সুতপা ভট্টাচার্য : মৃত্যুর ভয়াবহতা তো আসলে সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না। এই মুহূর্তে আমরা সংখ্যা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছি অবস্থা কতটা খারাপ। এবং খুব ভয়ের কথা হচ্ছে রোজ যে কিছু সংখ্যা আসবেই সেটা মেনে নিচ্ছি। মৃত্যুকে সহজভাবে নেয়ার চেয়ে ভয়ানক আর কী হতে পারে। পরিচিত মানুষের আতœীয়স্বজন মারা যাবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, কাল আমার এক ব্যাচমেট মারা গেছে। তার আগের দিন এক পরিচিত নানার আর শাশুড়ি মারা গেছেন। এমন ভাবে আমরা জানছি এগুলো যেন মিছিলে একটা মুখ শুধু। কতো বাচ্চা বাবা বা মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেললো, কতো পরিবার শূন্য হয়ে গেলো সেটা আমরা অনুভব করছি কি আদৌ? শুধু তো অর্থনৈতিক নয়, কতো বড় মানবিক বিপর্যয় একটা মৃত্যুতে ঘটে।
শুরুতে বয়স্করাই বিপদে আছেন শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে ছিলাম, তাই না? আমরা কি জানি কতো পরিবারে বয়স্ক মানুষটার পেনশনের টাকায় তার নাতনি স্কুলে যায়? যে ডিভোর্সি মেয়েটা শুধু মায়ের কাছে আশ্রয় পেয়েছিল সে কোথায় যাবে এরপর? কতো স্বার্থপর হলে আমরা ভেবেছিলাম বৃদ্ধরা মারা গেলে আমাদের তা কিছু না। তো তার ফল এসেছে বহু আগেই, যেকোনো বয়সের মানুষ মারা যাচ্ছে। রোজ।
যাদের চাকরি বাঁচানোর জন্য ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে, তাদের চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই। আর ডাক্তারদের কথা তো বলে লাভ নেই, সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে তারা। আমি জানি না এই পরিবারগুলোর মনের অবস্থা কী। যাদের বাসায় থাকলেও দুটো ভাত জুটবে, তাদের মাঝেও অনেকে বের হচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে গল্পগুজব করছে।
জানি না কেনো, এদেশের মানুষের মতন আশ্চর্য প্রাণিকে বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। এরা বের হয়ে যারা দরকারে বাধ্য হয়ে বের হচ্ছে তাদের আরও বিপন্ন করে দিচ্ছে, আরো ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। জানি না এদের কারা আটকাতে পারে। ছোট বাচ্চারা তিনমাস ধরে ঘরে বন্দী, আর দামড়াদের ঘরে নাকি মন টেকে না, আর কতো থাকা যায় ঘরে, এই হলো তাদের যুক্তি। জানি না এই দুঃসময় কাটবে কবে, আদৌ কাটবে কিনা। কতো কিছু চাওয়া ছিল জীবনে, এখন শুধু জীবন ভিক্ষা চাই পরম করুণাময়ের কাছে। সবাই বেঁচে থাকুক, রোগ হলে হোক, কষ্ট পেলে পাক, তাও যেন বেঁচে থাকে সবাই। এই ভয়াবহ নিরুপায়তা কেমন যেন আর নেওয়া যাচ্ছে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :