সোহাগ হাসান জয়,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: [২] কয়েকদিনের ভাড়ি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নের ফসল। চলতি মৌসুমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করা কৃষকের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে।
[৩] বুধবার সদর উপজেলার মেছড়ার চর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বাড়ার ফলে চরের শত শত হেক্টর জমির পাট, তিল, বাদাম, ভুট্টা, আউশ, কাউন, আখ ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গিয়ে ফসল পঁচতে শুরু করেছে। একারণে পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই বাধ্য হয়ে ফসল কাটতে শুরু করেছেন অনেক কৃষক। এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন অন্যের জমি বর্গা ও চড়া সুদে টাকা নেয়া চাষিরা।
[৪] জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯৫৫পাট, ৩৭১তিল, ১০ভুট্টা, ৫৫আউশ, ২৩সবজি, ১৭কাউন, ৭৮আখ ক্ষেতসহ মোট ১৫’শ ৯ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকের ৫০শতাংশ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হবে।
[৫] সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন(৫৫), আমিনুল ইসলাম(৪৫) ও মকবুল হোসেন বলেন, প্রতিবারের মতো আমরা চলতি মৌসুমে ৬ একর জমিতে পাট, তিল, আউশ চাষ করেছি। এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে আমাদের অধিকাংশ জমির ফসল নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। ফসল এখনও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। পানিতে তলিয়ে থাকা জমির কিছু অংশের পাট কাটতে শুরু করেছি। যা থেকে অর্ধেক পাটও উৎপাদন হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
[৬] সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, হঠাৎ করে যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় বেশ কিছু ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে ফসল ঘরে তুলে নেয়া সম্ভব নয়। এর ওপর আবার শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। চরাঞ্চলে মানুষ চরম বিপাকে দিনানিপাত করছে। তবে, বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
[৭] সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
[৮] বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, দ্রুতগতিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় নদীর পানি হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে পানি আর বৃদ্ধি পাবে না। দুয়েক দিনের মধ্যে হ্রাস পেতে পারে। প্রতিনিয়ত নদীর তলদেশে সার্ভে করা হচ্ছে। যেন কোথাও কোনো ক্রটি থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারি। তবে, বাঁধগুলোর অবস্থা ভালো আছে।
[৯] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানিতে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১৫’শ ৯ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এভাবে ফসল বেশিদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকলে গোড়া পঁচে গাছ মরে যাবে। তবে পানি দ্রুত নেমে গেলে গাছ বেঁচে যাবে এবং উৎপাদন অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্পাদনা: জেরিন
আপনার মতামত লিখুন :