প্রতিদিন কোভিডে ডাক্তার মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। কেউ পরিচিত, কেউ অপরিচিত। প্রতিটি মৃত্যুতেই হতাশাগ্রস্ত হই। এরমধ্যে গতকাল ৩টি খবরে আমি খুবই আশাবাদী হয়ে উঠেছি। প্রথমটি হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশে ২৪টি হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে মৌখিক আদেশ পেয়ে গেছে। দুএকদিনের মধ্যে লিখিত আদেশ পেয়ে যাবে। ঠিকঠাক মতো এগুলে জুনের ভেতর কাজ সম্পন্ন হবে। আমি অভিভূত। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
আমরা সবাই জানি তিনি রাতদিন খাটছেন, পরিশ্রম করছেন, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সরকারিভাবে এক মাসের ভেতর একাজ সম্পন্ন করা সম্ভব সেটা আমার প্রত্যাশার মধ্যে ছিল না। ভেন্টিলেটর বা হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা ব্যবহারে এই অক্সিজেন প্লান্ট অত্যাবশ্যক। তবে বিকল্পভাবে লিকুইড অক্সিজেন ছাড়াও অনেকগুলো বড় বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ম্যানিফোল্ড তৈরী করে ভেন্টিলেটর বা হাইফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়া সম্ভব। প্রচলিত ছোট সিলিন্ডার দিয়ে এটি সম্ভব নয়।
সরকারি এ উদ্যোগের পাশাপাশি বিত্তবানরা তাদের নিজ এলাকার হাসপাতালগুলোতে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনে এগিয়ে আসতে পারে। বিত্তবানদের জন্য সহযোগিতার আরেকটি ক্ষেত্র রয়েছে। ইদানিং যে হাইফ্লো নেজাল অক্সিজেন এর কথা শুনছেন- সেটি একটি ছোট মেশিন, সাথে নাকের ভেতর ঢুকানোর জন্য একটি নল। এটির দাম কম বেশি ৫ লক্ষ টাকা। দেশে বড় বড় হাসপাতালে বিদ্যমান কিছু কিছু ভেন্টিলেটরের সাথে হাইফ্লো নেজাল অক্সিজেন দেয়ার সুযোগ রয়েছে, আলাদা মেশিনের প্রয়োজন নাই। সেক্ষেত্রে সেখানে নেজাল ক্যানুলা বা অন্য একসেসোরিজ প্রয়োজন।বিত্তবানরা নিজ এলাকার হাসপাতালে এগুলো দান করলে আপদে আপনার বা আপনার কোনো আত্মীয় স্বজনের জীবন বাঁচতে পারে।
দেশবাসীর শেষ আস্থার প্রতীক জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব জেলায় আই সি ইউ চালু হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। অক্সিজেন প্লান্ট এর কাজ হচ্ছে।শংকায় ছিলাম- কারা চালাবে এগুলো ? আই সি ইউ চালানোর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কই, নার্স কই ? গতকাল দেখলাম কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। নিয়োগ হবে এনেস্থেটিস্ট এবং ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। আমি আশাবাদী হবার দ্বিতীয় কারণ এটি ।
তিন নম্বর কারণটি হচ্ছে, কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য আলাদা হাসপাতালের সুপারিশ করেছে। যদিও এটি সুপারিশ, তবুও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশটি গ্রহণ করে কোভিডযুদ্ধের সামনের সারির যোদ্ধাদের মনোবল ফিরিয়ে আনবেন। প্রতিদিন দুয়েকজন ডাক্তারের মৃত্যুতে তারা মনোবল হারাচ্ছে।
বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান শতকরা ২১ ভাগ। এর বেশি পরিমান অক্সিজেনের দরকার হলে মানুষ স্বাসকষ্টে ভোগে। তখন দরকার হয় অতিরিক্ত অক্সিজেনের।এটি কোবিড-১৯ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। কোভিড-১৯ ভাবতেই চোখের সামনে ভাসে কিছু শব্দ- সিলিন্ডার, ফ্লোমিটার, অক্সিজেন, ফেসমাস্ক, নেজাল ক্যানুলা, হাইফ্লো নেজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, ম্যানিফোল্ড, লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট। এগুলো ছাড়াই কোবিড নিয়ন্ত্রণে আমরা কিভাবে প্রস্তুত হলাম সেটা মনে পড়তেই আমি আবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাই। লেখকঃ চিকিৎসক, কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :