শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২০, ০১:৪২ রাত
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২০, ০১:৪২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] সামরিক শক্তিতে ভারতের থেকে চীন এগিয়ে! মানলেন না মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

বাশার নূরু:[২] গত সোমবার পূর্ব লাদাখে চীনের সঙ্গে সংঘাতে মারা গেছে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। ওই এলাকাতেই ১৯৬২ সালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ। আকসাই চীনের দখল নিয়ে টানা এক মাস চলেছিল লড়াই। শেষ পর্যন্ত এলাকার দখল নেয় চীন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। যুদ্ধে চীনের ৭০০ জওয়ান মারা যান। এপক্ষে সংখ্যাটা ছিল প্রায় দ্বিগুণ।আজকাল

[৩] এখন কিন্তু ছবিটা আলাদা। হিমালয়ের বুকে আবার এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে ভারতকে পর্যুদস্ত করা সহজ হবে না। বলছে বোস্টনের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট–এর বেলফার সেন্টার এবং ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি। এখানকার গবেষকরা দুই দেশের সামরিক শক্তির একটি ত্ল্যুমূল্য বিচার করেছেন। তাতেই তাঁদের সিদ্ধান্ত, ৫৮ বছর আগে যা হয়েছিল, এবার আর হবে না।

[৪] পারমাণবিক অস্ত্র দু’টি দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। ১৯৬৪ সালে চীন পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়েছে। ভারত হয়েছে ১৯৭৪ সালে। স্টকহল্ম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, চীনের কাছে ৩২০টি পারমাণবিক সমরাস্ত্র রয়েছে। ভারতের রয়েছে ১৫০টি। গত বছর চীনের ঝুলিতে এসেছে আরও ৪০টি পারমাণবিক সমরাস্ত্র। ভারতের এসেছে ১০টি। ক্ষেপনাস্ত্র, ডুবোজাহাজ, বম্বার রয়েছে দুই দেশেরই। দুই দেশই চুক্তিবদ্ধ, যে আগে নিজে থেকে বিপক্ষের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। একমাত্র বিপক্ষ করলে তবেই জবাব দেবে।

[৫] বায়ুসেনা বেলফার বলছে, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে ভারত ২৭০টি যুদ্ধবিমান এবং ৬৮টি গ্রাউন্ড অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে। চীন সীমান্তের কাছে ভারতের বেশ কয়েকটি গুপ্ত বায়ুসেনা ঘাঁটি রয়েছে। সেখান থেকেই উড়বে যুদ্ধবিমানগুলো। সেখানে ভারতকে আক্রমণের জন্য সীমান্তের কাছে প্রস্তুত থাকে চীনের ১৫৭টি যুদ্ধবিমান এবং গুটিকয়েক গ্রাউন্ট অ্যাটাক এয়ারক্রাফট। সীমান্তের কাছে চীনের আটটি বিমানঘাঁটি রয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগই আবার নাগরিকদের জন্য অসামরিক কাজেও ব্যবহৃত হয়। সমীক্ষায় এও দেখা গেছে, যে চীনের বিমানঘাঁটির অনেকগুলোই রয়েছে জিনজিয়াং এবং তিব্বতে। একেই উচ্চতা বেশি। তায় বন্ধুর ভূমি। সেখানে ভৌগোলিক কারণেই যুদ্ধবিমান ওঠানামা সহজ নয়। ফলে খুব বেশি ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে সেখান থেকে বিমান ওঠানামা করতে পারবে না। যুদ্ধবিমানে জ্বালানি ভরানোর জন্য চীনের যথেষ্ট ট্যাঙ্কারও নেই। ভারতের মিরাজ ২০০০ এবং সুখোই সু ৩০–কে বেশ শক্তিশালী বলেই মনে করছেন বেলফারের সমরবিজ্ঞানীরা। সব আবহাওয়ায় কাজ করতে পারে এগুলো। সেখানে চীনের জে ১০ ই শুধু সব আবহাওয়ায় কার্যকর। বাকি জে ১১ এবং সু ২৭ এর এই ক্ষমতা নেই।

[৬] বেলফারের রিপোর্ট আর একটা তথ্যও তুলে ধরেছে। ভারত চীনকে মোকাবিলার জন্য অনেকদিন ধরেই হিমালয় অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি মজবুত করেছে। সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। চীন কিন্তু ততটাও করেনি। নিজের শক্তির বেশিরভাগটাই প্রয়োগ করেছে পূর্ব সীমান্তে। মার্কিন হামলা ঠেকাতে সেখানেই বেশি সামরিক শক্তি খরচ করেছে। গবেষকরা আরও বলছেন, সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানের সঙ্গে টুকটাক সংঘর্ষের কারণে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছে। মহড়ার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) সে রকম কোনও সুযোগ পায়নি। তারা বরং সেনাবাহিনীর ওপরেই বেশি ভরসা রাখে।

[৭] স্থলবাহিনী— বেলফারের গবেষকদের মতে, এক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে ভারত। বারবার পাকিস্তান এবং আভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে ভারতীয় সেনা অনেক বেশি তৈরি হয়ে গেছে। তাছাড়া, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স সেনাকে বিভিন্ন সময় সাহায্যও করেছে। সেখানে চীন সেনা ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামকে মোকাবিলার পর থেকে কিছুই করেনি। কম্বোডিয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিরোধ। তখন ভিয়েতনাম ফৌজের কাছে একভাবে হেরেই যায় চীন। কারণ তার আগে মার্কিন ফৌজের মোকাবিলা করে ভিয়েতনাম সেনা অনেক বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছিল।

[৮] বেলফারের হিসেব অনুযায়ী, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে দু’দেশেরই প্রায় সম সংখ্যক সেনা মজুত রয়েছে। ভারতীয় সেনার সংখ্যা সেখানে দু’ লক্ষ ২৫ হাজার। চীন সেনার সংখ্যা দু’ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার। তবে চীনের সমরাস্ত্র আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি। সেদিক থেকে চীন কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে।

[৯] জোট ওয়াশিংটন সম্প্রতি ভারতকে ‘প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম শাগরেদ’ বলে অভিহিত করেছে। কথাটা ভুল বলেনি। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু অভিযানে মার্কিন সেনাকে সাহায্য করেছে ভারতীয় সেনা। তাদের থেকে শিখেছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োগ পদ্ধতি। নতুন নতুন রণকৌশল। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও তৈরি হয়েছে দু’দেশের সেনার মধ্যে। তাই চীনের প্রত্যেকটি ছোটখাট কৌশল সম্পর্কে ভারতীয় সেনাকে অভিহিত করে মার্কিন সেনা। চীনের অভ্যন্তরভাগ থেকে যদি বাহিনী এনে লাদাখ সীমান্তের কাছে মোতায়েন করা হয়, তাহলে সেই খবর আগেভাগেই ভারতীয় সেনাকে দেবে মার্কিন গোয়েন্দা। জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার বাহিনীকেও একইভাবে সাহায্য করেছে ভারতীয় সেনা। তাই তাদের সাহায্য আসবে বলেই মত বেলফারের গবেষকদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়