শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২০, ১১:৫৩ দুপুর
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২০, ১১:৫৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] করোনার নকল সুরক্ষাসামগ্রীতে ফুটপাথ সয়লাব , বাড়ছে ঝুঁকি

মো. তৌহিদ এলাহী : [২] মহামারি করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নানা ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী প্রয়োজন । সকল সুরক্ষা পণ্য পিপিই, মাস্ক, অক্সিমিটার, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, স্যানিটাইজার, ফেসশিল্ড, হ্যান্ড গ্লাভসের চাহিদা বেড়েছে। আর এ চাহিদাকে ঘিরেই তৈরি হচ্ছে নকল সুরক্ষাসামগ্রী ।

[৩] করোনাকালে বিভিন্ন পন্য নকল করে বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এসকল নকল পন্যে ছেয়ে গেছে বাজার। রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে যত্রতত্র এসব নকল সামগ্রী বিক্রি করছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ ঝুড়িতে এসব পন্য বিক্রি করছেন। বিভিন্ন স্থানে রীতিমতো বাজার বসছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

[৪] মানহীন সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন নকল এসব সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই, সাধারণ মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহারে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।

[৫] করোনার শুরুর দিকে নকল পণ্যের রমরমা ব্যবসার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, মুনাফালোভীদের এই অমানবিক তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে করোনা নিয়ে বিপদ আরও বাড়বে। ইনকিলাব

[৬] তবে শুধু রাজধানীই নয়; সারাদেশেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে নকল ও মানহীন করোনা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে দেদার। করোনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশ চড়া। নকল ও ভেজাল সুরক্ষাসামগ্রীর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হলেও পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।

[৭] সূত্রমতে, করোনভাইরাসের মতো জীবাণু থেকে রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, যা ব্যবহারে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। প্রতিদিনই বাড়ছে এর চাহিদা। এই সুযোগে স্যানিটাইজার নকল করে বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এসব নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতসহ বিভিন্ন দোকানে।

[৮] মো. ইসমাইল হোসেন ছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী। ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় এখন তিনি মাস্কের ব্যবসা করেন। একটি অভিজাত শপিংমলের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাকিলেরও একই অবস্থা। তিনিও চীন থেকে এন-৯৫ মাস্ক এনে বিক্রি করছেন।

[৯] ইসমাইল পুরান ঢাকা থেকে এন-৯৫ মাস্ক পাইকারি কিনলেও শাকিল চীন থেকেই পণ্য আনেন। তারা বলেন, তাদের কারোরই এসব পণ্যের ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অনুমোদন নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও।

[১০] ব্যবসায়ী বনে যাওয়া শাকিল বলেন, আসল নকল আমি চিনি না। কিছু করে সংসার চলছে। ইসমাইল, শাকিলদের মত ব্যবসায়ীরা নকল (কপি) কেএন-৯৫, এন-৯৫ মাস্ক বিক্রি করায় চরম হুমকির মুখে পড়ছে জন-জীবন।

[১১] বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুম্যান্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপম্যান্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা শাখার সভাপতি জাভেদ আহমেদ বলেন, ওষুধ ও সার্জিক্যাল পণ্যের পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড। সারাদেশে পণ্য সরবরাহ করা হয় এই বাজার থেকে। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে মিটফোর্ড এলাকার ফুটপাত হয়ে গেছে মূল বাজার। অন্য পেশার লোকজন মানহীন পণ্য এনে মিটফোর্ড ও আশপাশে বাবুবাজার, নাজিরাবাজার এলাকার সড়কে বিক্রি করছে। অথচ রাজধানীর উত্তরার একজন গ্রাহক মিটফোর্ড এলাকায় এসে মানহীন নকল পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নাম হচ্ছে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীদের। অনেকবারই এ বিষয়ে প্রশসানকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

[১২] তবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভেজাল ও নকল বিরোধী অভিযান চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

[১৩] করোনার শুরু থেকে যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে কাজী ম্যানুফ্যাকচারের মালিক কাজী মুন্না নকল স্যানিটাইজারের ব্যবসা করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রায়েরবাগ এলাকার একটি ফ্ল্যাটের বেজমেন্টে এই কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পরে কাজী মুন্নাকে আটক করে র‌্যাব।

[১৪] নকল মাস্ক ও সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রির অপরাধে গত ২২ জুন ঢাকার মোস্তফা কামাল নামের এক খুচরা ব্যবসায়ীকে এক বছর কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত নিউমার্কেটের ৪টি দোকানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে। রাজধানীর পান্থপথে এএসএম ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ নকল গ্লাভস ও গাউন জব্দ করেছে র‌্যাব। এ সময় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় মালিক এ এস এম মুসাকে আটক এবং গোডাউন সিলগালা করে।

[১৫] পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, অনেকেই বিদেশ থেকে মানহীন পণ্য এনে অভিজাত ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করছে। এভাবে যারা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের কিছু জায়গা থেকে উৎপাদক ও বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

[১৬] ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনা পরিবেশে সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করা মানেই হচ্ছে সেসব পণ্যে আর সুরক্ষা রইল না। এসব সামগ্রী যারা ব্যবহার করছেন, তারা ধরে নিচ্ছেন সুরক্ষায় আছেন। অর্থাৎ অজান্তেই তারা নিজের ক্ষতি করছেন।

[১৭] জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ও করোনা চিকিৎসার সমন্বয়ক ডা. মোক্তাদির ভুঁইয়া বলেন, দেখতে পাচ্ছি অনেকে আক্রান্ত হয়ে আমাদের কাছে আসছেন। আবার অনেকে উপসর্গ নিয়ে আসছেন। এসব রোগী মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। তারপরও তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এখানেই উদ্বেগের বিষয়। নিম্নমানের নকল মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করার কারণেই তারা বিপদে পড়ছেন। তিনি বলেন, যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সুরক্ষাসামগ্রী যদি নকল আর ভেজাল হয়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়