আরিফ জেবতিক : ১৩৩ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় পাতায় পাতায় করোনার দোহাই দিলেও, করোনা পরবর্তী বিশ্ববাস্তবতা এই বাজেটে তেমনভাবে প্রতিফলিত হয় নি। করোনাত্তোর দুনিয়া কোথায় যাবে, সেটি নিয়ে কোটেশন দেয়া আর সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যে যে তফাৎ সেটি বাজেটে স্পষ্ট। যাইহোক, বাজেট পড়ার সময় একটু সাইড নোট নিচ্ছিলাম। তাৎক্ষণিক স্বাগত সংলাপের মতো বিষয়গুলো। ওভাবেই টুকে রাখলাম, গুছিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে না এখন। ভালো পদক্ষেপ : [১] করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা। [২] সর্বনি¤œ করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনার প্রস্তাবটি স্মার্ট।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ২ হাজার টাকা কর রেয়াত দেয়ার প্রস্তাবটিও চমৎকার। [৩] এমএস স্ক্র্যাপ সংগ্রহের উপর উৎসে আয়করের হার কমানোটা ভালো পদক্ষেপ। [৪] রিটার্ন দাখিল সবার জন্য বাধ্যতামূলক করাটা ভালো উদ্যোগ। তবে এক্ষেত্রে একপৃষ্ঠার রিটার্ণ দাখিল ফরমটা একমাত্র সমাধান নয়। অনলাইনে এক পৃষ্ঠার বাংলা অনলাইন ফরম চালু করা যেতে পারে যেটি প্রয়োজনে এপসের মাধ্যমেও সাবমিট করা যাবে। সিম্পল ডাটা ঢুকিয়ে স্বয়ংক্রিয় ক্যালকুলেটরে অটো হিসাব চলে আসবে এবং মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে কর দেয়া যাবে-এটি চালু করলে এই উদ্যোগ কাজে আসবে।
[৫] বাদবাকি যেসব পদক্ষেপ কর সংক্রান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলোও মোটের উপর ভালো উদ্যোগ। [৬] শিল্পলবনে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবটি জরুরি ছিল। ধন্যবাদ। মন্দ :
[১] আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের উপর ৫০ শতাংশ করারোপ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। অনেক সৎ ব্যবসায়ীকে এই ফাঁদে ফেলার সম্ভাবনা প্রচুর। আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং শাস্তিমূলক অপরাধ হওয়া উচিত, করারোপ এর কোনো ভালো সমাধান নয়। [২] আলু ও ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত দ্রব্যে মুসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ না করে, এটি ২ শতাংশে নামিয়ে আনলে ভালো হতো। [৩] প্লাস্টিক শিল্পের Photographic plates of plastic-এর উপর শুল্ক কমালেন কেন ভাই? দেশকে কি প্লাস্টিকের গোডাউন বানাতে দেরি হয়ে যাচ্ছে? [৪] ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’-এর প্রস্তাবটি ভালো।
তবে ওখানে মাত্র ১শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যেটি চা-বিস্কুট খেয়েই শেষ হয়ে যাবে। এটি বাজ ওয়ার্ড হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হবে, কিন্তু ১শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে এই খাতে ভালো কিছু আশা করে লাভ নেই। এটিকে বড় একটি প্রকল্প হিসেবে নিয়ে বড় বাজেট দেয়ার দরকার। হতাশ : প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ প্রায় বাড়েইনি। মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি কোনো কাজের কথা না। প্রাইমারি স্কুলে ল্যাপটপ দেয়ার নাম করে এই যৎসামান্য বৃদ্ধির টাকা শেষ করে ফেলবে, কোনো ভালো ইমপ্যাক্ট পাওয়া যাবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ১১.৭৯ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু যেভাবে অবকাঠামো বৃদ্ধির ইঙিত দিলেন, তাতে বুঝা যাচ্ছে যে গবেষণা ও মানোন্নয়নে আগের লাউয়ের সাথে এই বৃদ্ধির কদুতে কোনো তফাৎ আসার সম্ভাবনা কম।
মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আলাদা ভাবে খুলতে হবে কেন এই একবিংশ শতাব্দীতে? পলিটেকনিক একটি স্কিল। এই স্কিল যারা অর্জন করবে তারা কর্মক্ষেত্রে একসাথে কাজ করবে। মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়। ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা’ বিষয়টা আসলে কী? মাদ্রাসায় কারিগরি শিক্ষা দেয়া নাকি দুটোর মিশেল দেখিয়ে ফাকিবাজি? এখানে ১২ শতাংশ বরাদ্দ ভালো বিষয়, কিন্তু কারিগরি আর মাদ্রাসা শিক্ষা-জিনিসটা গোলমেলে। কতোটুকু মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যয় হবে আর কতোটুকু কারিগরি অংশে, সেটা আলাদা বরাদ্দের তালিকা দিলে বুঝতে পারতাম। (আরো অনেক কিছু নোট নিয়েছি। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে আলাদা বিস্তারিত লিখবো নে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :