আসিফ নজরুল : পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের রয়েছে শোষন ও বঞ্চনার দু:সহ স্মৃতি। ১৯৬৬ সালের বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার ঘোষনার মধ্য দিয়ে আমরা তাই স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলাম, এই আন্দোলনের ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে আমরা আলাদা রাষ্ট্র হতে চেয়েছিলাম ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালোরাতের আগেই। কেন আমরা এসব চেয়েছিলাম? কেন পাকিস্তানকে আমরা ঘৃণা করেছিলাম? বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কিত দলিল ও রচনাবলী অনুসারে কারণগুলো ছিল এমন: ১) পাকিস্তান জনরায় ও জনগনের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করতো না। ২) পাকিস্তান এদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত। ৩) পাকিস্তান এদেশের মানুষের উপর নিপীড়ন চালাতো। ৪) পাকিস্তান আমাদের সাথে চরম বৈষম্য করতো। ৫) পাকিস্তান অসম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করতো না। কাজেই পাকিস্তানপন্থী (এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী) বললে এসব কাজে বিশ্বাসী বা এসব কাজ যারা করতো তাদের সমর্থনকারীদের বোঝাবে। এ বিবেচনায় যারা এখনও জনগনের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না, দূনীতি আর লুটপাট করে বিদেশে সম্পদ পাচার করে, গুম, ক্রসফায়ার ও হত্যার মতো চরম নিপীড়ন করে, দেশের বড় অংশের মানুষের সাথে বৈষম্য করে তারা পাকিস্তানপন্থী। যারা এসব পাকিস্তানপন্থী কাজকে মেনে নেয় বা সমথন করে তারাও পাকিস্তানপন্থী। এদের অন্তরের রয়েছে সেই পাকিস্তানী ভাবধারা যাকে ঘৃণা করে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। সাম্প্রদায়িকতা আরেকটি পাকিস্তানপন্থী ভাবধারা। এজন্য আমাদের সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য ও নিপীড়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিবেচনায় যে কোন ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়ের (হিন্দু, খৃষ্টান বা ধমীয় শিক্ষাব্যবস্থার অনুসারী যেমন মাদ্রাসার ছাত্র)প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণও পাকিস্তানপন্থী আচরন। এখন কেউ যদি শুধু সাম্প্রদায়িকতার বিবেচনায় পাকিস্তানপন্থী না হয়, কিন্তু অন্য সকল বিবেচনায় (উপরের ১ থেকে ৪) পাকিস্তানপন্থী হয় তাহলে সেও মূলত পাকিস্তানপন্থী। এসব পাকীমন, পাকীহৃদয় বা পাকিস্তানপন্থী কাজের প্রতিবাদ করা হচ্ছে বাংলাদেশকে ধারণ করা (এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারন করা)। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এদেশে এসবের প্রতিবাদকারীদের বরং গালি দেয়া হয় পকিস্তানপন্থী হিসেবে। আরো আশ্চর্য হচ্ছে এ গালিটা আবার দেয় তারা যারা নিজেরাই কাজেকর্মে পাকিস্তানপন্থী (অর্থাৎ বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা, অবাধ লুটপাট ও সম্পদ পাচার করা, জনগনকে নিপীড়ন করায় বিশ্বাসী), যাদের অন্তরে আছে ঘৃনিত পাকিস্তান ভাবধারা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা পাকিস্তানী চিন্তাধারার কবর দিতে চেয়েছিলাম। এ চেতনা কি তা স্পষ্টভাবে আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে লেখা আছে। আমি উপরে যে পাচটি কাজের তালিকা দিয়েছি সেগুলো প্রতিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। স্বাধীন বাংলাদেশে এসব কাজ যে করবে, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লংঘন করবে। যে যতোবেশী করবে সে ততোবেশী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী বা পাকিস্তানপন্থী। এমন পাকিমন নিয়ে ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ-এ অন্য যে কোন দেশের দাসত্ব করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আরেকটি বড় লংঘন। বাংলাদেশে তাহলে কারা পাকি হৃদয়ের, কারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী?
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :