শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২০, ১১:০৯ দুপুর
আপডেট : ২৯ জুন, ২০২০, ১১:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কয়েক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

ডেস্ক রিপোর্ট: গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এসব জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং ৩ হাজার ৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় ৪টি উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনার কলমাকান্দায় পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানিতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে এবং সুনামগঞ্জে নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলের ২শ’ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বন্যা দেখা দিয়েছে।জনকন্ঠ

কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। ফলে জেলার চিলমারী, উলিপুর, সদর, রৌমারী, রাজিবপুর ও নাগেশ্বরীসহ ৮টি উপজেলায় নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় আড়াই শতাধিক চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এ অবস্থায় নিচু এলাকার মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর চরের বাসিন্দা জামান জানান, চরের সবগুলো বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। আমি আমার পরিবারের লোকজন নিয়ে পানিবন্দী অবস্থায় খুব কষ্টে দিন যাপন করছি। রাস্তা-ঘাট সব তলিয়ে গেছে। কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। নিমজ্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ২২ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাক সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল।

গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রবিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৫৯ সে.মি. ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলায় ৪টি উপজেলার সুন্দরগঞ্জের ৭টি ইউনিয়ন, গাইবান্ধা সদরের ৩টি, ফুলছড়ির ৬টি ও সাঘাটার ৩টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার লোক এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এদিকে গাইবান্ধা-বালাসীঘাট পাকা সড়কটির আধা কিলোমিটার এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় সড়কের ওপর দিয়ে এখন নৌকা চলাচল করছে। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, কঞ্চিপাড়া, হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও চ-িপুর, সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর ও গিদারী, ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, গজারিয়া, উড়িয়া ও উদাখালী এবং সাঘাটার ভরতখালী, ঘুড়িদহ ও হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় ওইসব বন্যাকবলিত মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অথবা উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে ৪টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

সিরাজগঞ্জ ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার দুপুরে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ মিটার। যা বিপদসীমার (১৩ দশমিক ৩৫ মিটার) ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি ও বড়াল নদীতেও পানি বাড়ছে। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে ভুট্টা, বাদাম, তিল, কাউন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে এসব ফসল। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ হাবিবুল ইসলাম বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি ও টানা বৃষ্টিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর এক হাজার ৫৯ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে।

নেত্রকোনা ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টির পানিতে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ আটটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক। উদ্বাখালি, মঙ্গলেশ^রী, গণেশ^রী ও মহাদেও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। জানা গেছে, গত তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে উপজেলার প্রধান চারটি নদীই উপচে পড়েছে। উদ্বাখালি নদীর পানি উপচে রবিবার সকাল নাগাদ কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ উপজেলা সদরের পূর্ববাজার, চাঁনপুর রোড, শিবমন্দির রোড, স্টেডিয়াম রোড, মুক্তিরনগর, থানা রোড ও মন্তলা এলাকার বহু বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জে নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানে অর্থাৎ ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে গত ৭২ ঘণ্টায় অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, এই বর্ষা মৌসুমে সুনামগঞ্জে সকল নদ নদীর পানি বিপদসীমার সবচেয়ে ওপর ছিল। সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জে ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার এবং পাহাড়ী নদী জাদুকাটার পানি বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেট ॥ অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটে সব ক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেটের ৪টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বানের পানি প্রবেশ করছে। রবিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও সিলেটে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

নীলফামারী ॥ নদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি, বসতঘর একের এক গিলে খেতে শুরু করেছে তিস্তা নদী। উজানের পাহাড়ী ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার নতুন করে আরো ৪৫টি বতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরমধ্যে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত ছাতনাই গ্রামে ২৩ পরিবার ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা ভে-াবাড়ি এলাকায় ২২ পরিবার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়