মহিউদ্দিন আহমাদ : ব্রিগেডিয়ার বারী আর জেনারেল মইনের সংগে কথা শেষ করে উড়াল দিলাম ওয়াশিংটন। ডালাস এয়ারপোর্টে অপেক্ষায় এক তরুণ। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন মেরিল্যান্ডে চমৎকার একটা গেস্ট হাউজে। ঢাকা থেকেই ঠিক করা ছিল।
পৌঁছেই ফোন দিলাম ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে। ধরলেন তাঁর স্ত্রী। বললেন, তিনি বাইরে। ফিরলে আপনার কথা বলব। পাঁচ মিনিটের মাথায় কল ব্যাক করলেন। বললেন, -কবে আসতে চান?
-ইচ্ছে হচ্ছে, এখনই আসি।
-আজ না।
-তাহলে আগামীকাল? আপনার জন্যই ওয়াশিংটনে আসা। আমার আর অন্য কাজ নেই।
-আসুন।
-বিকেল পাঁচটায় আসি?
-পারফেক্ট!
-ঠিকানাটা বলেন?
ঠিকানাটা টুকে নিলাম।
উনি মেরিল্যান্ডেই থাকেন। বেশি ঘোরাঘুরি করতে হবে না।
এরপর ফোন দিলাম আমার ঘনিষ্ঠ আলী আহমেদকে। সে-ও থাকে মেরিল্যান্ডে। বললাম, কাল বিকেলে তুমি আমাকে নিয়ে যাবে।
-তথাস্তু।
গেলাম ঠিকঠাকমতো। আলী আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেল। সুন্দর একটা একতলা বাংলো। আমি বাসায় ঢুকলাম।
ড. আহমদ একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ছিলেন। যদিও আমি ছাত্র হিসেবে ঢুকেছি অনেক পরে। খুব মেধাবী। অনার্স আর এমএ পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলেন। তাঁর ক্লাসমেট ড. ইউনূস ফার্স্টক্লাস পাননি। ড. আহমদ সিএসএস পরীক্ষায়ও সারা পাকিস্তানে ফার্স্ট হয়েছিলেন বলে শুনেছি। আমাকে খুব আন্তরিকতার সংগে স্বাগত জানালেন। কফি আর মজাদার স্ন্যাকস দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। খেতে খেতে আলাপ হলো অনেক। প্রায় দু'ঘন্টা।
এবার ফেরার পালা। বললেন,
-যাবেন কীভাবে?
-আমার এক বন্ধু বাইরে আছে কোথাও। ফোন দিলেই চলে আসবে।
-উনি বাইরে কেন? তাকে আসতে বলুন?
আমি আলীকে ফোন দিতেই ও চলে এল দু'মিনিটের মধ্যে।
আমার কাজ আপাতত শেষ। ফিরে এলাম ডেরায়। একজন নিপাট ভদ্রলোকের সংগে পরিচিত হবার মুগ্ধতা এখনো রয়ে গেছে আমার মধ্যে। অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ওই সময় যারা নিজেদের ভিকটিম মনে করেন। আমি তো গবেষক। ভিকটিমের মনস্তত্ত্ব দিয়ে দেখলে তো আমি ইতিহাস লিখতে পারব না!
তাঁর সংগে কবে দেখা হবে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। আটদিন থাকার প্ল্যান ছিল। একদিনেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় মিলল অখণ্ড অবসর, যা ঢাকায় সচরাচর পাই না। বাকি দিনগুলোর অভিজ্ঞতা মনে রাখার মতো। সে আরেক কাহিনী।
(ছবি: আলী আহমেদ, ৩১ অক্টোবর ২০১৭)
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :