ডেস্ক রিপোর্ট : [২] চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামের তরুণ শরীফ খান বাবু। ফেসবুকে বা টিভি স্ট্ক্রলে মুমূর্ষু করোনা রোগীর জন্য 'প্লাজমা চাই' বিজ্ঞাপন দেখেই দাতা সেজে এগিয়ে আসে সে। নিজেই ফোন দেয় রোগীর স্বজনকে। শুধু কি তাই! ফেসবুকে নিজেই ভিন্ন ভিন্ন ছয়টি মোবাইল নম্বর দিয়ে নিজেকে করোনা সেরে ওঠা ব্যক্তি বলে পরিচয় দেয়, আগ্রহ দেখায় মৃত্যুপথযাত্রী করোনা রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার। এভাবেই প্লাজমা দাতা সেজে সে করোনা রোগীর পকেট কেটে নেয় হাজার হাজার টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে বন্ধ করে দেয় নিজের মোবাইল ফোন।
[৩] গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে প্লাজমা নিয়ে তার মহাপ্রতারণার কাহিনি। এ পর্যন্ত সে তিনজনের কাছ থেকে প্লাজমা দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
[৪] গত বৃহস্পতিবার সমকালের প্রথম পাতায় 'প্লাজমার ডোনার সেজে ভয়ংকর প্রতারণা :টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্র' শিরোনামে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হয়। গণমাধ্যমে খবর দেখে প্রতারক চক্রটিকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে প্রতারক চক্রের সদস্য শরীফ খান বাবুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
[৫] ডিবির তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মুজিব আহম্মদ পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, 'শরীফ খান বাবু মহাপ্রতারক। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতারণা করলেও চলমান পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের নিয়েও অমানুষের মতো প্রতারণা করে আসছিল।'
[৬] ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে প্লাজমা দেওয়ার কথা বলে তিনজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টগুলো যাচাই করা হচ্ছে। প্লাজমা প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদেরও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে কোনো ব্যক্তি সুস্থ হলে তার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সুস্থ ওই ব্যক্তির দেহ থেকে প্লাজমা (রক্ত রস) সংগ্রহ করে মুমূর্ষু করোনা রোগীর দেহে তা প্রয়োগ করলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে মুমূর্ষু রোগীর স্বজনরা সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহের জন্য নানা মাধ্যমে চেষ্টা চালান। স্বজনদের অসহায় অবস্থাটা পুঁজি করে প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ পেতে বসেছে। যদিও গ্রেপ্তার শরীফ খান বাবু করোনা আক্রান্তই ছিল না। তাই তার রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করারও সুযোগ নেই।
[৭] প্লাজমা ডোনার সেজে যেভাবে প্রতারণা করে বাবু :ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বাবু জানায়, প্লাজমার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ গড়ে উঠেছে। এসব গ্রুপ করোনা রোগীর স্বজনরা বা গ্রুপ অ্যাডমিনরা প্লাজমা চেয়ে আবেদন করেন। যোগাযোগের জন্য তাদের নম্বরও দেন। ওইসব নম্বরে সে যোগাযোগ করে। যে গ্রুপর রক্তের প্লাজমা দরকার, সে নিজেকে সেই গ্রুপর রক্তবাহী বলেই স্বজনদের মিথ্যা কথা বলে। স্বজনরা যদি বলেন তার রোগী ঢাকার কোনো হাসপাতালে ভর্তি, তখন সে নিজেকে চাঁদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম বা উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলায় অবস্থান করছে বলে জানায়। হাসপাতালে প্লাজমা দিতে আসার জন্য সে গাড়ি ভাড়াবাবদ অগ্রিম টাকা দাবি করে। ওই সময় দ্রæত প্লাজমা দরকার হওয়ায় রোগীর স্বজনরা টাকা পাঠালে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।
[৮] বাবু জানায়, ফোনে কথা বলার সময় যদি বুঝতে পারে রোগী ধনাঢ্য পরিবারের, তখন নিজেকে দরিদ্র দাবি করে প্লাজমার বিনিময়ে ২০ থেকে ৫০ টাকাও দাবি করে। প্লাজমা গ্রহীতা খুঁজতে সে সবসময় ফেসবুকে প্লাজমা ব্যাংকের গ্রুপ বা পেজগুলো ফলো করে। নিজেও বেশ কয়েকটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে প্লাজমা দিতে আগ্রহ দেখিয়ে স্ট্যাটাসও দেয়। প্রতিটি আইডিতেই ভিন্ন ভিন্ন রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করে।
[৯] অনলাইনে মৌসুমি প্রতারক এই বাবু :ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, শরীফ খান বাবু শুধু করোনা রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার নামেই প্রতারণা করেনি, সে অনলাইনে নানা বিষয়েই প্রতারণা করে আসছিল। নিজের ছেলে বা মেয়ে অসুস্থ থাকার কথা বলেও সে ফেসবুকে সাহায্যের আহŸান জানিয়ে প্রতারণা করে।
[১০] ডিবি কর্মকর্তা মুজিব আহম্মদ পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, 'প্রতারক বাবু বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত অসুস্থ গরিব মানুষের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে। ফেসবুকে এসব ছবি দিয়ে নিজের স্বজন দাবি করে সাহায্যের আকুতি জানায়। সেখানে বিকাশ বা রকেট নম্বর দিয়ে সাহায্যের নামে টাকা হাতিয়ে নিত।
[১১] তিনি বলেন, নিজের গ্রামেও বাবুর রেকর্ড ভালো নয়। ছোটবেলা থেকেই সে নানা বাটপারি করে আসছে। এ জন্য গ্রাম্য শালিসে তার পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে জরিমানাও দিতে হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :