শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২০, ০৫:২৩ সকাল
আপডেট : ১১ জুন, ২০২০, ০৫:২৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানবতার ফেরীওয়ালাদের ইতিহাসঃ ১৪ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ স্টিন্নিকে ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড

ডেস্ক রিপোর্ট : [১৪ বছরের জর্জ স্টিন্নি জুনিয়র, আমেরিকার সবচেয়ে কনিষ্টতম মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী। মৃত্যুদন্ডের সময় ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। ... ১৯৪৪ সালের ২৩শে মার্চ ১১ বছরের বেট্টি এবং ৭ বছরের মেরি নামের দুটি শ্বেতাঙ্গ মেয়ে নিঁখোজ হয়। পরেরদিন অর্থাৎ ২৪শে মার্চ জর্জ স্টিন্নির বাড়ির পাশ থেকে ছোট্ট মেয়ে দুটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। হাতুড়ি জাতীয় ভারী কিছুর দ্বারা মেয়ে দুটির মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়েছিলো। এই হত্যাকান্ডের খুনী সন্দেহে পুলিশ জর্জ কে গ্রেপ্তার করে। প্রেপ্তারের কারণ ছিলো বেট্টি ও মেরি ২৩ তারিখ বিকেলবেলা সাইকেল চালিয়ে জর্জের বাড়ির পাশ দিয়ে ফুল কুড়োতে যাওয়ার সময় জর্জকে 'ম্যাপল' এর রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো। এই কথোপকথনের কারণেই পুলিশ সন্দেহ করে জর্জ স্টিন্নিই তাদের হত্যা করেছে।
পুলিশ হেফাজতে জর্জ মোট ৮১ দিন ছিল। এই ৮১ দিনের ৮০ দিন সে তার মা, বাবার সাথে দেখা করতে পারেনি। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক দুজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করেছে, একী কম বড় ব্যাপার ? জর্জের মা-বাবাও সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ে ছেলের সাথে শেষের ৮০দিন আর দেখা করতে পারেননি।

১৯৪৪র ১৪ই জুন জর্জের বিচার শুরু হয়। মাত্র দুঘন্টার সেই বিচারসভায় সমস্ত শ্বেতাঙ্গ বিচারকদের নিয়ে তৈরি জুরি বোর্ড জর্জকে কোনরকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি, জর্জের পক্ষে কোন আইনজীবি, তার মা বাবা কেউ সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি। এই বিচারপর্বে জর্জ স্টিন্নি কেবল একটি বাইবেল হাতে বার বার বলেছে সে নির্দোষ। জুরি বোর্ডের সদস্যরা তার কোন কথায় কর্ণপাত না করে তাকে বেট্টি ও মেরির হত্যাকান্ডে দোষী সাব্যস্ত করে ইলেকট্রিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।

আদালতের এই রায়ের পর জর্জের পরিবার, তার মা বাবা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের জন্য তৈরি সংগঠন ছেলেটির বয়স মাথায় রেখে সেখানকার গভর্নরের কাছে মৃত্যুদন্ড রদের আবেদন করলে গভর্নর জনস্টন জানান
"আপনারা ওর প্রাণভিক্ষা করছেন? আপনারা জানেন না ও কী বিভৎস অন্যায় করেছে। বড়ো মেয়েটি ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ও ছোট মেয়েটির হত্যা করে, কিন্তু বড় মেয়েটি সুযোগ না দেওয়ায় তাকেও হত্যা করে। এরপর মৃতদেহের সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রথমবার মৃত দেহটিকে ধর্ষণের ২০ মিনিট পর পুনরায় ফিরে এসে ও আবার ধর্ষণের চেষ্টা করতে যায় কিন্তু মেয়েটির দেহ খুব ঠান্ডা হওয়ায় আর ধর্ষণ করতে পারেনি। এই জঘন্য অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না"

১৬ই জুন সন্ধ্যে ৭টা ২৫ এ জর্জকে জেল থেকে বের করে তার বাবার সাথে দেখা করানো হয়। তারপর জর্জকে ইলেকট্রিক চেয়ার বসানো হয়। ৫ ফুট ১ ইঞ্চির ছোট্ট অসহায় মানুষটার হাত বাঁধা হয় চেয়ারের সাথে, ইলেকট্রিক হেলমেট মাথায় পড়াতেই জর্জ কান্নায় ভেঙে পড়ে আবার বলে 'আমি নির্দোষ'। এরপর জর্জের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে ৭.৩০ এ ৫৩৪০ ভোল্টের ইলেকট্রক চার্জ করা হয় দুর্ভাগা কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরটি উপর। ৮ মিনিট পর জর্জকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তখন তার দাঁত গুলো ধোঁয়া হয়ে গেছে, চোখের কোন চিহ্ন নেই, গোটা শরীরটাই প্রায় ছাই সমান।

এই ঘটনার ঠিক ৬০ বছর পর ২০০৪ সালে পুরো কেস স্টাডি করে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল ওফ ল এর একদল আইনজীবি এই কেস পুনরায় রি-ওপেন করেন। ২০০৪-২০১৪ দীর্ঘ দশ বছর কেস চলার পর ২০১৪ সালে বিচারকদের জুরি বোর্ড ঘোষণা করেন জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের উল্লেখযোগ্য কোন প্রমাণ নেই। ঠিক যেমন তার ধর্ষণ করার সপক্ষেও পুলিশের কাছে কোন প্রমাণ নেই।

মারা যাওয়ার ৭০ বছর পর জর্জ স্টিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আর একবার প্রমাণ করে দিয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতেই কাঁদে চিরদিন।
(সংগ্রহিত)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়