ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : [২] পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মুক্তার হোসেনের একমাত্র সম্বল মাত্র ২৬ কাঠা জমি। জমিতে যে ধান হতো তাই দিয়ে চলতো সারা বছরের খাবার। কিন্তু অবৈধ ভাবে পুকুর কাটার ফলে তার দুমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে।
[৩] মুক্তার হোসেনের মতো হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভালকী, পায়রাডাঙ্গা, শিতলী ও জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। এক সময়ের ধানী জমি এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। পুকুর কাটার ফলে চার হাজার বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। উপায়হীন কৃষক পরিবারগুলো প্রতিকার পেতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও তড়িৎ কোন পদক্ষেপ পায়নি। প্রশাসনের এই নীরবতায় পুকুর মালিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
[৪] এলাকাবাসির অভিযোগ, অবৈধ ভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এক রকম নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আক্তারুজ্জামান জানান, তাদের গ্রামে ৮/১০ টি বিল রয়েছে। দুই মৌসুমে এই বিলে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপন্ন হতো। কিন্তু পায়রাডাঙ্গা গ্রামের আইয়ূব মন্ডলের ছেলে ডালিম মন্ডল ও জব্বার মন্ডলের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দলু মন্ডল যত্রতত্র পুকুর কটছে। ফলে গোটা বিলে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শিতলী এবং জোড়াপুকুরিয়া গ্রামের মাঠের শত শত বিঘা আবাদী জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে।
[৫] গ্রামবাসির ভাষ্যমতে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের হাতিশুড়ো, মুচেইখালী, ট্যাবার মাঠ ও সঞ্জেরখালী মাঠ এখন পানির নিচে। সঞ্জেরখালী মাঠে সরকারী জমি ছিল দেড় বিঘা। সেখানে বিল ও খালের সংযোগ স্থানে ছিল একটি ব্রীজ। সেখানে পুকুর কাটায় ব্রীজের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারী রাস্তায় কেও চলাচল করতে পারছে না। সরকারী ভাবে নির্মিত যাত্রী ছাউনিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারী জমি দখল, সরকারী রাস্তা ও ব্রীজ বন্ধ, সরকারী যাত্রী ছাউনি পরিত্যক্ত ও সরকারী খাল নষ্ট করার পরও কেন ঝিনাইদহের প্রশাসন দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না এ নিয়ে গ্রামবাসি প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য বেআইনী ভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ডালিম ও দলু আইন ভঙ্গ করেছেন। সেই সাথে তারা হাজারো মানুষের পেটে লাথি মারতে বিলের মধ্যে পুকুর কেটে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। এরপরও যদি তাদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ না হয় তবে পায়ারাডাঙ্গা-ভালকী গ্রামে এই পুকুর কাটা নিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ শুরু হতে পারে বলে গ্রামবাসি আশংকা প্রকাশ করছেন।
[৬] পুকুর মালিক ডালিম ও দলু জানান, তারা তাদের জমিতে পুকুর কাটছেন। পুকুর কাটার কারণে কোন কৃষকের ক্ষতি হলে তারা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিবেন।
[৭] এ ব্যাপারে হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাফিস সুলতানা জানান, আমি অসুস্থ থাকার কারণে অভিযোগটি পায়নি। তবে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে অবহিত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছেন। আমি সরেজমিন তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তার সাথে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেন। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :