যাংকে। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১২টি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ছিল ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সাধারণভাবে খেলাপি ঋণ বাড়লে মূলধনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ার কথা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মনীতি ব্যাপক শিথিল করা হয়েছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেউ কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপি দেখানো যাবে না। তবে শুধু যেটুকু প্রকৃত আদায় হচ্ছে তার বাইরে বাকি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে আগের নিয়মেই শ্রেণিকৃত ঋণ হিসেবেই প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এর পরিণতিতে মূলধনে ঘাটতি বাড়ছে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের এতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু, সমস্যায় পড়ছেন ছোট ব্যবসায়ী ও সাধারণ গ্রাহকরা। মহামারী করোনাভাইরাস সংকটে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ চেয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তাদের সংগঠনগুলো বলছে- প্রায় ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এরসঙ্গে অনানুষ্ঠানিক খাতের অতি ক্ষুদ্র প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা লকডাউনে ঘরে বসে পুঁজি খেয়ে ফেলেছেন। তারা এখন নিঃস্ব। তবুও অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পাশে নেই। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদানের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সারা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তারাও অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কর্মসংস্থানও করেন বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।এ ছাড়া অতি ক্ষুদ্র অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর- টিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধন কিংবা ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি বা বাদাম বিক্রেতা। এ সব অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ পুঁজি ২০ হাজার টাকা। এই পুঁজি ৬৬ দিনের লকডাউনে বাসা ভাড়া আর ভরণ পোষণে শেষ হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর খুব একটা লেনদেন বা ঋণের সম্পর্ক নেই। প্রণোদনার সব দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর আছে কি-না, এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাব করেছে- যেসব ব্যাংক মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না, তাদের সরকারি আমানত প্রত্যাহার আর যারা পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের আমানত বৃদ্ধি করার জন্য। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বাধা সৃষ্টিকারক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিও করেছে তারা।প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন না করে ব্যাংকগুলো আতঙ্ক তৈরি করছে বলে অভিযোগ ছুঁড়েছে ডিসিসিআই। ব্যাংকগুলো আবারও ঋণের সুদহার বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে আঁচ করছেন তারা।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সংবাদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়