শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২০, ০৯:২৮ সকাল
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২০, ০৯:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মহিউদ্দিন আহমেদ : অভিনেতা ইরেশ যাকেরের মুখে “মালাউন”

মহিউদ্দিন আহমেদ :  ১৬ জুন,২০২০ সকাল ৮টায় বিবিসি'র খবরে, "Racism in entertainment industry" শিরোনামের একটি খবর দেখে এই পোস্টটি লিখতে প্রলুব্দ্ব হয়েছি।

ইতোমধ্যে সারা দুনিয়ার মানুষজন জেনে গেছেন যে গত ২৫ মে আমেরিকার মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিসের নির্যাতনে আফ্রিকান- আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের নিহত হওয়ার ঘটনা সারা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এখন সেই Black Life Matters (BLM)এর ধাক্কায় লন্ডনে রবার্ট ক্লাইভের মূর্তি ভেংগে ফেলার দাবী উঠেছে। দাবী উঠেছে লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কোয়ার থেকে স্যার উইন্সটন চার্চিলের মূর্তি সরানোরও। কারন হিসাবে বলা হচ্ছে, এরাও কলোনীগুলিতে অত্যাচার নির্যাতনের প্রতীক, এদের মূর্তি গৌরবের কিছু নয়। কথা হচ্ছে, ইউরোপীয়রা তিন- চার শ' বছর আগে থেকে আফ্রিকা- এশীয়ার লোকদের উপর যে অত্যাচার- নির্যাতন চালিয়েছে তার জবাবদিহিতা এখন তাদের করতে হবে। এই ব্যাকগ্রাউন্ডেই আজ সকালের বিবিসি'র খবরটির গুরুত্ব। এখন খোজ খবর নেয়া শুরু হয়েছে, পশিমা দুনিয়ার বিনোদন জগতেও সাদা- কালোর বৈষম্যের পরিমান এবং গভীরতা।
আমাদের এই দেশেও যে এমন বৈষম্য আছে তা কোন বিতর্কিত বিষয় নয়। আমরা অবশ্যই ফর্সা মেয়েকে পাত্রী হিসাবে বেশী পছন্দ করি, ফর্সা লোককে "হ্যান্ডসাম" বলি। এই তো গেল গায়ের রঙের ব্যাপারে। কিন্ত জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈষম্যও যে আমাদের মধ্যে কেমন গভীর এবং প্রকট তা দেখলাম কয়েকদিন আগে ইউ টিউবে একটি নাটক দেখতে গিয়ে। এখানে একটি কথা বলতেই হয়, আমি টিভিতে কয়েক বছর ধরে কোন নাটক দেখছিপ না। একে তো বিজ্ঞাপন সন্ত্রাস, তারপর, নাটকের নিম্নগামী গুনগত মান। এই বিষয়ে ভবিষ্যতে হয়ত আলাদা আলোচনা করতে পারি।

কিন্ত আমি বড এক ধাক্কা খেলাম যখন অভিনেতা ইরেশ যাকেরের মুখে "মালাউন" ডায়ালগটা শুনলাম। নাটকটির নাম "আজব ছেলে"; এতে অভিনয় করেছে ইরেশ যাকের, ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু এবং খুব সম্ভব, কামরুল হাসান নামের একজন। নাটকটির পরিচালনায় : গোলাম সোহরাব দদুল। মূল গল্পকার হিসাবে বলা হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ; নাট্যরুপ দিয়েছে মানিক মানবিক।

তো এই নাটকটির একটি মূখ্য চরিত্র "আজব ছেলে"টি হেঁটে হেঁটে ভারত সীমান্তের দিকে যাচ্ছে, তার পা রক্তাক্ত, সে খায় শুধু চিডা এবং বোতলের জল। সেই একই পথ দিয়ে, মনে হয়, আনন্দভ্রমনেই যাচ্ছে একটি পাজেরোর মত গাডীতে করে ইরেশ যাকের, তিশা এবং ফজলুর রহমান বাবু। বাবু গাডীর ড্রাইভার, কিন্ত গাডী চালাচ্ছে ইরেশ যাকের। ড্রাইভার পেছনের সীটে একজন আরোহী। ইরেশ যাকের কথায় কথায় অশ্লীল গালাগাল করে একে- ওকে, পথের মাছ ব্যাবসায়ীকে, এবং তাদের পেছনে পেছনে আসা হেঁটে আসা "আজব ছেলেটি"কে। এক পর্যায়ে ছেলেটি একটি গাছের নীচে বসে বিশ্রাম নেয়, চিডা- জল খায় । তাকে দেখে ইরেশ যাকেরের সন্দেহ তীব্রতর হয়, গাছের নীচে গিয়ে ছেলেটিকে জোর করে গাডীতে তুলতে চেস্টা করে ; কারন , সন্দেহ হয় ইরেশ যাকেরের, ছেলেটি মার্ডার করে ভারতে পালাচ্ছে। তিশা তাকে গাডীতে লিফট দিতে চায়, কিন্ত সে লিফট নেবেনা, সে হেঁটেই যাবে।

তিশার প্রশ্নের জবাবে অবশেষে "আজব ছেলে"টি বলে ৭১এ তার মা তাকে পেটে নিয়ে ভারতে পালাতে চেয়েছিল, কিন্ত পথেই এক গ্রামে তার জন্ম এবং পরে তার মা'র মৃত্যু। সে এখন দেখতে চায়, তাকে পেট নিয়ে হাঁটতে তার মা'র কত কস্ট হয়েছিল। সেজন্যই সে হেঁটেই যেতে চায়।তার এই কাহিনী শুনে সকলেরই মাথা নত হয়ে যায়, ইরেশ যাকেরেরও।

কিন্ত ক্ষতি এবং অন্যায় ইরেশ যাকের যা করার করে ফেলেছে, -- "আজব ছেলে"টিকে ইতোমধ্যে অন্তত দু' বার "মালাউন" গালি দিয়ে ফেলেছে !!

আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা যে ইরেশ যাকের যে পরিবারের সদস্য, সেই পরিবারের একজন হয়ে এমন একটি শব্দ ব্যাবহার করতে সে পারে !! হয়ত নাট্যরুপদানকারী "মানবিক" সাহেব এই গালিটা রেখেছে স্কৃপ্টে। কিন্ত রাখলেই ব্যাবহার করতে হবে কেন ? ইরেশ যাকের নাটকে এই গালিটি ব্যাবহারে কি কোন প্রতিবাদ করেছিল ? তার কাছে তো এমনটি প্রত্যাশিত ছিল। তার নিশ্চয়ই জানা আছে, আজকাল "নিগ্রো" শব্দটি কোথাও ব্যাবহার করা হয় না। তার জায়গায় এখন ব্যাবহার করা হয়, "আফ্রিকান- আমেরিকান"।

মুক্তিযুদ্ধের উপর এই গল্পটি আমাকে খুব নাডা দিয়েছিল; কিন্ত "মালাউন" শব্দটির অপ্রয়োজনীয় ব্যাবহার আমাকে বিচলিতও করেছে। বিশেষ করে যখন দেখি, এই শব্দটি ব্যাবহার করেছে আলী যাকের- সারা যাকেরদের ছেলে, যার অভিনয় করার একটা আগ্রহ লক্ষনীয়।

এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার দীর্ঘদিনের একটি সুপ্ত ধারনা আরও শক্ত হল, দৃশ্যত তিনি যতই অসাম্প্রদায়িক হউন না কেন, চামডার একটু ভিতরে গেলে আসল চরিত্র ও চেহারাটা ঠিকই বেরিয়ে আসে।

জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈষম্য নিরসনে আমাদের সংস্কৃতি জগতের দিকপাল, --যাদের মধ্যে আলী যাকেরও একজন--তাদের দৃস্টি আকর্ষন করছি। শুরুতে উল্লেখিত আজ সকালে বিবিসি'র খবরটির প্রতিও তাদের দৃস্টি আবার আকর্ষন করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়