ডেস্ক রিপোর্ট : [২] করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর অসহায়, দরিদ্র, দিনমজুর মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে যায়। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ করে যারা বিগত নির্বাচনগুলোতে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন এবং আগামীতে প্রার্থী হতে চান তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল নিজ নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া বেশিরভাগ প্রার্থী মাঠে না নামলেও তরুণ বিএনপি নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণ তৎপরতা। অনেক নেতাই নিজের পরিবারের গহনা, মোটরসাইকেল, জমি বিক্রি করে অসহায় মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী, ঈদের সময় উপহার সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, মহামারীকালে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ৫৫ দিনে দেশের অর্ধকোটিরও বেশি পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা করেছে। ২ কোটির বেশি মানুষ এই সহযোগিতা পেয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের সারাদেশেই ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা দেয়া হয়। জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত ২০ মে পর্যন্ত ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০ টি পরিবারের মাঝে বিএনপি নেতাকর্মীরা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। এতে সর্বমোট ২ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ জন মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ঈদের আগে গরিব মানুষের বাসা-বাড়িতে ঈদ উপহার ও নগদ অর্থও তুলে দেয়া হয়েছে।

[৩] যদিও বিগত সময়ে ক্ষমতার ভাগিদার বা সুবিধাভোগী নয় এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি বড় অংশ এই দুর্যোগে সাধরণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তরুণ নেতারা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কেউবা ফান্ড গঠন করে সহায়তা দিচ্ছেন। এরমধ্যে রংপুর বিভাগে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭১, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৬০, খুলনায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার ১০২, ঢাকা ১৯ লাখ ৫০ হাজার ১০, ময়মনসিংহে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১, ফরিদপুরে ৭১ হাজার ৯৩৫, বরিশালে ৬৮ হাজার ২৩৫, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার ১৬৯, কুমিল্লা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৮, চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৭৯৩ পরিবারের হাতে বিএনপি খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছে। এছাড়া যুবদল সারাদেশে ২ লাখ ৩০ হাজার ৭০২ পরিবারে, স্বেচ্ছাসেবক দল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩০, ছাত্রদল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬২, কৃষকদল ১৯ হাজার ১৬৫, মহিলা দল ১৫ হাজার ৫৩০, শ্রমিক দল ৫ হাজার ৭৭৫, জাসাস ১২ হাজার ৩৭৫, তাঁতী দল ১০ হাজার ৩০০, মৎস্যজীবী দল ১৫ হাজার ৮৮৭, ওলামা দল ৫ হাজার ৬০ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। এরবাইরে ছাত্রদল ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৩০ মাস্ক, ২ লাখ ৭০ হাজার ৩২৫ সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে।

[৪] বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশজুড়ে শোকার্ত মানুষের আহাজারী অন্যদিকে করোনার ত্রাণ চুরির মহৌৎসব। আমরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেবক্ষণ সেলের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী, ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ পৌঁছে দিয়েছি।

[৫] জানা গেছে, করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই ত্রাণ বিতরণ সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে। লিফলেট, মাস্ক-স্যানিটাইজার কিংবা ত্রাণসামাগ্রী সবই বিতরণ করছেন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে। রাজধানীতে এবার ত্রাণ বিতরণে নজর কেড়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়, বস্তিবাসী, দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। বাবার নামে গঠিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও অর্থ সহায়তা নিয়ে দিন-রাত ছুটছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। এছাড়াও রাজধানীতে নিয়মিতই ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল হক, কাজী আবুল বাশার।

[৬] দীর্ঘ ১১ বছর ধরে দেশের বাইরে থেকেই কুমিল্লার মুরাদ নগরে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে প্রায় ৩০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী এবং ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছেন সাবেক এমপি ও মন্ত্রী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে তার নির্দেশনায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও হিতাকাক্সক্ষীরা অসহায় মানুষের খাদ্যসামগ্রী এবং ঈদের সময় উপহার সামগ্রী তুলে দেন। একইভাবে নেত্রকোণা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা: আনোয়ারুল হক প্রায় ১০ হাজার মানুষের মাঝে, সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ ইমরান, মুন্সিগঞ্জে মীর সরাফত আলী সপু, আব্দুস সালাম আজাদ, ফেনী-৩ আসনে নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি প্রায় ২ হাজার মানুষকে, একই জেলায় যুবদল নেতা রফিকুল আলম মজনু, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ৬ হাজার পরিবারে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী, কাঁচা সবজী পাঠিয়েছেন।

[৭] ময়মনসিংহে সাংগঠনিক সম্পাদ এমরান সালে প্রিন্স, নান্দাইল উপজেলা ও ৯ আসনে বিগত সময়ের ক্ষমতাভোগী নেতারা যখন এই দুঃসময়ে নিরব, নিশ্চুপ তখন মালয়েশিয়া বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মামুন বিন আব্দুল মান্নান ৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার তুলে দিয়েছেন। গফরগাঁওয়ে আখতারুজ্জামান বাচ্চু। লক্ষীপুর সদর আসনে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ১২ হাজার পরিবারে, লক্ষীপুরের রামগতি-কমলনগরে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের অসহায়, দরিদ্র পাঁচ শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন।

[৮] স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ৯ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছেন। ৫ হাজার মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ প্রদান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা উপকরণ প্রদান করেছেন তিনি। এভাবে অসংখ্য বিএনপির নেতাকর্মী করোনায় অসহায় মানুষকে সহায়তা দিচ্ছেন। সদর উপজেলায় সাবেক ছাত্র নেতা কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাবেক ছাত্র নেতা রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, আড়াইহাজারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন, নাটোরে সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ফরিদপুরে সদর উপজেলায় যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু, গাইবান্ধায় নির্বাহী কমিটির প্রফেসর আমিনুল ইসলামসহ সারাদেশের অসংখ্য নেতা মানুষের পাশে দাঁড়ান। ইনকিলাব, প্রিয়ডটকম