মহিউদ্দিন আহমেদ : ১১ জানুয়ারি ২০০৭ বংগভবনে মঞ্চস্থ নাটকের প্রায় সব কুশীলব ও সাক্ষীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, দুজন ছাড়া। একজন বলেছিলেন সাক্ষাৎকার দেবেন না। আরেকজন দিচ্ছি-দেব করে পরে আর দেননি।
আমি সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সংগে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। শুনলাম তিনি নিউইয়র্কে থাকেন। টিকিট কাটলাম ঢাকা- নিউইয়র্ক - ওয়াশিংটন - ডালাস- ঢাকা৷ দেখা করলাম মইনের বড় ভাইয়ের সংগে। তিনি একসময় মুহসীন হলে থাকতেন। আমার সিনিয়র। আমাকে চিনতে পারলেন। মইন কয়েকমাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আমার ডিপার্টমেন্টেই। আমার তিন ব্যাচ জুনিয়র। বড় ভাইয়ের কাছে জানলাম মইন থাকেন ফ্লোরিডায়। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মাঝে মাঝে নিউইয়র্কে যান। আমার ট্রাভেল প্ল্যান বদল করলাম। ঢাকা- ডালাস- ওয়েস্ট পাম বীচ -ওয়াশিংটন- নিউইয়র্ক -ঢাকা।
ডালাসে ব্রিগেডিয়ার বারীর সংগে কাজ শেষ করে ফোন দিলাম মইনকে। যাওয়ার তারিখ, কতদিন থাকব, হোটেলের নাম-ঠিকানা দিলাম। তারপর উড়াল দিলাম।
মইন বলেছিলেন, পৌঁছে যেন ফোন দিই। দুঘন্টার ফ্লাইট। নেমে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করছি। মইনকে ফোন দিলাম। বললেন, আসছি। বেরিয়ে এসে অপেক্ষা করছি। তিন-চার মিনিটের মধ্যেই মইন এসে হাজির। গলায় নেকগার্ড। বললেন, কিছুদিন আগে একটা সার্জারি হয়েছে।
একটা সাদা মারসিডিজ চালিয়ে আমাকে নিয়ে এলেন পাম বীচ হোটেলে। ঢাকা থেকেই রুম বুক করা ছিল। রিসেপশন থেকে চাবি নিলাম। রুমটা অনেক দূরে। গাড়ি করেই ড্রাইভওয়ে দিয়ে রুমের সামনে গেলাম। মইন এক ক্রেট মিনারেল ওয়াটার এনেছিলেন। বললেন, এখানে তো পানি কিনতে হবে। এগুলো রাখুন।
রুমে ঢুকলাম। তারপর টানা চারঘন্টা আলাপ।
পরদিন এলেন দুপুরে। হাতে ব্যাগ। বললেন, আমার মেয়ে আপনার জন্য রান্না করেছে। প্রচুর খাবার। দুজন একসংগে খেলাম। অনেক খাবার থেকে গেছে। বললেন, ফ্রিজে রেখে দিন। পরে ওভেনে গরম করে খাবেন। সে খাবার আরো তিনবেলা খেয়েছি। সেদিনও আলাপ হলো চার ঘন্টা।
এরপর দুদিন আসেননি। তারপর এলেন সকালে। আবারও দুঘন্টা কথা হলো। তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন একটা ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয়। খেতে খেতে আড্ডা আর কথা। বললেন, কাল আপনার ফ্লাইট। আমি আসতে পারব না হয়তো। তবু চেষ্টা করব। বললাম, দরকার নেই। এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য হোটেলের শাটল সার্ভিস আছে।
আমার পাঁচ দিনের সাক্ষাৎকার মিশন ছিল পুরোপুরি সফল। অনেক কথাই মইন বলেননি। আমিও চাপাচাপি করিনি। যেটুকু বলেছেন, তাতেই আমি খুশি। আমার বইয়ে সবটা দিইনি। আমিই প্রথম এবং শেষ, যাকে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যদিও তার নাম জড়িয়ে কেউ কেউ ভুয়া সাক্ষাৎকার ছেপেছে।
মনে হলো জেনারেলরা রাজনীতিবিদদের চেয়ে অনেক বেশি খোলামেলা।
(ছবিটা দ্বিতীয় দিন আমার হোটেল রুমে তুলেছিলাম, ২৬ অক্টোবর ২০১৭)
ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :