সাঈদ তারেক : চুরির টাকা, ঘুষের টাকা, লুটের টাকা, বাটপারির টাকা তথা যাবতীয় অবৈধ উপার্জনের একটা অফিশিয়াল নাম আছে- কালো টাকা। অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এর একটা নান্দনিক নাম দিয়েছেন- অপ্রদর্শিত আয়। আম পাবলিক সরল বাংলায় বলে ‘হারাম কামাই’। ‘অপ্রদর্শিত আয়’ মোটামুটি ভদ্রজনোচিত শোনায়। কালো টাকা বললে, একটা হারামখোর হারামখোর ভাব এসে যায়, ‘অপ্রদর্শিত আয়ে’র সাথে একধরনের সফিসটিকেশনের সুবাস আছে।
মানে আয় হয়েছে, তবে তা সরকারকে দেখানো হয়নি। ও এমন কিছু না। দেশে এই অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণ কত কারও জানা নেই। কেউ অনুমানও করতে পারেন না। এখন বাজেটে বলা হয়েছে কেউ যদি স্বীকার করে তার কাছে হারামের টাকা বা কালো টাকা বা নান্দনিক ভাষায় অপ্রদর্শিত আয়লব্ধ টাকা আছে তাহলে তার কাঁধে কোনো বালা-মুসিবত চাপবে না, মাত্র দশ পার্সেন্ট ট্যাক্স দিলেই পুরো টাকা সাদা বা বৈধ বা প্রদর্শিত আয় হয়ে যাবে।
এরপর এ টাকা যে কোন কাজে ব্যবহার বা বিনিয়োগ করা যাবে। আইনে বলে চুরির টাকা খুঁজে বের করে সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে, চোরগুলোকে ধরে সাজা দিতে হবে। আমাদের সে সাহস নাই বা সক্ষমতা নাই, তাই তাদের প্রতি এই অফার। বাহ্ কী চমৎকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আইন আদালত প্রশাসন তথা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে আজ আমরা এমন জায়গায় নিয়ে গেছি চোরও ধরতে পারি না, তাদেরকে প্যাকেজ অফার করতে হয়।
যাহোক এই কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় সাদা হয়ে যাবে এই আশায় একটি উচ্চাভিলাষি স্মরণকালের বৃহৎ ঘাটতি বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। ভালো কথা। কিন্তু কালো টাকা যা বাইরে চলে গেছে ওগুলো তো ধরাছোঁয়ার বাইরে, দেশের ভেতরে যা আছে তা কি অলস পড়ে আছে? কোথাও না কোথাও তো বিনিয়োগ হয়েই আছে। আর বিনিয়োগ হওয়া মানেই তো হোয়াইট। সরকার কিভাবে প্রমাণ করবে কোনটা ব্ল্যাক আর কোনটা হোয়াইট। যারা বিনিয়োগ করে রেখেছে তারা কী সব ঘাট ম্যানেজ না করেই তা করতে পেরেছে।
এখন কথা হচ্ছে- তারা কোন দুঃখে সরকারকে দশ পার্সেন্ট করে ট্যাক্স দিতে যাবে। সমস্ত হারাম কামাই যদি মাটির নীচে থাকতো সিন্দুকে থাকতো খাটের তলে থাকতো তাহলে নাহয় কথা ছিল, বের করে বলতো এই যে এখান থেকে দশ টাকা করে নিয়ে যাও বাকি নব্বই টাকা এখন হালাল। হারাম কামাই পাচার হওয়ার পরেও দেশে যা আছে- নানা জায়গায় বিনিয়োগে, নামে বেনামে ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রে শেয়ারবাজারে।
জায়গাজমি গাড়িতে বাড়িতে ব্যবসায়। সিন্দুকে খাটের তলায় যৎসামান্য থাকলে থাকতে পারে। তারপরও এমন কোনো বেকুব আছে আগ বাড়িয়ে গিয়ে বলবে এইযে আমার কাছে এতগুলো হারাম কামাইয়ের টাকা আছে, দশ পার্সেন্ট নিয়ে হোয়াইট মানির সার্টিফিকেট দেন। প্রতি বাজেটেই ‘হারামখোর’দের জন্য এমন অফার দেওয়া হয়ে থাকে, তবে এবারের অফারটা একেবারে কাছাখোলা। দেখা যাক ধর্মের কাহিনি শুনে কয় চোরায় এগিয়ে আসে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :