শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২০, ১০:৩৩ দুপুর
আপডেট : ২৯ জুন, ২০২০, ১০:৩৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বাজেটে স্বাস্থ্যখাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, কোন মৃত্যুই কাম্য নয় : প্রধানমন্ত্রী

মনিরুল ইসলাম : [২] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্যখাত বরাদ্দে গতবার ছিলো ৮ম স্থানে এবার ৫ম স্থানে উঠে এসেছে। আর ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

[৩] তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আরও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ দেওয়া হবে। আরও ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দিচ্ছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। শিগগিরই এই নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে।

[৪] সোমবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ৪৮ মিনিট বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

[৫] প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাতে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও ২ হাজার চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা ৪ হাজার নার্স নিয়োগ দেব। সেই সাথে স্বাস্থ্য খাতে ৩ হাজার টেকনিশিয়ানের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

[৬] সংসদ নেতা বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে হোটেলে থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, থাকা-খাওয়ায় একমাত্র মেডিকেল কলেজের (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) হিসাব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে বলে বিরোধীদলীয় উপনেতা যেটা বলেছেন, এটা স্বাভাবিকভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি, এত অস্বাভাবিক কেন হলো? এখানে কোন অনিয়ম হলে আমরা তার ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতি ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে। তা অব্যাহত রাখবো।

[৭] শেখ হাসিনা বলেন, যন্ত্রপাতি, টেস্ট কিট, সরঞ্জামাদি কেনাসহ চিকিৎসা সুবিধা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা দ্রুততম সময়ে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরও একটি প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে করোনা মোকাবিলায় আমাদের সামর্থ্য আরও বাড়বে বলে বিশ্বাস করি।

[৮] তিনি সর্বশেষ গত ২৭ জুনের বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এই সময়ে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ২ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচ লাখ এক হাজার ৬৪৪ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সেই তুলনায় আমাদের আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন। এক হাজার ৭৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।

[৯] কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আক্রান্তের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার এক দশমিক ২৬ শতাংশ। ভারতে তিন দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক শূন্য ৩, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক শূন্য ৩ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশে আমরা করোনাভাইরাস জনিত মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও আমরা চাই না কেউ মৃত্যুবরণ করুক।

[১০] প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এই বাজেটে আমরা কর্মসংস্থানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ণ করা হয়েছে। এই জুলাই থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। এর লক্ষ্য হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল করা।

[১১] বিগত ১২ বছরে এক দশমিক ৪ শতাংশ হারে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এর ফলে দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। আশা ছিল, এবার আরও কমিয়ে ফেলবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) এ দারিদ্র বিমোচনের ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হতে পারে। এই মহামারির কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় আমাদের দারিদ্র্যসীমা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কেউ কেউ করছেন। কিন্তু, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা বিশাল যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছি, তার মাধ্যমে এই আশঙ্কা অনেকটাই রোধ করতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি। আগামী অর্থ বছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন শুরু হবে, তখন আমরা দারিদ্র বিমোচন নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবো। দেশকে দারিদ্র মুক্ত করতে পারবো।'

[১২] তিনি বলেন, 'কোভিড-১০ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা গতানুগতিক বাজেট হতে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন এনেছি। স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষ্যে 'ন্যাশনাল প্রিপার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান' প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কোডিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় ৫ হাজার ৫ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

[১৩]প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আস্বস্ত করে বলেছেন, সামনে যে কোন সংকট আসুক না কেন আওয়ামীলীগ সরকার তা শক্ত ভাবে মোকাবেলা করবো। তিনি বলেন, যতবাধাই আসুক না তা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাচ্ছে।

[১৪] তিনি বলেন,করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। জাতি একটি ক্রান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বব্যাপী এই সমস্যা। তবে দেশের সব ধরনের মানুষ যাতে উপকৃত হয় এজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এজন্য আমরা ১৯টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

[১৫] প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে ২০টি বাজেট দিয়েছে। তিনি জাতির পিতা ৩টি বাজেট দিয়ে গেছেন। আর আমরা ১৭ টি বাজেট দিয়েছি। অতীতে বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়নি। আমরা কখনো হতাশায় ভূগি না। বাজেট করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।

[১৬] তিনি বলেন, মহামারি কোভিড-১৯ মহাদুযোর্গের কারণে আজকে বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারপ্রান্তে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি চার দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে বলে প্রাক্কলন দিয়েছে। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর চাকরি হ্রাস, বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫ থেকে ১৫ শতাংশ হ্রাস এবং বৈশ্বিক রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে আমরা বাংলাদেশে একটি বাজেট প্রণয়ন করেছি। এই বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত কঠিন ও দুরূহ কাজ ছিল। এই বাজেট প্রণয়নের সাথে যারা জড়িত, তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, সাধারণ ছুটির মধ্যে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাজেট প্রণয়ন করেছেন।

[১৭] করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী সকলের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারির হাত থেকে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী যেন মুক্তি পান। চিকিৎসাধীনরা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়