শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৩ জুন, ২০২০, ১১:৩৬ দুপুর
আপডেট : ২৩ জুন, ২০২০, ১১:৩৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] বৈষম্যে সময় নষ্ট, ঝরছে প্রাণ

নিউজ ডেস্ক : শুক্রবার বিকালে যখন হাফিজুর রহমানের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছিল, করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এই রোগীকে বাঁচানোর লড়াইয়ে একমাত্র হাতিয়ার ছিল অক্সিজেন। কারণ পুরো জেলায় কোনো আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা নেই। দি ডেইলি স্টার

পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হাফিজুর রহমানের বয়স ৪৭ বছর। তার ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুব প্রয়োজন ছিল। তাকে দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে তিনি জ্বর ও তীব্র শ্বাস কষ্টে ভুগছিলেন— বলেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হোসেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আরও বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে তাকে রাজশাহীতে নিতে বলা হয়েছিল। শ্বাস নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমরা তাকে অক্সিজেন দিয়েছিলাম। আমাদের কাছে সেটাই ছিল। কিন্তু তাতেও রোগীর অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি। সেই মুহূর্তে দরকার ছিল তাকে আইসিইউতে নিয়ে ভেন্টিলেটরের মাধম্যে শ্বাস নিতে সাহায্য করা। পাবনা রাজশাহী বিভাগের একটি পুরোনো জেলা। পাবনা জেনারেল হাসপাতালটি গত কয়েক বছর ধরে সাময়িকভাবে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এখানে কোনো আইসিইউ নেই। যে কারণে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় এক শ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে যাত্রা করতে হয়েছিল।’

হাফিজুরের স্বজনরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘শুক্রবার রাত ১০টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে হাফিজুরকে আবারও অক্সিজেন দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা অক্সিজেন চলার পরেও কোনো উন্নতি হয়নি। তখন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আইসিইউতে নেওয়ার পথে স্ট্রেচারে তার মৃত্যু হয়।’

হাফিজুরের স্ত্রী মমতাজ রহমান জলি বলেন, ‘রাজশাহীতে যাওয়ার পুরোটা পথ তিনি অস্ফুট কণ্ঠে অক্সিজেনের জন্য কেঁদেছেন। আমাদের বারবার বলছিলেন, আমাকে অক্সিজেন দাও, আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে পাবনায় ফিরিয়ে নিয়ে যাও, সেখানে অক্সজেনে আমি ভালোই ছিলাম। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ না যে অক্সিজেন ছাড়া আমি মরে যাচ্ছি?’

‘যদি পাবনাতেই আইসিইউ ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে হয়তো আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারতাম’— বলেন মমতাজ রহমান।

হাফিজুরের এই পরিণতি জেলা শহরগুলোতে আইসিইউ না থাকায় করোনায় আক্রান্ত কিংবা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা যে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, তার এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত।

হাফিজুর যখন পাবনায় আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে ভুগছিলেন, তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫ শয্যার আইসিইউতে অন্তত ১০টি শয্যা ফাঁকা পড়ে ছিল।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অন্তত ৪৯ জন মারা গেছেন, শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ৭২৪ জন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন অন্তত ৪৪ জন, যাদের আট জন ছিলেন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী। বাকি ৩৬ জন সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা যান। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন এমন যাদেরকে হফিজুরের মত শেষ মুহূর্তে অন্য জেলা থেকে শুধু আইসিইউর জন্য রাজশাহীতে স্থানান্তর করতে হয়েছিল।

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ রাজশাহী ও বগুড়ায় তিনটি আসিইউতে মোট ২৩ শয্যার ব্যবস্থা করেছে। আগামী ২৫ জুন বগুড়ায় আরও চারটি অতিরিক্ত শয্যা যোগ করা হবে। এই বিভাগের অন্য ছয়টি জেলা— জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে কোনো আইসিইউ নেই।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেভাবে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়ছে, সে তুলনায় আমাদের আইসিইউ ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে এই অবস্থাতেই সব ব্যবস্থাপনা সামলাতে হচ্ছে।’

গত মার্চে দেশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার শুরুতেই রাজশাহী বিভাগের সব জেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জেলা পর্যায়ে আইসিইউ না থাকায় তাদের উদ্বেগের কথা সরকারকে জানান। পরে কোভিড-১৯ রোগী বাড়তে থাকায় তারা সরকারের কাছে জেলাগুলোতে আইসিইউ সরবরাহের আবেদনও করেন।

এ প্রসঙ্গে ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন, শিগগির রাজশাহীর প্রতিটি জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ব্যবস্থা করা হবে। কিছু দক্ষ জনবল তো হাসপাতালগুলোতে আছেই। দুএকজন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবলের সাহায্য পেলে জেলা পর্যায়ে আইসিইউ পরিচালনা করা কঠিন হবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়