শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৮ জুন, ২০২০, ০৭:২১ সকাল
আপডেট : ২৮ জুন, ২০২০, ০৭:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জেনে নিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক : হাতের জীবাণু ধ্বংস করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশ কার্যকরী। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট সংক্রমণ কোভিড-১৯ এই প্রোডাক্টের ব্যবহার অবিশ্বাস্য হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। সংক্রমণের ভয়ে আমরা প্রায় সবাই ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অভ্যাস্ত হয়ে উঠেছি।অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার করোনাভাইরাস ধ্বংস করায় এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হলেও এর অত্যধিক ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে তা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলতে পারে যা আমাদের ত্বক এবং শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপ্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বিশেষ করে যেখানে সাবান-পানির ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে প্রোডাক্টটি ব্যবহারের প্রয়োজনই নেই। মূলত সাবান-পানির অনুপস্থিতিতে হাতকে জীবাণুমুক্ত করার তাগিদেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়েছে। এই তরল ভালোর জন্য ব্যবহার করা হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে অথবা ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই হাতের জীবাণু ধ্বংসে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহার এড়াতে যথাসম্ভব সাবান-পানি ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে। এখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া/ঝুঁকি উল্লেখ করা হলো।

একজিমার ঝুঁকি বাড়ায়: হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহারে হ্যান্ড ডার্মাটাইটিস বা একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজিস্ট ক্যারোলিন নেলসন বলেন, ‘একজিমার উপসর্গ হিসেবে ত্বক লাল হতে পারে, শুকিয়ে যেতে পারে, ফেটে যেতে পারে ও এমনকি ফোসকা ওঠতে পারে যা চুলকানি বা ব্যথার কারণ হবে।’ হাতের একজিমা প্রতিরোধে মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঢেলে ১৫-৩০ সেকেন্ড ঘষে শুকিয়ে আসলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, বলেন ডা. নেলসন।

ত্বককে উক্ত্যক্ত করে: ফ্রিল্যান্স ফর্মুলেশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমেটিক কেমিস্ট ভেনেসা থমাস বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার হলো অ্যান্টিসেপ্টিক প্রোডাক্ট, যা ত্বককে জীবাণুমুক্ত করতে ফর্মুলেট করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রধান জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান হলো ইথাইল অথবা আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল। অ্যালকোহলের কড়া গন্ধ দূর করতে অন্যান্য উপকরণও ব্যবহার করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ঘনঘন ব্যবহার করলে ত্বক উক্ত্যক্ত হতে পারে অথবা শুকিয়ে যেতে পারে। আপনার ত্বক সংবেদনশীল হলে এ প্রতিক্রিয়া খুব খারাপ হতে পারে। অ্যালকোহলের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়।’ এ সমস্যা এড়াতেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়: ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ক্রিস নরিস বলেন, ‘কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ইথাইল অ্যালকোহল অথবা আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল থাকে। কিন্তু নন-অ্যালকোহল বেসড কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ট্রাইক্লোসান বা ট্রাইক্লোকার্বান নামক অ্যান্টিবায়োটিক কম্পাউন্ড থাকে। কিছু গবেষণাতে ট্রাইক্লোসানের স্বাস্থ্য ঝুঁকি পাওয়া গেছে। এটির অতি ব্যবহারে উর্বরতা, ভ্রুণের বিকাশ ও হাঁপানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’ তাই বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি এড়াতে ট্রাইক্লোসান বা ট্রাইক্লোকার্বান রয়েছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন না। নিশ্চিত হোন যে অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনছেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে: ডা. নরিস বলেন, ‘ট্রাইক্লোসান সমৃদ্ধ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বেশি ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে, অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ওপর প্রভাব পড়ে না।’ এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল না থাকলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।

ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে: গবেষণায় দেখা গেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ট্রাইক্লোসান ইমিউন সিস্টেমেরও ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষকদের মতে, ট্রাইক্লোসান ইমিউন ফাংশনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে অ্যালার্জির প্রবণতা বেড়ে যায়, বলেন ডা. নরিস।

শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে: যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে বেশি সুবাস ছড়ায় সেখানে থালেট ও পারাবেনের মতো বিষাক্ত কেমিক্যাল বেশি থাকে। থালেট এন্ডোক্রাইন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়, যা শারীরিক বিকাশ ও প্রজননের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পারাবেনও হরমোন কার্যক্রম, উর্বরতা ও প্রজননকে প্রভাবিত করতে পারে।

সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়: করোনাভাইরাসের মতো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে সুরক্ষায় অ্যালকোহল-বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতি ব্যবহারে একজিমা ও অন্যান্য চর্মরোগ হতে পারে। ডা. নরিসের মতে, চর্মরোগে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। কারণ কিছু চর্মরোগে ত্বকের মধ্য দিয়ে শরীরে সহজে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া হ্যান্ড স্যানিটাইজার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকের কিছু নিরীহ ব্যাকটেরিয়াও দূর হয়ে যায়, এসব ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

যে সময়গুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন নাঃ

সাবান-পানির ব্যবস্থা থাকলেঃ
আপনার যদি সাবান-পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে, তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতে, জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো সাবান এবং পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য হাত ধুয়ে ফেলা। সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ফলে জীবাণু দূর হয়। সম্ভব হলে সব পরিস্থিতিতে আপনার হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবান এবং পানি প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত।

আপনার হাত দৃশ্যমান নোংরা হলেঃ
অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ময়লা অপসারণ করে না। হাত ময়লা থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া মারার ক্ষেত্রে কম কার্যকর হবে। ময়লা হাত পরিষ্কার করার জন্য সাবান এবং পানি ব্যবহার করুন।

যখন কেউ আপনার পাশে হাঁচি দেয়ঃ
কেউ যখন আপনার কাছাকাছি কাশি করে বা হাঁচি দেয়, আপনি শ্বাস নেয়ার সময় বাতাসের ফোঁটা থেকে সংক্রমণটি ছড়ায়। দূষিত হাত সংক্রমণ ধরার একমাত্র উপায় নয়। আপনার কাছে যখন কেউ কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন তখন বারবার আপনার হাত স্যানিটাইজ করবেন না।

আপনি কাউকে বা কিছুই স্পর্শ করেনিঃ
আমাদের মধ্যে অনেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন অভ্যাসের বাইরে। তবে একটি নতুন গবেষণা বলছে, ঘন ঘন এর ব্যবহার প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত ব্যবহারের সাথে সাথে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা যত বেশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি ততই অ্যালকোহল সহ্য করতে পারা জীবাণু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। সুতরাং, স্যানিটাইজার কেবল প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্যই সংরক্ষণ করুন।

আপনি মাত্র ৫ মিনিট আগে স্যানিটাইজ করেছেনঃ
হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকের জ্বালা এবং শুকনো হাতের কারণ হতে পারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব সময় ব্যবহার না করে শুধুমাত্র প্রয়োজনে ব্যবহার করা ভালো। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর মতে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রয়োগের সঠিক উপায় হলো প্রায় ২০ সেকেন্ডের জন্য উভয় হাতেই এপিঠ-ওপিঠ এটি ঘষতে থাকা।

যখন শিশুদের আশেপাশে থাকেনঃ
হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুদের জন্য ব্যবহার করা নিরাপদ কারণ স্যানিটাইজারের ফলে শরীরে অ্যালকোহলের কোনো উল্লেখযোগ্য শোষণ হয় না। তবে অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজারের ইনজেশন বা শ্বাস গ্রহণের ফলে আঘাত বা বিষক্রিয়া হতে পারে। ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, মার্কিন বিষ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলো শিশুদের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এক্সপোজার সম্পর্কে প্রায় ৮৫,০০০ কল পেয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়