ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ: বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রা (সেটা যে ধরণের শাসন ব্যবস্থার অধীনেই হোক) সাধারণত মাথাপিছু জাতীয় আয় বা জিডিপি দিয়ে মাপা হয়। তবে জাতীয় আয়ের পরিমাপ ও তুলনা করা নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। অন্য কিছু সহজ সূচক ব্যবহার করে উন্নয়নের মাত্রা সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায় কিনা এনিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। আমার নিজের চলমান গবেষণায় সহজে চোখে পড়ে এমন কিছু ব্যতিক্রমী আর্থ-সামাজিক সূচক নিয়ে ভাবছি; সূচকগুলো বাছাইএর ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের চিত্র নয় বরং সহজে দৃশ্যমান কিছু বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি। এছাড়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নে নগরায়ন যেহেতু অবশ্যম্ভাবী, সেজন্য শহরকেন্দ্রিক সূচকের দিকেই বেশি নজর দেয়া হয়েছে:
১. রাজধানী বা বড় শহরগুলির নদী পাড়ের চলার পথের নান্দনিক সৌন্দর্য (London এর Thames, Bangkok এর Chao Phraya, ইত্যাদি)
২. শহরগুলোর রাস্তায় বাস বা গাড়ির চলাচলের পাশাপাশি পথচারীদের সুযোগ সুবিধাকে কতখানি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়
৩. রাস্তায় ট্রাফিক আইন মানা ও হর্ন বাজানোর মাত্রা
৪. গণপরিবহণ ব্যবস্থার মান ও শৃঙ্খলা (যেমন বাস ও অন্য গণপরিবহণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী উঠা নামার সুযোগ আছে কি নাই)
৫. শহরগুলোর গণশৌচাগারের মান ও বর্জ্যব্যবস্থাপনার দৃশ্যমান চিত্র
৬. নাগরিকদের প্রকাশ্য স্থানে স্বাস্থ্যগত শীষ্টাচার (যেমন থুথু ফেলা) মেনে চলার মাত্রা
৭. খাদ্যে ভেজালের মাত্রা এবং শহরে ট্যাপের পানির মান ও গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানির লভ্যতা
৮. গ্রামাঞ্চলের বসতবাড়ির বাহ্যিক রূপ ও শৌচাগার ব্যবস্থা
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যাত্রী পরিবহনের তুলনায় মৃত্যুর হার
১০. শিক্ষিত নাগরিকদের বিদেশে স্থায়ী ভাবে চলে যাবার আকাঙ্ক্ষার মাত্রা
উন্নয়নের নীতি নির্ধারণের দিক-নির্দেশনা দেয়া এসব সূচকগুলোর মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং এগুলোকে উন্নয়নের মাত্রা নির্ধারণের কিছু দৃশ্যমান লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সুশাসন, ব্যবসায় পরিবেশ, মানব উন্নয়ন, মানবাধিকার ইত্যাদি উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিবছর বহু ধরণের সূচক প্রকাশ করে; এছাড়া মাথাপিছু জিডিপি বা জাতীয় আয়ের হিসাব তো আছেই। এসব সূচকগুলোর তথ্য-উপাত্ত, পরিমাপ পদ্ধতি ও তুলনামূলক উপযোগিতা নিয়ে অনেক আলোচনা-বিতর্কও আছে। তবে একটা অনুন্নত দেশ থেকে কেউ উন্নত দেশে গিয়ে পড়লে তাকে সেটা বোঝার জন্য বইপত্র ঘেঁটে নিশ্চয়ই দেখতে হয় না যে ওই দেশটা মাথা পিছু আয়ের দিক থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোন শ্রেণীভুক্ত বা জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকেই বা দেশটি কত নম্বর পেয়েছে। যে দৃশ্যমান লক্ষণগুলো থেকে তাৎক্ষণিক ভাবেই দেশটির উন্নয়নের মাত্রা সম্বন্ধে একটা ধারণা করা যায় এই লেখাতে সেগুলোকেই সূচক হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর সঙ্গে অবশ্যই কিছু জনসচেতনতা ও নীতি নির্ধারণের বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত তো আছেই।
যেহেতু আমরা সরকারিভাবে ২০৩০ সনের মধ্যে উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সনের মধ্যে উন্নত দেশ হবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি, সেজন্য শুধু জিডিপি এর প্রবৃদ্ধি নিয়ে হিসাব নিকাশ না করে উন্নয়নের এসব ভিন্নধর্মী সূচকের কথাও ভাবতে হবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :