শিরোনাম
◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির 

প্রকাশিত : ০২ জুলাই, ২০২০, ০৫:৫৩ সকাল
আপডেট : ০২ জুলাই, ২০২০, ০৫:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রফিকুল ইসলাম সরকার : গার্মেন্টস খাতে শ্রমিক ছাঁটাই

পোশাক শিল্প দেশের চার দশকের ব্যবসা সফল শিল্প। এ শিল্পে মোট কত শ্রমিক কাজ করছে তার গ্রহণযোগ্য তথ্য ও হিসাব নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও কেউ কেউ বলেন চল্লিশ লক্ষ শ্রমিকগার্মেন্টস খাতে নিয়েজিত আছেন। দেশে এখাতে বিনিয়েগে করে অনেক ছোট ব্যবসায়ী শিল্পপতি হয়েছেন, গ্রুপ অব কোম্পানীজ এর মালিক হয়েছেন, দেশে বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। অথচ এ শিল্পের কারিগর, শ্রমিক যে তিমিরে, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
মাত্র এক দুই মাসের লকডাউনে শ্রমিকের বেতনভাতা দিয়ে চালিয়ে নেয়ার সক্ষমতা এই বিশালগার্মেন্টস খাতের শিল্প মালিকদের নেই। এমনকি শ্রমিকরা কাজ করেছে, পাওনা বেতন দিতেও নানান রকম তালবাহানা দেখা যায়। ন্যায্য পাওনা বেতন পাবার জন্যগার্মেন্টস খাতের শ্রমিককে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়। এই হলো আমাদের দেশের সবচেয়ে ব্যবসা সফল শিল্পের চিত্র।

করোনায় সরকার লকডাউন ঘোষনা করলে, গার্মেন্টস শিল্পের মালিকগণ সুর তুললেন শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবেন না। পরবর্তীতে লকডাউন আরো বৃদ্ধি হলে ঈদ আসায় তারা আবার বললেন, শ্রমিকদের বেতন সহ বোনাসও দিতে পারবেন না।

সদাশয় সরকার এ শিল্পের বিকাশ ও শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে বিশাল অঙ্কের প্রনোদনা ঘোষনা করলেন। এ প্রণোদনা প্রাপ্তির জন্য শ্রমিকদের নিয়েও খেলা হল মরন পণ খেলা। ঘোষনা দেয়া হল গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেয়া হবে। যারা যোগদান করবে তাদের বেতন বোনাস দেয়া হবে। শ্রমিকগণ জীবন বাজি রেখে এমন কি লক ডাউনের মধ্যে যানবাহন না পেয়েও পাঁয়ে হেঁটে হেঁটে করোনা ভীতির মধ্যেও কাজে যোগদান করেছে। কোন কোন গার্মেন্টস মালিক আবার তাদের কর্মীদের কাজে যোগদান না নিয়ে পুনরায় তাদেরকে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন। কিছু খোলা কিছু গার্মেন্টস বন্ধের দোলাচলে কাজে যোগদান করতে না পেরে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে দু একজন আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রনোদনা শেষ পর্যন্ত এ খাতের সুরক্ষায় সক্ষম হবে বলে মনে হয় না। এখন মালিক পক্ষ বলছেন জুনের পর শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করবেন। এ রকম ঘোষনা দিয়ে শ্রমিক ছাটাই শুধু এ শিল্প নয় এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল খাতের জন্য যে কত বড় দুঃসংবাদ তারা দিলেন আর এ দুঃসংবাদ এর কারণে কত গুলো গার্মেন্টস লিংকেজ মাঝারী শিল্প ও এসকল শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের পরিবারে কি পরিমাণ দুঃখ দুর্ধশা নেমে আসবে তার কথা ওনারা কি একবারও একটুও ভেবে ছাঁটাই এর বিষয়টি প্রচার করলেন।

তাহলে আমাদের কেন এ অবস্থা।সেটি একটু খতিয়ে দেখা যাক। আমাদের দেশে পোশাক শিল্প মুলত: বিদেশী ব্রান্ডের অর্ডারের উপর নির্ভরশীল।যা এক কথায় বলা যায় তাদের দয়া হলে যদি অর্ডায় দেয় তখন আমরা কাজ পাই। আজ পর্যন্ত আমরা একটি নামি দামি ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠা করতে পর্যন্ত পারিনি। ফলে বিদেশি নামি দামি ব্রান্ডের কাজের অর্ডার ছাড়া আমরা প্রায় অচল। আমারদরকে তাদের অর্ডারের অপেক্ষায় থাকতে হয়। আর কতদিন আমরা তাদের দয়ার উপর থাকবো? এত বড় একটা বিশাল সেক্টর কারো দয়ার উপর টিকে থাকতে পারে কি?

আমাদের যেখানে স্কিলড ওয়ার্কার আছে, আছে উপযুক্ত প্রযুক্তিও, আছে স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার। সবকিছু থাকার পরেও চার দশকে আমাদের দেশে আমাদের নিজস্ব কোন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠা করতে অঅমরা পারিনি। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্রান্ড প্রতিষ্ঠায় কোন প্রচেষ্টাও আমাদের মাঝে ছিল না এবং আজো নেই।। বিদেশী ব্রান্ডের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর তিন কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা টিকে থাকতে পারে কি?

তাই এখনই যদি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প চিন্তা না করা হয় তবে অচিরেই এই শিল্প এদেশে মুখ থুবরে পড়তে বাধ্য। কারণ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া আর মায়ানমারের মত দেশগুলো ইতিমধ্যে প্রতিযোগীতার দৌড়ে অঅমাদের থেকে অনেক এগিয়ে আছে।

২০১৯ সালেই পোশাকশিল্পে বাংলাদেশকে টপকিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম চলে এসেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই করোনা কালীন সময়েও ভিয়েতনামে একদিনের জন্যও তাদের দেশের কলকারখানা বন্ধ করেনি।

করোনা প্রতিরোধে সবচাইতে কার্যকর একটি দেশ, তার নাম ভিয়েতনাম। যেখানে ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল এ দেশেটি। অথচ তারাই এবারে পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় করোনাকে খুব কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলাফল হিসাবে করোনায় ভিয়েতনামের মৃত্যহার শুন্য।
চীনে মহামারী করোনার প্রকোপে সেখান থেকে কল কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে বড় বড় দেশ ও কোম্পানী।এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমা বিশ্ব।

এমনিতেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর সাথে চিনের সম্পর্কের অবনতি দেখা যাচ্ছে, আবার যদি তিনি ফের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন তবে চীনের সাথে মার্কীনীদের দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হবে এটি নিশ্চিত।সেই সাথে চীনের উপর আরোপিত শুল্কারোপের সময় আরো লম্বা হবে এটাও নিশ্চিত করেই বলা যায়।
এসব বিবেচনায় জাপান, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানী ইতোমধ্যে তাদের শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ চায়না থেকে সরিয়ে তাদের বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো বিলল্প ভিয়েতনাম নিয়ে যাচ্ছে। কারণ ভিয়েতনামে শ্রমিকের সহজলভ্যতা রয়েছে, রয়েছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঝামেলাহীন কাস্টম প্রসেস থাকার কারণে ভিয়েতনামই হচ্ছে চায়নার অন্যতম বিকল্প।
সেই সুযোগও ভিয়েতনাম লুফে নিয়েছে। ভিয়েতনামও মনোযোগ দিচ্ছে তাদের বর্তমান প্রধান আয়ের উৎস পোশাক শিল্পের দিকে।তাই তারা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরে তারা ২০টি আন্তর্জাতিক মাণের ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠা করবে । আর যার সব ধরণের সহায়তা দেবার নিশ্চয়তা বিধান করেছে ভিয়েতনাম সরকার

ভিয়েতনামীরাও বীরের জাতি। দীর্ঘ এক দশক মার্কিনীদের সাথে লড়াই করে তারা তাদের দেশ মুক্ত করেছে। মার্কিনীরা ভিয়েতনামীদের কাছেই মুখোমুখি যুদ্ধে সরাসরি পরাস্ত হয়েছে। বাঙলাদেশও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভাষার জন্য পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা অর্জন করেছে। বাঙালীও বীরের জাতি। সুতরাং আমরাও কেন পারবো না। যেখানে সদাশয় সরকার বাহাদুর এ শিল্পের সাথে আছে।আমরা যারা এই শিল্পের সাথে জড়িত তারা সবাই মিলে নতুন উদ্যোমে নুতন উদ্দোগে নূতনভাবে শুরু করলে জয় আমাদের সুনিশ্চিত। এবং সেই উদ্যোগটি দরকার এখুনি।

লেখক: উন্নয়ন কর্মী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়