মুসবা তিন্নি : [২] স্বাধীনতার পূর্বে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী টমটম কিংবা ঘোড়ার গাড়ি ছিল মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা। কালের বিবর্তনে গণমানুষের বাহন হিসেবে টমটম বিলুপ্ত-প্রায়। নগরীতে হাতে গোনা কয়েকটি টমটম চলে, তবে সচারচর চোখে পড়ে না। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা উৎসব-আয়োজনে শখের বসে টমটমে আরোহণ করে। এছাড়াও বর্তমানে বিয়ে বাড়ির উৎসবেও ঘোড়া গাড়িকে বর-কনের সৌখিন বাহন হিসেবেও দেখা যায়।
[৩] এই ঐতিহ্যকে ঘিরে রাজশাহীর বাইপাস সড়কের মুখে রাজশাহী সিটি করপোরেশন একটি টমটমের ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। এবং মোড়ের নামকরণ হয়েছে ‘টমটম চত্বর’ কথ্যরূপে ‘ঘোড়া চত্বর’।
[৪] রাজশাহী শহরের সার্কিট হাউসের রাস্তায় একজন টমটম চালক নাম 'জুলমত' তার গাড়িসহ দেখা যায়। শনিবার আলাপকালে তিনি জানান, বর্তমানে রাজশাহীতে মাত্র ৪টি টমটম গাড়ির অস্তিত্ব আছে।
চালক জুলমতের বয়স আনুমানিক (৫৫) তার বাড়ি রাজশাহী কোর্টের আন্দারকোটা এলাকায়। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে তিনি টমটম চালান। তার বাবাও একজন টমটম চালক ছিলেন । প্রথম দিকে শখের বসে টমটম চালাতেন তিনি। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর সেই শখকে পেশায় পরিণত করেন জুলমত। অভাবের সংসারে পড়াশোনা করতে পারেন নি। কিন্তু ৩ ছেলেমেয়ের প্রত্যেককেই তিনি পড়ালেখা করিয়েছেন টমটম চালিয়েই।
[৫] জুলমত আরো জানান, আগে প্রতিদিন সকালে ৮টার দিকে গাড়ি নিয়ে বের হতেন, বাড়ি ফিরতেন সন্ধ্যা ৬/৭ টার দিকে। সাধারণত শিমলা পার্ক, পদ্মার পাড়, পুলিশ লাইন এসব জায়গাতেই এর আশেপাশেই তিনি যাত্রীর জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতেন । এই গাড়ির বদৌলতে স্বচ্ছলভাবে সবই করেছেন, তাই পেশা বদলের কথা ভাবেননি তিনি। তবে বর্তমানে করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের কারনে যাত্রী পাওয়া একেবারেই দুস্কর হয়ে পড়েছে। বিনোদনের জন্য, পূর্বে অনেকেই একঘন্টার জন্য টমটম বুক করে নিতো। ঘন্টা প্রতি তখন ৭০০/৮০০ এমনকি একহাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো। এছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে এই গাড়ি ভাড়া করলে বেশ মোটা অংকের একটা টাকায় আয় হতো তার।
[৬] তবে লকডাউনের ফলে বর্তমানে নেই কোনো বিনোদন প্রেমীযাত্রী কিংবা বিয়ে বাড়িতে এ গাড়ি ভাড়া জন্যও কেউ আসে না। লকডাউন রাজশাহী শহরে তিনিসহ বাকি ৩ টমটম চালকের অবস্থাও প্রায় করুন বলেই তিনি জানান। তিনি এ-ও বলেন এভাবে লকডাউন চলতে থাকলে এবং পরিস্থিতি ভালো না হলে টমটম চালানো বন্ধ করতে হতে পারে এবং বাকি জীবন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতে পারে। সম্পাদনা : খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :