সালেহ্ বিপ্লব : [২] চিকিৎসা সেবায় অবহেলাজনিত কারনে কোনো রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হলে আইনের আওতায় তার প্রতিকার পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই- এই অভিমত ব্যক্ত করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র হেল্থ স্পেশালিষ্ট ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের সেবার মান মূল্যায়নে রোগীদের মতামত দেয়ার ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, রোগীরা কোনো কারনে ক্ষতিগ্রস্থ বা ক্ষুব্দ হলেও, চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্তা থাকা দরকার। সেবা গ্রহিতা হিসেবে রোগীর কাছে চিকিৎসক বা প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহির ব্যবস্থা করার ও তাগিদ দেন বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
[৩] কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত বাঁচানোর উপায়‘ নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এই মন্তব্য করেন। ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার করোনায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
[৪] তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রকট মেধা শূন্যতা এবং অদক্ষতার কারনে দেশের স্বাস্থ্যখাত সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান বিহীন ব্যক্তিদের হাতেই স্বাস্থ্যখাতের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।
[৫] ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের নেতৃত্ব দেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়। বিভিন্ন মন্ত্রনালয় থেকে বদলি হয়ে আসা কর্মকর্তরা সেখানে দায়িত্ব পালন করেন।দেশের স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে তাদের অধিকাংশেরই সম্যক কোনো ধারনা নেই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে স্বাস্থ্যখাত পরিচালনার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, অধিদপ্তরগুলোর দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিতে হবে।
[৬] করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে ড. জিয়া উদ্দিন হায়দার বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবলোয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের অব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং সমন্বয়হীনতা ছিলো। সরকার আসলে কি করতে চান- এই বিষয়টা সবসময়ই জনগনের কাছে অস্পষ্ট থেকেছে। যে কোনো পদক্ষেপে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে চাইলে তাদের আস্থায় রাখতে হবে। কোন সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হচ্ছে সেটা জনগনের কাছে স্পষ্ট হতে হবে। কিন্তু সরকার জনগনকে আস্থায় নেয়ার কোনো চেষ্টাই করেনি।
[৭] ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, করোনা মোকবেলার জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থাও সরকার নেয়নি। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি যে অর্থ দিয়েছে সেগুলোও ঠিক মতো খরচ হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারি বেসরকারিখাতের সমন্বয়ে করোনা মোকাবেলায় একটি অংশিদারিত্ব গড়ে উঠতে পারতো। কিন্তু সেটি করা হয়নি।
[৮] বেসরকারিখাতের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারিখাতে স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয় ১৯৮২ সালে সরকারের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে। সেই সময় বেসরকারিখাত বলতে ছিলো ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার এবং ছোটোখাটো কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বর্তমানে বেসরকারিখাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও আইনি কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো সেই ১৯৮২ সালের আইনের কাঠামোই রয়ে গেছে।তিনি বলেন, আইনি কাঠামোর গলদের সুযোগ নিয়েই বেসরকারিখাতের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :